মসজিদ থেকে ৮৬ বছর জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার পর পূনরায় মসজিদ হিসেবে রূপান্তরিত হওয়া বিখ্যাত আয়াসোফিয়ায় পূনরায় আদায় হওয়া জুমার নামাজের প্রথম রাকায়াতে ইমামের তেলাওয়াত ছিলো “ইন্না ফাতাহনা লাকা ফাতহাম-মুবিনা” নিশ্চয়ই আমি আপনাকে দিয়েছি সুস্পষ্ট বিজয়। (সূরা ফাতহ : আয়াত ১)।
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৬২৯ খ্রিস্টাব্দে সাহাবায়ে কেরামসহ মক্কা মুকাররমা গিয়ে উমরাহ পালন করেন। সেখানে হুদায়বিয়ার এই সন্ধিকে আল্লাহ জাল্লা শানুহু ফাতহুম মুবিন অর্থাৎ প্রকাশ্য বিজয় হিসেবে অভিহিত করেন। নাজিল হয় সূরা ফাতহ। এই সূরার শুরুতেই ইরশাদ হয়েছে উপরোক্ত আয়াতটি। আয়াসোফিয়ায় প্রথম জুমায় এ আয়াতটিই তেলাওয়াত হয়েছে। বলা হচ্ছে – আয়াসোফিয়া জুমার নামাজ আদায়কে এমন বিজয় হিসেবে দেখছে মুসলিম বিশ্ব।
হাজার হাজার মুসুল্লিদের উপস্থিতিতে মসজিদ হিসেবে এক মহা উদ্বোধন হচ্ছে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ আয়াসোফিয়া। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে হাজারো মুসুল্লিদের সাথে উপস্থিত আছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান।
জুমার নামাজ পরবর্তী এই উপস্থিত উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেছেন এরদোগান নিজেই। সূরা ফাতিহা এবং সূরা বাকারার প্রথম অংশের কিছু অংশ তেলাওয়াত করে এরপর তিনি মুনাজাত করেন।
উদ্বোধন উপলক্ষে শুধু তুর্কিরা নয় বরং সারা বিশ্বের মুসলমানদের মধ্যেই অন্যরকম এক অনুভূতি কাজ করছে। ইস্তাম্বুলের ঐতিহাসিক এই স্থাপনাটিকে পুনরায় মসজিদ হিসেবে চালু করতে ব্যাপক জাঁকজমক পূর্ণ আয়োজন করেছে কতৃপক্ষ।
তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ঐতিহাসিক আয়া সোফিয়া মসজিদে দীর্ঘ ৮৬ বছর পর আজ প্রথম জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগানসহ কয়েক হাজার মুসল্লি অংশ নেন।
তুরস্কের সরকারি দৈনিক ডেইলি সাবাহ’র অনলাইন সংস্করণে বলা হয়েছে, জুমা নামাজ আদায়ের জন্য আজ (শুক্রবার) সকাল থেকেই হাজার হাজার মানুষ আয়া সোফিয়ায় আসতে শুরু করেন। ১১টি চেকপোস্ট দিয়ে মুখে মাস্ক এবং আলাদা জায়নামাজসহ মুসল্লিদের আয়া সোফিয়ার চত্বরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়। মসজিদ চত্বরে ১৭টি স্বাস্থ্য পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করা হয় যেখানে ৭৩৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী ১০১টি গাড়ি ও একটি হেলিকপ্টারের সমন্বিত একটি অ্যাম্বুলেন্স ইউনিটের সাথে সক্রিয়ভাবে কাজ করে।
জুমা নামাজের আগে ইস্তাম্বুলের গভর্নর আলি ইয়েরলিকায়া ঘোষণা দেন, “আয়া সোফিয়ার আশেপাশে সব জায়গায় মুসল্লিতে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। করোনা পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্বের বিধি নিষেধ মানতে নতুন কোনো মুসল্লিকে জুমার নামাজের সুযোগ দেয়া হবে না।”
গভর্নরের বক্তব্যের পর অনুষ্ঠিত নামাজে ইমামতি করেন তুরস্কের ধর্মমন্ত্রী প্রফেসর ড. আলী এরবাস।
গত ১০ জুলাই তুর্কি আদালত এক রায়ে- ১৯৩৪ সালের তৎকালীন মন্ত্রী পরিষদের জাদুঘরে রূপান্তরিত করার আদেশটি রহিত করে। এরপর ১৬ জুলাই তুরস্কের ধর্ম বিষয়ক অধিদপ্তর আয়া সোফিয়া পরিচালনার জন্য সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাথে একটি সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তির অধীনে দেশটির সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয় আয়া সোফিয়ার সংস্কার ও সংরক্ষণের কাজ তদারকি করবে এবং ধর্ম বিষয়ক অধিদপ্তর ধর্মীয় সেবা তদারকি করবে।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সূত্র ধরে দেশটির প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান ঘোষণা দেন, বিশ্বখ্যাত এই স্থাপনাটি মসজিদ হিসেবে খুলে দেয়া হবে ২৪ জুলাই।
১৯৮৫ সালে জাদুঘর থাকাকালে আয়া সোফিয়াকে বিশ্ব-ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে ইউনেস্কো। ইস্তাম্বুল বিজয়ের আগে ৯১৬ বছর আয়া সোফিয়া গির্জা ছিল।গির্জা থেকে যথাযোগ্য মূল্যে ক্রয় করে এটিকে মসজিদ বানানো হয়। ১৯৩৪ সালে কামাল আতাতুর্কের শাসনামলে মসজিদটি জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়। এ সময় স্থাপনাটিতে বেশকিছু পরিবর্তন আনা হয়। এরপর ৮৬ বছর পর আবার এটি মসজিদে রূপান্তরিত হলো।
দক্ষিণ আফ্রিকায় অটোমান যুগের একটি মসজিদ উদ্বোধন করেছে তুরস্ক।আস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন