প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। বিশ্বজুড়ে তৈরি হয়েছে মানবিক সংকট। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে করোনা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি এক ব্যক্তি শুনেছেন তার পাশের বেডের রোগীর মৃত্যু চিৎকার, কান্না। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মেট্রোকে বর্ণনা দিয়েছেন সেই ভয়ংকর মুহূর্তের।
মেট্রো’র প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ক্রেইগ ফারলে-জোনস (৪৩) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ছয়দিন হাসপাতালে কাঠিয়েছেন। এ সময় তিনি তার বাগদত্তা লরা উইলসনকে (৪১) টেক্সট করেছিলেন, মারা যাওয়ার আগে লোকটি চিৎকার করে বলছিলেন, কেন তিনি একটা উইল লিখেননি।
গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্যের টেমসাইড জেনারেল হাসপাতালে ৬০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির মারা যাওয়ার আগে ক্রেইগ তার বিছানায় শুয়ে শুয়ে ওই লোকটির কথা শুনেছিলেন। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর হৃদয় বিদারক সেই দৃশ্যের বর্ণনা করেছেন, যাতে এমন হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা আর না হয়। সফটওয়্যার ও বিপণন সংস্থার পরিচালক ক্রেইগকে রোববার হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
ক্রেইগ তার নিজ বাড়িতে ফিরে আসার পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ‘ওয়ার্ডের প্রত্যেককেই মৃত্যুর মতো মনে হয়েছিল, তবে আমার পাশের বিছানায় থাকা লোকটি যার বয়স প্রায় ৬৫ বা ৭০ বছর, লোকটি খুব বেশি কথা বলতেন এবং অধিকাংশ সময় অক্সিজেন ছাড়াই থাকতে স্বাচ্ছন্দবোধ করতেন।
পরে আমি দেখতে পেলাম, তিনি শ্বাস নিতে লড়াই করছেন এবং আতঙ্কিত হতে শুরু করেছেন। আমি দেখতে পাচ্ছিলাম যে সে কষ্ট পাচ্ছে। আমি নার্সদের ডেকে বলেছি কিন্তু তারা তাকে শান্ত করতে পারেননি। হঠাৎ লোকটির অবস্থা বদলে গিয়েছিল। তার অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছিল। তাকে বাঁচানোর সব আশাই শেষ হয়ে গিয়েছিল। নার্সরা লোকটিকে শান্ত করার জন্য কিছু একটা দিয়েছিল এবং তার বাচ্চাদের ডাকল, কারণ এটি সম্ভবত তার শেষ রাত ছিল। তার বাচ্চারা মাস্ক এবং গাউন পরে এসে বাবাকে বিদায় জানাতে পেরেছিল। তবে তারপরেও তিনি আরও কয়েক ঘণ্টা বেঁচে ছিলেন এবং মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করেছিলেন। আমি যতদিন বেঁচে থাকি লোকটির শেষ ওই দুই ঘণ্টার কথা ভুলবো না। তিনি চিৎকার করছিলেন, শ্বাস নিতে লড়াই করার সময় তার পরিবারের সদস্যদের নাম ধরে ডাকছিলেন আর কাঁদছিলেন।’
তিনি বলছিলেন, ‘লোকটির এমন কষ্ট দেখে আমি নিজেও চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। আমি নার্সদের বারবার ডাকছিলাম, কিন্তু তারা আমাকে বলেছিল যে তার জন্য আর কিছুই করার নেই। আমি তার শ্বাসকষ্ট শুনতে পেয়েছি, মৃত্যুর ধড়ফড়ানি শুনেছি। তিনি চিৎকার করে পরিবারের সদস্যদের ডাকতে থাকলো এবং কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে সব কিছু শেষ হয়ে গেল।’
ক্রেইগ আরও বলেন, হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সরা সম্ভাব্য সকল চেষ্টাই করেছে, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে চেষ্টা করলেও কোনো ফলাফল আসে না। আমি এমনভাবে কোনো কুকুরের মৃত্যুও জীবনে দেখতে চাই না।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন