চলতি বছরের মধ্যেই কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন তৈরি হয়ে যাবে বলে দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও দেশটির ওষুধ ও খাদ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার (এফডিএ) প্রধান ও হোয়াইট হাউজের করোনা ভাইরাস বিষয়ক বিশেষ ট্যাস্ক ফোর্সের সদস্য ড. স্টিফেন হান প্রেসিডেন্টের এ কথার সঙ্গে একমত হতে পারেন নি ।
গত ৪ জুলাই মার্কিন স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমাদের জাতির বৈজ্ঞানিক প্রতিভা নিয়ে আমরা অবগত, আশাকরি এ বছর শেষ হওয়ার অনেক আগেই ভ্যাকসিনের একটা সমাধান হয়ে যাবে। দেশব্যাপী ও সর্বোপরি বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানী ও গবেষকদের আমি ধন্যবাদ দিতে চাই। যারা খুব দ্রুততার সঙ্গে মানুষের জীবন বাঁচানোর চিকিৎসাসেবা ও পরিশেষে ভ্যাকসিন আবিষ্কারের ঐতিহাসিক প্রচেষ্টায় নিয়োজিত।’
ট্রাম্পের এমন সময়সীমা নিয়ে হানকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘কখন ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে, সে ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী আমি করতে পারি না। ভ্যাকসিনের উন্নয়ন নির্ভর করবে কেবলই তথ্য আর বিজ্ঞানের ওপর। ভ্যাকসিন একজন মানুষের ইমিউন সিস্টেমকে প্রশিক্ষণ দেয় যেন সেটি ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে, কাজেই তখন তারা অসুস্থ হবে না। সুতরাং এ বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা আসলেই সম্ভব নয়।’
করোনাকালে ভ্যাকসিন ও চিকিৎসা নিয়ে মন্তব্য করে অনেকবারই সমালোচনার মুখে পড়েছেন ট্রাম্প। এ মহামারিতে যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৩২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত ৩০ লাখেরও বেশি। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে পশ্চিম ও দক্ষিণের রাজ্যগুলোতে সংক্রমণের হার অনেক বেড়েছে।
জুন মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিচালক ডা. টেড্রোস আধানোম ঘেব্রেয়েসুস হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, এ বছরের মধ্যে কার্যকর ভ্যাকসিন তৈরি নাও করতে পারেন বিজ্ঞানীরা। তার কথায়, ‘আমাদের ধারণা, এক বছরের মধ্যে ভ্যাকসিন পাওয়া যেতে পারে।’ আবার অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ের আগে ভ্যাকসিন বাজারে নাও আসতে পারে।
মার্কিন সংবাদ মাধ্যম এবিসি নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে হান বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি বিজ্ঞানীরা নজিরবিহীন দ্রুততার সঙ্গে ভ্যাকসিন উন্নয়নের চেষ্টা করে যাচ্ছেন।’ যদিও সময়সীমা নিয়ে তিনি কিছু বলতে চাইলেন না। তার ভাষায়, ‘আমেরিকান মানুষদের কাছে আমাদের একটাই প্রতিশ্রুতি, ভ্যাকসিন নিয়ে আমরা তথ্য ও বিজ্ঞানের ওপরই নির্ভর করব; ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ও নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।’
গত শনিবার রাতে ট্রাম্প দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছিলেন, কভিড-১৯ সংক্রমণের ৯৯ শতাংশের ক্ষেত্রেই কোনো ক্ষতি হয় না। এ ব্যাপারে হান কোনো মন্তব্য করতে রাজি নন। তিনি বলেন, ‘কে সঠিক আর কে ভুল সে ব্যাপারে আমি যাচ্ছি না। তবে হোয়াইট হাউজ ট্যাস্ক ফোর্সের কাছে তথ্য আছে, যা বলছে এটি গুরুতর সমস্যা। মানুষকে এটি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।’
ট্রাম্পের করোনা ভাইরাস বিষয়ক অন্যতম উপদেষ্টা হয়েও যখন প্রেসিডেন্টের ভুল শোধরাতে রাজি হলেন না হান, তখন এ ঘটনা ভাইরাস নিয়ে আমেরিকান মানুষদের মধ্যে সংশয়ের জন্ম দেবে।
যুক্তরাষ্ট্রে শনিবার পর্যন্ত মৃত্যুর হার ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। তাহলে তো ট্রাম্পের দাবি স্বাভাবিকভাবেই ভুল প্রমাণিত হয়। যদিও বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ এ মৃত্যুর হার ধারণার চেয়ে বেশ কম। দেশেভেদে এটি কমবেশি হয়। মার্চে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছিল, কোভিড-১৯ এ মৃত্যুর হার ৩ দশমিক ৪ শতাংশের মতো। এছাড়া বেশিরভাগ সংক্রমিতর হালকা ও মাঝারি উপসর্গ দেখা দেয়, আর ২০ শতাংশ রোগীর অক্সিজেন লাগে। খবর বিবিসি ও সিএনএন।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন