করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ইরানের ইস্পাহান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশটির সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে নিজ নিজ ডরমেটরিতেই দিনের পুরো সময় পার করছেন শিক্ষার্থীরা।হঠাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খাবার সমস্যাও দেখা দিয়েছে। সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কেউ কেউ বাইরে থেকে খাবার নিয়ে আসছে।
লেবানন, আফগানিস্তান, জর্ডান, কাশ্মীর, ভারত ইত্যাদি দেশের সবাই নিজ নিজ দেশে ফিরে গেছেন। বিশেষ করে লেবাননের শিক্ষার্থীরা তেহরানে তাদের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের মাধ্যমে ইরানের সঙ্গে নিজেদের দেশের বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে গেলেও নিজেরা ফ্লাইট ভাড়া করে লেবাননে ফিরে গেছেন।
প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে ইরানে অবস্থানরত ভারতীয় শিক্ষার্থীদের জন্য ইরানে একটি মেডিকেল টিম পাঠিয়ে করোনা টেস্টের মাধ্যমে যারা নেগেটিভ তাদেরকে নিজ দেশে ফেরত নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ অবস্থায় ডরমেটরি অনেকটায় শিক্ষার্থী শূন্য হয়ে যাওয়ায় সেই কোলাহলপূর্ণ ডরমেটরি এখন অনেকটাই নীরব।
তোবা নামে এক শিক্ষার্থী বলেন ‘আমার ইরানী রুমমেট করোনাভাইরাস শনাক্তের ঘোষণার খবর শুনে ইস্পাহানের পাশের শহরে নিজ পরিবারের কাছে ফিরে গেছেন। এই সমস্যা খুব সহজেই দূর হচ্ছে না। সুযোগ থাকলে দেশে ঘুরে আসো’।
কথা হয় সালাম নামে আরেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাসা থেকে আম্মা প্রতিদিন কল দেয়। বলে সুযোগ থাকলে চলে এসো দেশে। কীভাবে বলি, ইরান-বাংলাদেশ সকল ফ্লাইট বন্ধ হয়ে আছে। এই অবস্থায় মনে হয় এই বিশ্ব একটি উন্মুক্ত কারাগার যেখানে আমরা আসামি’।
মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডরমিটরি হওয়ায় এখানে অনেক চিকিৎসক এবং নার্স আছেন, যারা নিয়মিত হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দিতে ডিউটিতে যাচ্ছেন। নিজে ব্যক্তিগতভাবে মাস্ক, টয়লেট বা বাইরে গেলে হাতে গ্লাভস, নিয়মিত হাত ধোঁয়া ইত্যাদি মেনে চলছি কিন্তু পাশের শিক্ষার্থীরা যদি তা না মেনে চলেন তবে এই কারাগারে কতটা নিরাপদ? চিন্তার বিষয়, আতঙ্কের বিষয় এখানেই।
পড়াশোনা করতে সদ্য ইরানে যাওয়া এক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এমনটায় বলছিলেন। জানা গেছে, ইরানে অবস্থানরত প্রায় ১০০ জনের অধিক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা দেশটির বিভিন্ন প্রদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ধর্মীয় বিভাগে অধ্যয়নরত। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরাই এ অবস্থা নিয়ে আতঙ্কের মাঝে সময় পার করছেন।
আরেক শিক্ষার্থী জানান, দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছি। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে ওয়াটসাপে একটি গ্রুপ খোলা হয়েছে এবং গ্রুপে করোনাভাইরাস নিয়ে সচেতনতা, প্রতিদিনের আপডেট, নিজেদের সমস্যা এবং অবস্থা নিয়ে আলোচনা করে সবাই মিলে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। যা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মাঝে কিছুটা স্বস্তির আভাস দিচ্ছে।
ইরানে বাংলাদেশ দূতাবাসের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তারা করোনাভাইরাসের বিষয়ে সচেতন থাকার অনুরোধ জানিয়েছে। যে কোনো সময় তাদের সহযোগিতা পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন।
ইরানের উত্তরের শহর গোরগানে বাংলাদেশি ২০ জন শিক্ষার্থী আল মোস্তফা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। তারা অনেকেই হাজারো সমস্যায় দিন পার করছেন। অবশ্য আশার দিক হচ্ছে দেশটির মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ণরত বাংলাদেশি চিকিৎসক যারা আছেন তারা তাদের প্রাথমিক পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করছেন।
যতটা সময় যাচ্ছে জ্যামিতিকহারে ইরানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর পরিমাণ বাড়ছে। আর আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হিসেব করলে ইতালি এবং চীনের পরেই ইরানের অবস্থান। এখন পর্যন্ত দেশটিতে ৩ হাজার ১৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ৪৬৮ জনে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন