আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার সীমান্তে দুই দেশের সংঘর্ষে ১৬ জন নিহত হয়েছে। দুই প্রতিবেশী দেশ মধ্যে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) তৃতীয় দিনের সংঘর্ষে ১১ সেনাসদস্য ও এক বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে।
নিহতদের মধ্যে আজারবাইজান সেনাবাহিনীর জেনারেল ও কর্নেলসহ মৃত্যু হয়েছে সাতজনের। অন্যদিকে চার সেনাসদস্যের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে আর্মেনিয়া কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে রবিবার শুরু হওয়া সংঘর্ষে উভয় পক্ষের মোট মারা গেছে ১৬ জন।
এর আগে রবিবার ও সোমবারের সংঘর্ষে আজারবাইজানের চার সৈন্য নিহত ও পাঁচ জন আহত আর আর্মেনিয়ার তিন সৈন্য ও দুই পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছিল।
আজারবাইজানের উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী করিম ভালিয়েভ জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকালে দেশটির মেজর জেনারেল পোলাড গাশিমভ, কর্নেল ইলগার মরিজোয়েভ এবং পাঁচ সেনাসদস্য বীরের মতো লড়াই করে মৃত্যুবরণ করেছেন। এ নিয়ে আর্মেনিয়ার সঙ্গে রবিবার শুরু হওয়া আঞ্চলিক সংঘাতে আজারবাইজানের মোট ১১ জন নিহত হলো।
এছাড়া দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, সংঘাতকালে তোভুজ এলাকায় একটি গ্রামে এক বেসামরিক নাগরিকেরও মৃত্যু হয়েছে। ভালিয়েভ দাবি করেছেন, আজারবাইজান সেনাবাহিনীর পাল্টা আঘাতে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন অন্তত ১০০ আর্মেনীয় সেনাসদস্য।
আর্মেনিয়া জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত তাদের সেনাবাহিনীর তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। মঙ্গলবার কেবল তাদের চার সেনাসদস্য নিহত হন।
মূলত সোভিয়েত ইউনিয়নের সাবেক সদস্য আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া কয়েক দশক ধরেই নিজেদের মধ্যে দীর্ঘ সংঘাতে লিপ্ত আছে। আর্মেনীয় নৃগোষ্ঠী অধ্যুষিত আজারবাইজানের নাগোর্নো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে এই দুই সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছে, তবে এবারের সংঘর্ষের ঘটনাটি ওই বিরোধপূর্ণ অঞ্চল থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার উত্তরে আর্মেনিয়ার তাভুশ অঞ্চলে ঘটেছে।
১৯৯০-এর দশকে এক যুদ্ধে অঞ্চলটি আর্মেনিয়ার বিচ্ছিন্নতাবাদী নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী দখলে নিয়ে নেয়। ওই যুদ্ধে প্রাণ হারায় অন্তত ৩০ হাজার মানুষ। এ অঞ্চল ছাড়া উভয় দেশের মধ্যে যুদ্ধের তেমন কোনো নজির নেই। কিন্তু রোববার উভয় পক্ষই উত্তরাঞ্চলের সীমান্তের বিভিন্ন স্থানে সংঘাতে জড়ায়।
আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আর্মেনীয় সেনাবাহিনী উত্তরাঞ্চলীয় তোভুজে তাদের অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা চালায়। মঙ্গলবারের এ হামলায় কামান, মর্টার ও বড় ক্যালিবারের মেশিনগান ব্যবহার করে। বেশ কয়েকটি গ্রাম এ হামলার শিকার হয়।
আর্মেনিয়া এ সংঘাতের জন্য আজারবাইজানকে দায়ী করেছে। আর্মেনীয় কর্তৃপক্ষের দাবি, সীমান্তের উত্তর-পূর্ব সেকশনে তাভুশ প্রদেশে আজারবাইজানের সেনাবাহিনী হামলা চালায়। এতে তাদের এক মেজর ও একজন ক্যাপ্টেন নিহত হয়েছেন।
একই সঙ্গে আজারবাইজানের বিরুদ্ধে ড্রোন ব্যবহার করে বেসামরিক এলাকায় হামলার অভিযোগ এনেছে আর্মেনিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে শেষ পর্যন্ত উভয় দেশের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে বলে জানিয়েছেন। অন্তত বুধবারে নতুন করে কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি।
এই প্রতিবেশী দেশ দুইটির সংঘর্ষকে ঘিরে বিশ্ব বাজারে তেল ও গ্যাস সরবরাহের করিডর হিসেবে ব্যবহৃত দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চল অস্থিতিশীল হয়ে ওঠার হুমকিতে পড়তে পারে, এমন সম্ভাবনার কারণে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের সংঘর্ষ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলও উদ্বিগ্ন।
রাশিয়া দুই পক্ষকে অস্ত্রবিরতিতে যাওয়ার ও সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ভূমিকা পালনে মস্কো প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভ।
সামরিক জোট নেটো সংঘাত আরও ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে দেশ দুটিকে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিজেপ তায়িপ এরদোয়ান বলেছেন, আজারবাইজানের সঙ্গে তুরস্কের শক্তিশালী ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক মিত্রতা থাকায় এবং উভয় দেশ যৌথ জ্বালানি প্রকল্পে যুক্ত থাকায় আজারবাইজানের বিরুদ্ধে কোনো হামলা হলে তুরস্ক দেশটির পাশে দাঁড়াবে।
“আমাদের সব রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, সামাজিক সম্পর্ক ও আমাদের বিশ্বকে এই দিকে চালনা করা আমাদের একান্ত দায়িত্ব,” এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন তিনি।
আজারবাইজানের পার্বত্য অঞ্চল নাগোর্নো-কারাবাখের নিয়ন্ত্রণ আর্মেনীয় নৃগোষ্ঠীর হাতে আছে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর অঞ্চলটিতে লড়াই শুরু হলে আর্মেনীয়রা স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়।
১৯৯৪ সালে দুই পক্ষের মধ্যে অস্ত্রবিরতি হলেও আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া ধারাবাহিকভাবে পরস্পরের বিরুদ্ধে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ করে আসছে। খবর এএফপি।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন