গালওয়ান উপত্যকায় চীনা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ২০ ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পর থেকে ভারতে চীনবিরোধী মনোভাব অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে প্রকট। ভারতজুড়েই ডাক উঠেছে চীনা পণ্য বর্জনের। কিন্তু ব্যাপারটা যতটা রাজনৈতিক, ততটা বাস্তবিক যে নয়, সে আলোচনা অনেক আগেই হয়ে গেছে।
চীনবিরোধী জাতীয়তাবাদী ভাবনাটা সবচেয়ে বিপাকে ফেলে দিয়েছে ভারতের ক্রীড়াঙ্গনকে। ক্রিকেট তো আরও বিপদে। টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ আইপিএলের টাইটেল স্পনসর স্বত্ব অনেক আগেই চীনা মোবাইল ফোন প্রস্তুতকারী সংস্থা ভিভোর কাছে বিক্রি করা। দাবি উঠেছিল এই স্পনসরশিপ বাতিলের। কিন্তু আগামী সেপ্টেম্বরে আরব আমিরাতে অনুষ্ঠেয় আইপিএলের নতুন আসরেও ‘ভিভো’ থাকছে। সঙ্গে থাকছে চীন-সংশ্লিষ্ট অন্য পৃষ্ঠপোষকেরাও। ব্যাপারটি নিয়ে রাজনীতির লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়ার শঙ্কা থাকছে ভারতীয় ক্রিকেটের।
আইপিএলের নতুন দিনক্ষণ ঘোষণা হওয়ার পর চীনা মোবাইল ফোন প্রস্তুতকারী সংস্থাটির সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের দাবি উঠেছে ভারতজুড়ে। এ প্রতিষ্ঠানটি প্রতিবছর বিসিসিআইকে ৪০০ কোটি রুপি দেওয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় সেবক সংঘের (আরএসএস) অঙ্গসংগঠন স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ (এসজেএম) দ্রুততম সময়ে আইপিএল থেকে সব ধরনের চীনা প্রতিষ্ঠানকে বের করে দেওয়ার দাবি তুলেছে।
গালোয়ানের ঘটনার পর থেকেই এই এসজেএম ভারতজুড়ে চীনা পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। চীনা পণ্য বর্জনের ব্যাপারে ভারতীয়দের সচেতন করার কাজটিও করে যাচ্ছে এই এসজেএম। তারা জানিয়েছে, যদি চীনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পৃষ্ঠপোষকতার চুক্তি বাতিল করা না হয়, তাহলে ভারতীয় জনগণই এ বছরের আইপিএল না দেখার সিদ্ধান্ত নেবে। মানুষই আইপিএল বর্জন করবে। দেশের স্বার্থ ও দেশ মাতৃকার চেয়ে বড় আর কিছুই হতে পারে না।
সংগঠনটির জাতীয় আহ্বায়ক কমিটির প্রধান অশ্বিনী মহাজনের মতে চীনা পণ্য বর্জনের দাবিটি কেবল তাঁর সংগঠনেরই নয়, এটি এখন গোটা ভারতেরই, ‘চীনা পণ্য বর্জনের বিষয়টি এখন ভারতের প্রাণের দাবি। এটি কেবল এসজেএমের দাবি নয়; এ মুহূর্তে ভারতীয়দের মন মানসিকতা চীনা পণ্য ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেই।’
অশ্বিনী মহাজন বিসিসিআইয়ের কড়া সমালোচনা করে বলেন, ‘যেখানে গোটা বিশ্ব চীনের বিরুদ্ধে। গোটা বিশ্বই যখন চীনা পণ্য ও প্রতিষ্ঠান বয়কট করছে, তখন আইপিএল ও ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড চীনকে আশ্রয় দিচ্ছে নিজেদের কোলে।’
কেবল আরএসএস বা এসজেএম নয়, আইপিএলে চীনা প্রতিষ্ঠানকে রেখে দেওয়ার সমালোচনা করেছে ভারতের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল কংগ্রেসও। দলটির মুখপত্র রণদীপ সিং সূর্যওয়ালা টুইট করেছেন ‘আত্মনির্ভরভারতঅভিযান’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে। তিনি লিখেছেন, ‘আইপিএলের এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন বিজেপির দ্বিচারিতা আবারও মানুষের সামনে প্রকাশিত।’
২০১৭ সালে চীনা প্রতিষ্ঠান ভিভোর সঙ্গে ৫ বছরের চুক্তি করে বিসিসিআই। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ভিভো বিসিসিআইকে আইপিএলের টাইটেল স্পনসরশিপ বাবদ ২ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা দিচ্ছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন