যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমানবাহী রণতরী থিওডোর রুজভেল্টের ২৮৬ নাবিক করোনা ভাইরাসে (কভিড-১৯) আক্রান্ত হয়েছেন। বুধবার (৮ এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের এক কর্মকর্তার বরাতে এ তথ্য জানায় সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
খবরে বলা হয়, কভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত থিওডোর রুজভেল্টের ২৮৬ জন নাবিককে শনাক্ত করা গেছে। ইতোমধ্যে রণতরীর প্রায় ৯০ শতাংশ ক্রুর নমুনা পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। আর রণতরীটির ২ হাজার ৩২৯ নাবিক ফিরে এসেছেন উপকূলে।
এদিকে যুদ্ধবিমানবাহী রণতরীটির ক্যাপ্টেন ব্রেট ক্রোজিয়ারও কভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। একইসঙ্গে মার্কিন নৌবাহিনীর সমলোচনা করার কারণে হারিয়েছেন পদ। ক্যাপ্টেন ব্রেট ক্রোজিয়ার জাহাজে করোনা ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে সতর্ক করে বলেছিলেন, দ্রুত জাহাজের সেনাদেরকে সরিয়ে নেয়া দরকার; তা নাহলে সেনারা মারা যাবে। তার এই বক্তব্যের পর তাকে রণতরীর ক্যাপ্টেনের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। পরে পেন্টাগনে এক সংবাদ সম্মেলনে ক্রোজিয়ারকে বরখাস্তের নির্দেশের বিষয়টি স্বীকার করেন মোডলি।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শানাক্তের পর রণতরীটিকে মার্চের শেষে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বীপ গুয়ামে নোঙর করা হয়।
এদিকে, মার্কিন নৌবাহিনী বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী টমাস মোডলি পদত্যাগ করেছেন। এরইমধ্যে তার পদত্যাগের খবর মার্কিন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। মার্কিন বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস থিওডোর রুজভেল্টে করোনা ভাইরাসের মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পর ওই জাহাজের ক্যাপ্টেন ব্রেট ক্রোজিয়ারকে বরখাস্ত করার ঘটনা নিয়ে মোডলি পদত্যাগ করলেন।
ধারণা করা হচ্ছে মোডলির জায়গায় নতুন করে দায়িত্ব নেবেন মার্কিন সামরিক বাহিনীবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ম্যাকফার্সন। জেমস ম্যাক এর আগে মার্কিন নৌবাহিনীর রিয়ার এডমিরাল ওজাজ অ্যাডভোকেট জেনারেল ছিলেন।
গত সোমবার একটি অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়েছে যাতে শোনা যাচ্ছে, থিওডোর রুজভেল্ট জাহাজের ক্রুদের উদ্দেশ্যে দেয়া এক বক্তৃতায় মোডলি জাহাজের কমান্ডারকে ‘বোকা’ বলে অভিহিত করছেন।
অন্যদিকে করোনা ভাইরাসে বিধ্বস্ত যুক্তরাষ্ট্র। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে দেশটি। দিনদিন অবস্থা আরও অবনতি হচ্ছে। ক্রমাগত বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে ১ হাজার ৯৪০ জন। এ নিয়ে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৭৯৫ জন। এর মধ্যে শুধু নিউইয়র্কে মারা গেছে ৬ হাজার ২৮৮ জন।
আক্রান্তের সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্র ছাড়িয়ে গেছে সবাইকেই। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৪ লাখ ৩৪ হাজার ৬২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছে ৩১ হাজার ৯৩৫ জন। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছে ২২ হাজার ৫৮০ জন।
যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭৮০ জন আক্রান্ত রয়েছে। তাদের মধ্যে ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৫১৫ জন চিকিৎসাধীন, যাদের অবস্থা স্থিতিশীল। বাকি ৯ হাজার ২৬৫ জনের অবস্থা গুরুতর, যাদের অধিকাংশই আইসিউতে রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা নিউইয়র্কে। সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৭৯ জনসহ এ পর্যন্ত মারা গেছে ৬ হাজার ২৮৮ জন। এবং গত ২৪ ঘণ্টায় ৮ হাজার ৭৮৭ জনসহ আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ৫১ হাজার ১৭১ জন। এছাড়া নগরীতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথমবারের মতো ১৮ বছর বয়সের নিচে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরে অন্য আরও রোগ ছিল।
আমেরিকার শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অ্যান্টনি ফসি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, দেশে করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা এক লাখ বা তারও বেশি হতে পারে। এরপর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও একই কথা বলেছেন। এদিকে চীন থেকে জরুরি মেডিকেল সরঞ্জাম পৌঁছেছে যুক্তরাষ্ট্র্রে। খবর বিবিসি, এএফপি।
উল্লেখ্য, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ৩ মাস ছাড়িয়েছে। এখনও নিয়ন্ত্রণের লক্ষণ খুব একটা দৃশ্যমান নয়। করোনায় বিপর্যস্ত সারাবিশ্ব। গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বজুড়ে ৬ হাজার ৩৯৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৮ হাজার ৪৩৩ জন।
এছাড়া বিশ্বজুড়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছে ৮২ হাজার ৯৫৪ জন। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত হয়েছে ১৫ লাখ ১৩ হাজার ৯৩৫ জন। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছে ৩ লাখ ২৯ হাজার ৭৩১ জন।
সবমিলিয়ে, বর্তমানে ১০ লাখ ৯৫ হাজার ৭৭১ জন আক্রান্ত রয়েছে। তাদের মধ্যে ১০ লাখ ৪৭ হাজার ৬৯৩ জন চিকিৎসাধীন, যাদের অবস্থা স্থিতিশীল। আর ৪৮ হাজার ৭৮ জনের অবস্থা গুরুতর, যাদের অধিকাংশই আইসিউতে রয়েছে।
ভাইরাসটি চীন থেকে ছড়ালেও বর্তমানে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৪ লাখ ৩৪ হাজার ৬২ জন আক্রান্ত হয়েছে। আর মৃত্যু হয়েছে ১৪ হাজার ৭৭৪ জনের। ইতালিতে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৪২২ জন আক্রান্ত, বিপরীতে মারা গেছে ১৭ হাজার ৬৬৯ জন। এখন পর্যন্ত করোনায় সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে ইতালিতে এবং আক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রে।
এছাড়া স্পেনে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৪৮ হাজার ২২০ জন আক্রান্ত, আর ১৪ হাজার ৭৯২ জনের মৃত্যু হয়েছে। জার্মানিতে ১ লাখ ১৩ হাজার ২৯৬ জন আক্রান্ত, ২ হাজার ৩৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। চীনে আক্রান্ত ৮১ হাজার ৮০২, মারা গেছে ৩ হাজার ৩৩৩ জন। ফ্রান্সে আক্রান্ত ১ লাখ ১২ হাজার ৯৫০, মারা গেছে ১০ হাজার ৮৬৯ জন। ইরানে আক্রান্ত ৬৪ হাজার ৫৮৬, মারা গেছে ৩ হাজার ৯৯৩ জন। যুক্তরাজ্যে আক্রান্ত ৬০ হাজার ৭৩৩, মারা গেছে ৭ হাজার ৯৭ জন। বেলজিয়ামে আক্রান্ত ২৩ হাজার ৪০৩, মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ২৪০ জনের। নেদারল্যান্ডে আক্রান্ত ২০ হাজার ৫৪৯, মারা গেছে ২ হাজার ২৪৮ জন।
এছাড়া ভারতে এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত ৫ হাজার ৯১৬ জন আক্রান্ত হয়েছে। আর প্রাণ গেছে ১৭৮ জনের। পাকিস্তানে এ পর্যন্ত ৪ হাজার ২৬৩ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং ৬১ জন মারা গেছে। বাংলাদেশে এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত ২১৮ জন আক্রান্ত হয়েছে বিপরীতে প্রাণ গেছে ২০ জনের।
এ রোগের কোনো উপসর্গ যেমন জ্বর, গলা ব্যথা, শুকনো কাশি, শ্বাসকষ্ট, শ্বাসকষ্টের সঙ্গে কাশি দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জনবহুল স্থানে চলাফেরার সময় মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। বাড়িঘর পরিষ্কার রাখতে হবে। বাইরে থেকে ঘরে ফিরে এবং খাবার আগে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে। খাবার ভালোভাবে সিদ্ধ করে খেতে হবে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন