করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে বিশ্বের অনেক দেশে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এর ফলে মানুষকে ঘরেই থাকতে হচ্ছে। অনেককে ঘরে বসেই করতে হচ্ছে অফিসের কাজ। কিন্তু স্ত্রীর ‘জ্বালা–যন্ত্রণায়’ বাসায় বসে কাজ করা কঠিন হচ্ছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরনের কৌতুক চলছে। অনেকে এমন রসিকতার সমালোচনা করছেন। তারপরও বেশির ভাগ মানুষই এটা কানে তুলতে নারাজ। এমনকি মালয়েশিয়ার সরকারও নারীদের নিয়ে এমন আপত্তিকর কথা বলেছে। সমালোচনার মুখে অবশ্য তারা ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়েছে। খবর সিএনএন।
সিএনএন তাদের এক প্রতিবেদনে বলছে, ঘরে বসে কাজ করার সময় নারীরা কী করবেন আর কী করবেন না, তার একটি নির্দেশনা দেয় মালয়েশিয়ার নারী উন্নয়ন বিভাগ। এই নির্দেশনার মধ্যে আছে, ঘরে বসে কাজের সময়ও সাজগোজ করে পরিপাটি হয়ে থাকা, স্বামীকে জ্বালাতন না করা। এসব নির্দেশনা তারা আবার তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্টেও পোস্ট করেছে।
এতে হিতে বিপরীত হয়েছে। নারীরা এ ধরনের নির্দেশনাকে তাদের জন্য অত্যন্ত অবমাননাকর বলে মনে করেছেন। সরকারের এমন বৈষম্যমূলক আচরণের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন মানুষ। মালয়েশিয়ান অল উইমেন’স অ্যাকশন সোসাইটি অবিলম্বে এ ধরনের প্রচার বন্ধ করার আহ্বান জানায়। তারা বলে, নারী এই সময়ে কেমন পোশাক পরবেন, কেমন সাজগোজ করবেন কিংবা স্বামীর সঙ্গে কেমন ব্যবহার করবেন; এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়ার বদলে এই সময়ে পারিবারিক সহিংসতা কীভাবে বন্ধ রাখা যায়, তা নিয়ে তাদের কাজ করা উচিত। পরে নারী উন্নয়ন বিভাগ বাধ্য হয়ে তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে এগুলো মুছে ফেলে।
সমালোচনার মুখে নারী উন্নয়ন বিভাগের মহাপরিচালক আখমা হাসান অবশ্য বলেছেন, ‘ইতিবাচক বার্তাই দিতে চেয়েছিলাম। বাড়িতে থেকে কাজ করার সময় পরিবারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার অংশ হিসেবে এই নির্দেশনাগুলো দিয়েছিলাম। কিন্তু এটা নিয়ে সমালোচনা হওয়ায় আমরা এগুলো সরিয়ে নিচ্ছি। আর এ ঘটনার জন্য আমরা ক্ষমা চাইছি।’
এদিকে মালয়েশিয়ায় এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ১১৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ৫০ জন।
উল্লেখ্য, করোনা ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫ হাজার ৯৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা এ যাবৎ একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজার ২৮১।
এই ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭৯ হাজার ৭৪৭ জন। এটিও একদিনে আক্রান্তের সংখ্যায় সর্বোচ্চ। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ১৮ হাজার ৬৪৯ জন। এর মধ্যে ২ লাখ ১৩ হাজার ৫০২ জন সুস্থ হয়েছে বাড়ি ফিরেছেন।
চীন থেকে শুরু হলেও বর্তমানে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৪৫ হাজার ৩৭৩ জন আক্রান্ত হয়েছে। আর মৃত্যু হয়েছে ৬ হাজার ৯৫ জনের। ইতালিতে ১ লাখ ১৫ হাজার ২৪২ জন আক্রান্ত হয়েছে বিপরীতে মারা গেছে ১৩ হাজার ৯১৫ জন। এখন পর্যন্ত করোনায় সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে ইতালিতে এবং আক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রে।
এছাড়া স্পেনে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ১২ হাজার ৬৫ জন আক্রান্ত হয়েছে। আর ১০ হাজার ৩৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। জার্মানিতে ৮৪ হাজার ৭৯৪ জন আক্রান্ত, মৃত্যু ১ হাজার ১০৭। চীনে আক্রান্ত ৮৪ হাজার ৭৯৪, মৃত্যু ৩ হাজার ৩১৮। ফ্রান্সে আক্রান্ত ৫৯ হাজার ১০৫, মৃত্যু ৫ হাজার ৩৮৭। ইরানে আক্রান্ত ৫০ হাজার ৪৬৮ , মৃত্যু ৩ হাজার ১৬০। যুক্তরাজ্যে আক্রান্ত ৩৩ হাজার ৭১৮, মৃত্যু ২ হাজার ৯২১। সুইজারল্যান্ডে আক্রান্ত ১৮ হাজার ৮২৭, মৃত্যু ৫৩৬। তুরস্কে আক্রান্ত ১৮ হাজার ১৩৫, মৃত্যু ৩৫৬। বেলজিয়ামে আক্রান্ত ১৫ হাজার ৩৪৮, মৃত্যু ১ হাজার ১১। নেদারল্যান্ডসে আক্রান্ত ১৪ হাজার ৬৯৭, মৃত্যু ১ হাজার ৩৩৯। কানাডায় আক্রান্ত ১১ হাজার ২৮৩, মৃত্যু ১৭৩। অস্ট্রিয়াতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত ১১ হাজার ১২৯ জন ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫৮ জনে।
এছাড়া ভারতে এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৫৪৩ জন আক্রান্ত হয়েছে। আর দেশটিতে এখন পর্যন্ত প্রাণ গেছে ৭২ জনের। পাকিস্তানে এ পর্যন্ত ২,৪২১ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং ৩৪ জন মারা গেছে। দেশটিতে এ পর্যন্ত ১২৫ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠেছেন। বাংলাদেশে এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত ৫৬ জন আক্রান্ত হয়েছে বিপরীতে প্রাণ গেছে ৬ জনের।
এ রোগের কোনো উপসর্গ যেমন জ্বর, গলা ব্যথা, শুকনো কাশি, শ্বাসকষ্ট, শ্বাসকষ্টের সঙ্গে কাশি দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জনবহুল স্থানে চলাফেরার সময় মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। বাড়িঘর পরিষ্কার রাখতে হবে। বাইরে থেকে ঘরে ফিরে এবং খাবার আগে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে। খাবার ভালোভাবে সিদ্ধ করে খেতে হবে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন