যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি দিনদিন ভয়াবহ রুপ নিচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ১ হাজার ৩২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। এ নিয়ে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৩৯২ জন। এর মধ্যে শুধু নিউইয়র্কে মারা গেছে ৩ হাজার ২১৮ জন।
আক্রান্তের সংখ্যায় দেশটি ইতালি, চীন ও স্পেনকেও ছাড়িয়ে গেছে। এই ভাইরাসে সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৭৭ হাজার ১৬১ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩২ হাজার ২৮৪ জন। যা একদিনে সর্বোচ্চ আক্রান্তের রেকর্ড। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছে ১২ হাজার ২৮৩ জন।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৪৮৬ জন আক্রান্ত রয়েছে। তাদের মধ্যে ২ লাখ ৫১ হাজার ৬৯৯ চিকিৎসাধীন, যাদের অবস্থা স্থিতিশীল। বাকি ৫ হাজার ৭৮৭ জনের অবস্থা গুরুতর, যাদের অধিকাংশই আইসিউতে রয়েছে।
আমেরিকার শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অ্যান্টনি ফসি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, দেশে করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা এক লাখ বা তারও বেশি হতে পারে। এরপর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও একই কথা বলেছেন। এদিকে চীন থেকে জরুরি মেডিকেল সরঞ্জাম পৌঁছেছে যুক্তরাষ্ট্র্রে। খবর বিবিসি, এএফপি।
যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা নিউইয়র্কে। সেখানে এ পর্যন্ত মারা গেছে ৩ হাজার ২১৮ জন এবং আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ২৭৬ জন। এছাড়া নগরীতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথমবারের মতো ১৮ বছর বয়সের নিচে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরে অন্য আরও রোগ ছিল।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, করোনা ভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু এক লাখ বা তারও বেশি হতে পারে। এবং এ ধরনের কথা প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছেন ট্রাম্প। রবিবার সন্ধ্যায় হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে করোনা ভাইরাস নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প একথা বলেন। খবর সিএনএন। মৃত্যুর সংখ্যা এক লাখ বা এর নিচে থাকলে ‘সম্মিলিতভাবে করা খুব ভালো কাজ হবে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এর আগে রবিবার সকালে সিএনএনের টকশো ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ এ যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অ্যান্টনি ফসি (যুক্তরাষ্ট্র্রের ন্যাশনাল অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের পরিচালক) এক মন্তব্যে বলেছিলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণে যুক্তরাষ্ট্র্রে এক লাখ বা তারও বেশি লোক মারা যেতে পারে।
হোয়াইট হাউসের সংবাদ সম্মেলনে ডা. ফসির মন্তব্যের বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প ওই স্বীকারোক্তি দেন। সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্র্রজুড়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও ‘স্টে অ্যাট হোম’ গাইডলাইন আরও ৩০ দিন বাড়িয়ে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
দুই সপ্তাহ আগে ১৫ দিনের জন্য এ গাইডলাইন ঘোষণা (লকডাউন) করেছিলেন তিনি, যার মধ্যে গণজমায়েতের ওপর নিষেধাজ্ঞাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। সোমবার ওই সময়সীমা শেষ হয়। গত সপ্তাহে ট্রাম্প ১২ এপ্রিলের ইস্টারের পর্বের সময় দেশ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু এদিনের সংবাদ সম্মেলনে আগের অবস্থান থেকে সরে আসেন তিনি।
তিনি জানান, কভিড-১৯ এ সম্ভাব্য মৃত্যুর সংখ্যা সম্পর্কে এদিন (রবিবার) তিনি ‘সবচেয়ে সঠিক’ ও ‘বিশদ’ তদন্ত ও বিশ্লেষণ প্রতিবেদন পেয়েছেন। ট্রাম্প বলেন, ‘যদি আমরা কিছু না করি’ তাহলে আক্রান্তের সংখ্যা ২০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে।
ট্রাম্প বলেন, দুই সপ্তাহের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা সর্বোচ্চ পর্যায়ে যেতে পারে। বিজয় অর্জিত হওয়ার আগেই জয় ঘোষণার চেয়ে খারাপ আর কিছু হতে পারে না। আপনারা যত ভালো করবেন, তত দ্রুত এই দুঃস্বপ্ন শেষ হবে।
উল্লেখ্য, করোনা ভাইরাসে পুরো বিশ্ব নীরব, নিস্তব্ধ। বিশ্ব গ্রাম ধারণায় যেখানে রাত-দিনের পার্থক্য করাই দুষ্কর ছিল, সেখানে সমগ্র বিশ্বই ঘরবন্দি। চারদিক সুনসান, জনশূন্য। যেন পৃথিবী আজ এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। বিশ্বাস করা কষ্টসাধ্য হলেও বিশ্বজুড়ে করোনায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৫ হাজার ৯৭৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা এ যাবৎ একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৯ হাজার ১৪১ জন।
এই ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছে ৮২ হাজার ৯৪১ জন। এটিও একদিনে আক্রান্তের সংখ্যায় সর্বোচ্চ। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৯৮ হাজার ৬ জন। এ পর্যন্ত ২ লাখ ২৮ হাজার ৪০৫ জন সুস্থ হয়েছে বাড়ি ফিরেছেন।
সবমিলিয়ে, বর্তমানে ৮ লাখ ১০ হাজার ৪৬০ জন আক্রান্ত রয়েছে। তাদের মধ্যে ৭ লাখ ৭১ হাজার ২১ জন চিকিৎসাধীন, যাদের অবস্থা স্থিতিশীল। আর ৩৯ হাজার ৪৩৯ জনের অবস্থা গুরুতর, যাদের অধিকাংশই আইসিউতে রয়েছে।
ভাইরাসটি চীন থেকে ছড়ালেও বর্তমানে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৭৭ হাজার ১৬১ জন আক্রান্ত হয়েছে। আর মৃত্যু হয়েছে ৭ হাজার ৩৯২ জনের। ইতালিতে ১ লাখ ১৯ হাজার ৮২৭ জন আক্রান্ত হয়েছে, বিপরীতে মারা গেছে ১৪ হাজার ৬৮১ জন। এখন পর্যন্ত করোনায় সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে ইতালিতে এবং আক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রে।
এছাড়া স্পেনে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ১৯ হাজার ১৯৯ জন আক্রান্ত হয়েছে। আর ১১ হাজার ১৯৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। জার্মানিতে ৯১ হাজার ১৫৯ জন আক্রান্ত, মৃত্যু ১ হাজার ২৭৫। চীনে আক্রান্ত ৮১ হাজার ৬২০, মৃত্যু ৩ হাজার ৩২২। ফ্রান্সে আক্রান্ত ৬৪ হাজার ৩৩৮, মৃত্যু ৬ হাজার ৫০৭। ইরানে আক্রান্ত ৫৩ হাজার ১৮৩, মৃত্যু ৩ হাজার ২৯৪। যুক্তরাজ্যে আক্রান্ত ৩৮ হাজার ১৬৮, মৃত্যু ৩ হাজার ৬০৫ জন।
এছাড়া ভারতে এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৫৬৭ জন আক্রান্ত হয়েছে। আর প্রাণ গেছে ৭২ জনের। পাকিস্তানে এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৮৬ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং ৪৬ জন মারা গেছে। বাংলাদেশে এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত ৬১ জন আক্রান্ত হয়েছে বিপরীতে প্রাণ গেছে ৬ জনের।
এ রোগের কোনো উপসর্গ যেমন জ্বর, গলা ব্যথা, শুকনো কাশি, শ্বাসকষ্ট, শ্বাসকষ্টের সঙ্গে কাশি দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জনবহুল স্থানে চলাফেরার সময় মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। বাড়িঘর পরিষ্কার রাখতে হবে। বাইরে থেকে ঘরে ফিরে এবং খাবার আগে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে। খাবার ভালোভাবে সিদ্ধ করে খেতে হবে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন