ভারত এবং এই কলকাতায় এখন টেলিভিশনের টক শো মানেই চিৎকারের ক্যাকোফোনি। রাজনীতির চর্বিত চর্বন ঝগড়া আর সম্মিলিত চিৎকার। একে অপরকে দাবিযে দেয়ার চেষ্টা। একঘণ্টার একটি শব্দকল্পদ্রুম। কোথায় গেল সেই বুদ্ধিদীপ্ত আলোচনা, যুক্তির শাণিত কুঠারে বিপক্ষের বক্তব্যকে ছিন্নভিন্ন করার সোনালি মুহূর্ত? এখন সবটাই যেন সোপ অপেরা। একই লোক, একই বক্তব্য। যেন নতুন বোতলে পুরোনো মদ। একঘণ্টার প্রবল ঝগড়ার শেষে কোথাও পৌঁছানো যায়না। দর্শকরা টকশো'র অঙ্গভঙ্গি দেখে আমোদ পান। ভাবনার কোনও খোরাক পাননা।
ভারতে টেলিভিশনের টক শো'র প্রথম প্রবর্তক ভারতীয় দূরদর্শন। দিল্লির জাতীয় সম্প্রচারের পাশাপাশি বাংলা দূরদর্শনে অনেক সারগর্ভ টক্ শো হত। কিন্তু যেহেতু আম্লাতান্ত্রিকতার বন্ধনে বাঁধা থাকতো এই অনুষ্ঠানগুলো তাই, কোনোসময়েই সেই প্রত্যাশিত উত্তরণে পৌঁছাতে পারেনি অনুষ্ঠানগুলো। তবু, প্রণয় রায়, বিনোদ দুয়া, পঙ্কজ সাহারা এই নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থেকেও কিছু ভাবনার খোরাক দিয়েছিলেন। নয়ের দশকের গোড়ায় প্রাইভেট নিউজ চ্যানেলের দরজা উন্মুক্ত হওয়ার পর পরিস্থিতি বদলালো। নতুন ধরণের টক্ শো প্রবর্তিত হল। প্রতিদিন ইস্যু ভিত্তিক বিতর্ক শুরু হল। প্রাথমিক ভাবে বিতর্কগুলো রেটিং পয়েন্ট অর্জন করতো। কিন্তু, ক্রমশঃ চ্যানেলে চ্যানেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, বিজ্ঞাপনের হাতছানিতে শাসকদলের স্তুতি এবং ঝগড়া টিআরপি আনে এইরকম একটি ভ্রান্ত ধারণা টক্ শোগুলোকে জোলো, অর্থহীন আসরে পরিণত করেছে। বুদ্ধিদীপ্ত মননশীলতা হার মেনেছে সস্তা চটুলতার কাছে। কিন্তু যদি এখনো কোন চ্যানেলে বুদ্ধিদীপ্ত আলোচনা হয় , মানুষ খুঁজে নেয় সেটি। এটাই একমাত্র আশার কথা ।।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন