ইরানের কুদস বাহিনীর সাবেক কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ ঘোষণা লঙ্ঘন করেছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের বিচার বিষয়ক বিশেষ দূত অ্যাগনেস ক্যালামার্ড। তিনি এক তদন্ত প্রতিবেদনে বলেছেন, জেনারেল সোলেইমানি মার্কিন স্বার্থে আঘাত হানতে চেয়েছিলেন বলে তাকে হত্যার যে অজুহাত ওয়াশিংটন দেখিয়েছে তার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে উপস্থাপন করা হবে ক্যালামার্ডের প্রতিবেদনটি। এর আগেই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রতিবেদনটির কিছু অংশ প্রকাশ করা হয়েছে।
Corona Awareness
Copy video url
Play / Pause
Mute / Unmute
Report a problem
Language
Mox Player
এতে বলা হয়েছে, আত্মরক্ষার অজুহাতে তৃতীয় কোনও দেশে আরেকটি দেশের সেনা কমান্ডারকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এতে জাতিসংঘ ঘোষণার লঙ্ঘন হলেও এর দায়ে কোনও আন্তর্জাতিক সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রকে শাস্তি দেয়ার পদক্ষেপ নেয়নি।
প্রতিবেদনে সামরিক ড্রোন ব্যবহারের তীব্র নিন্দা জানিয়ে এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইন তৈরি ও তা কঠোরভাবে মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়।
গত ৩ জানুয়ারি ইরাকের বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সোলেইমানিকে বহনকারী গাড়িবহরে ড্রোন হামলা চালায় মার্কিন বাহিনী। এতে ঘটনাস্থলেই জেনারেল সোলেইমানি এবং ইরাকের ‘হাশদ আশ-শাবি’র উপপ্রধান মাহদি আল মুহান্দিসসহ প্রাণ হারান আরও কয়েকজন।
কাসেম সোলেইমানির পরিচয়
ইরানের বিপ্লবী গার্ডের (আইআরজিসি) অভিজাত শাখা কুদস্ বাহিনীর প্রধান ছিলেন জেনারেল সোলেইমানি। অপ্রচলিত যুদ্ধের জন্য তৈরি কুদস্ বাহিনীকে বৃহৎ ‘স্পেশাল অপারেশন ইউনিট’ বলা যায়। ‘শত্রুর চোখে চোখ রেখে চলা’র নীতিতে বিশ্বাসী জেনারেল সোলেইমানি কুদস্ বাহিনীর প্রধান কর্মক্ষেত্র ইরানের বাইরে নিয়ে গিয়ে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে তেহরানের যে সামরিক প্রভাব তৈরি করেছেন, তা তাকে দেশে এবং বিদেশে ‘জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব’র মর্যাদায় আসীন করেছে।
এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরব ও ইসরায়েল সোলেইমানির তৎপরতা অনুমান করতে পারলেও তাকে থামাতে পারছিল না। যদিও গত ২০ বছরে সৌদি, ইসরায়েল ও পশ্চিমা কিছু দেশের বিভিন্ন সংস্থা সোলেইমানিকে গুপ্তহত্যার চেষ্টা চালায় বহুবার। কিন্তু ৩ জানুয়ারির আগে সববারেই তারা ব্যর্থ হয়।
যেভাবে সবচেয়ে পরাক্রমশালী জেনারেল হলেন
সোলেইমানির উঠে আসা ইরানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কেরমান প্রদেশের একটি দরিদ্র পরিবার থেকে। মাত্র ১৩ বছর বয়সে পরিবারের সচ্ছলতার জন্য কাজ শুরু করেন তিনি। অবসরে ভারোত্তোলন চর্চার পাশাপাশি তৎকালীন খামেনীর অনুষ্ঠানগুলোতে উপস্থিত হতেন সোলেইমানি।
১৯৭৯ সালে ইরানের বিপ্লবের সময় তরুণ সোলেইমানি প্রথম সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। মাত্র ছয় সপ্তাহ সামরিক প্রশিক্ষণ শেষ না করতেই ইরানের পশ্চিম আজারবাইজান প্রদেশে প্রথম যুদ্ধক্ষেত্রে নামতে হয় তাকে।
ইরান-ইরাক যুদ্ধের (১৯৮০-১৯৮৮) সময় সীমান্তে বীরোচিত ভূমিকার জন্য ‘জাতীয় বীর’ বনে যান সোলেইমানি। এরপর সামরিক বাহিনীতে তিনি হয়ে ওঠেন অন্যতম আস্থাভাজন জেনারেল।
এই আস্থাভাজন জেনারেলের হাতে ১৯৯৮ সালে তুলে দেয়া হয় বিপ্লবী গার্ডের প্রধানের দায়িত্ব। তারপর অনেকটা নিভৃতে তিনি কাজ করতে থাকেন। তার কৌশলের কারণে লেবাননের হেজবুল্লাহ, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুগত বাহিনী এবং ইরাকের শিয়াপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে জোরদার সম্পর্ক গড়ে ওঠে ইরানের।
সোলেইমানির কুদস্ বাহিনী সাম্প্রতিক সময়ে ইরান সীমানার বাইরে কর্মক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সফলতার পরিচয় দিয়েছে সিরিয়া এবং ইরাকে। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ যখন গৃহযুদ্ধের কারণে পতনের দ্বারপ্রান্তে, তখন সোলেইমানির নেতৃত্বে তার বাহিনী যুদ্ধক্ষেত্রে কৌশলী ভূমিকা নেয়, এই ভূমিকার কাছে হেরে যায় আসাদবিরোদী সুন্নি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো। এছাড়া ইরাকে এবং সিরিয়ার বিশাল অংশে জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস দমনে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার পাশাপাশি সোলেইমানির বাহিনীও রাখে অনস্বীকার্য ভূমিকা।
দীর্ঘদিন নিভৃতে কাজ করলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনী ও অন্য শিয়া নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানে দেখা যেতে থাকে। গত বছরের মার্চে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনী জেনারেল সোলেইমানিকে ‘অর্ডার অব জুলফিকার’ পদক দেন। বিপ্লব-পরবর্তী ইরানে এ পদক সোলেইমানিই প্রথম পান।
জানা যায়, সোলেইমানি তার কুদস্ বাহিনীর কার্যক্রমের বিষয়ে জবাবদিহি করতেন কেবল আয়াতুল্লাহ আলী খামেনীর কাছে। সেজন্য খোদ ওই বাহিনীর সদস্যরাই তাদের সামর্থের ব্যাপারে পুরোপুরি স্পষ্ট ছিলেন না।
সূত্র: আল জাজিরা, পার্স টুডে
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন