সম্প্রতি পুলিশের হাতে মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েড নৃশংসভাবে নিহত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভ অব্যাহত থাকার প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘও মার্কিন সমাজ ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভেতরেই বর্ণবৈষম্য থাকার নিন্দা জানিয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল বশলেহ বিক্ষোভ-মিছিলের খবর সংগ্রহ ও প্রচারের দায়িত্বে নিয়োজিত সাংবাদিকদের ওপর নজিরবিহীন হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বশলেহ বলেছেন, আফ্রিকান বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকদের হত্যা বন্ধের দাবি জানিয়ে যেসব আহ্বান বা ফরিয়াদ তোলা হচ্ছে সেসব শোনা উচিত। একইভাবে পুলিশি হিংস্রতা বন্ধের এবং মার্কিন সমাজে প্রচলিত ও কাঠামোগত বৈষম্য দূর করার দাবিগুলোও শোনা উচিত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নামক রাষ্ট্রটির ইতিহাস যত প্রাচীন দেশটিতে কৃষ্ণাঙ্গ ও অশ্বেতাঙ্গদের ওপর অবিচার, সহিংসতা ও বৈষম্যের ইতিহাসও তত প্রাচীন। দেশটির কৃষ্ণাঙ্গরা যুগ যুগ ধরে তাদের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করে আসলেও তারা এখনও নানা ধরনের বৈষম্য ও সহিংসতার শিকার হচ্ছে।
মার্কিন জনসংখ্যার ১৩ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ। রাষ্ট্রের শিক্ষা, চাকরি, ব্যবসা, সম্পদ ও জনকল্যাণমূলক খাতে তাদের খুব কমই প্রাপ্য অধিকার দেয়া হয়। রাষ্ট্রের বেশিরভাগ সংকট ও সমস্যায় ডুবে আছে এই কৃষ্ণাঙ্গরাই। গত তিন শতাব্দী ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দাস-প্রথা, হত্যা ও সহিংসতার শিকার হয়েছে তারা। নানা ধরনের অপব্যবহার ও বৈষম্যের প্রেক্ষাপটে মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গরা গত শতকের ৫০'র দশকে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। কিন্তু তারপর থেকে এখনও মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গরা শ্বেতাঙ্গদের পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক বৈষম্যসহ নানা ধরনের বৈষম্য ও বর্ণবাদের শিকার হয়ে আছে। মার্কিন সংবাদ মাধ্যমও আফ্রিকান-আমেরিকানদের দুর্দশা ও তাদের বঞ্চনাগুলো তেমন একটা তুলে ধরে না।
অথচ মার্কিন সরকার সারা দুনিয়ায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ফেরি করে বেড়ায়। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে ট্রাম্পসহ শীর্ষস্থানীয় অনেক মার্কিন কর্মকর্তা উগ্র জাতীয়তাবাদ ও বর্ণবাদকে লালন করছেন ও উস্কে দেয়ায় এইসব সংকট আবারও ব্যাপক মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে মার্কিন সমাজে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাও এ বিষয়টি লক্ষ্য করেছে।
যে সময় ট্রাম্পসহ মার্কিন নেতৃবৃন্দের উচিত ছিল বর্ণবাদের নিন্দা জানানো ও বৈষম্য দূর করার কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া এবং সহিংসতার বিষয়ে তদন্ত চালানো সে সময় তারা তা করছেন না। ট্রাম্প বরং প্রতিবাদীদের দোষ-ত্রুটি তুলে ধরার চেষ্টা করছেন এবং বল প্রয়োগ করে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ থামানোর চেষ্টা করছেন।
এ অবস্থায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনও মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর সহিংসতা ও বর্ণবাদী বৈষম্য দূর করা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন মোকাবেলার ক্ষেত্রে কার্যকর কোনো ভূমিকা নেয়নি এখনও। কেবল কিছু মৌখিক নিন্দা ও প্রতিবাদই এই সংকট সমাধানের জন্য যথেষ্ট নয়। #
পার্সটুডে
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন