করোনা ভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ। ইতোমধ্যেই দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ, মারা গেছেন ৬ হাজারের বেশি। প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এই সংখ্যা। খুব শিগগিরই অবস্থা আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই পরিস্থিতি বিবেচনায় এক লাখ মরদেহ বহন করার জন্য বিশেষ ধরনের ব্যাগ জোগাড় করছে পেন্টাগন। খবর সিএনবিসি।
আমেরিকার শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অ্যান্টনি ফসি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, দেশে করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা এক লাখ বা তারও বেশি হতে পারে। এরপর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও একই কথা বলেছেন। এদিকে চীন থেকে জরুরি মেডিকেল সরঞ্জাম পৌঁছেছে যুক্তরাষ্ট্র্রে। খবর বিবিসি, এএফপি।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি (এফইএমএ) যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে জানিয়েছে, দেশটিতে করোনা ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এর ফলে মৃতের সংখ্যা সামাল দেয়া মুশকিল হতে পারে। বৃহস্পতিবারই দেশটিতে এক হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি দিনদিন ভয়াবহ রুপ নিচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ৯৬৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৭৫ জন। এর মধ্যে শুধু নিউইয়র্কে মারা গেছে ২ হাজার ৫৩৮ জন।
যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা নিউইয়র্কে। সেখানে এ পর্যন্ত মারা গেছে ২ হাজার ৫৩৮ জন এবং আক্রান্ত হয়েছে ৯৩ হাজার ৫৩ জন। এছাড়া নগরীতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথমবারের মতো ১৮ বছর বয়সের নিচে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরে অন্য আরও রোগ ছিল।
আক্রান্তের সংখ্যায় দেশটি ইতালি, চীন ও স্পেনকেও ছাড়িয়ে গেছে। এই ভাইরাসে সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৬ জন। এর মধ্যে ১০ হাজার ৪০৩ জন সুস্থ হয়েছে বাড়ি ফিরেছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৯ হাজার ৮৭৪ জন। যা একদিনে সর্বোচ্চ আক্রান্তের রেকর্ড।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে ২ লাখ ২৮ হাজার ৪০৪ জন আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে ২ লাখ ২২ হাজার ৯৮৩ জনের অবস্থা সাধারণ। বাকি ৫ হাজার ৪২১ জনের অবস্থা গুরুতর, যাদের অধিকাংশই আইসিউতে রয়েছেন।
ইতোমধ্যেই নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন হাসপাতাল মরদেহ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। সেখানকার হাসপাতাল ও মর্গে এই বডি ব্যাগগুলো পাঠানো হবে, যেন সুষ্ঠভাবে মরদেহগুলো বহন এবং শেষকৃত্য করা যায়।
এসব ব্যাগ সংগ্রহ করে বিতরণ করবে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। তারা ইতোমধ্যেই এই বিশেষ ব্যাগ প্রস্তুতকারক একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। সাধারণত বিদেশে নিহত মার্কিন সেনাদের মরদেহ বহনের জন্য ব্যাগ সরবরাহ করে থাকে ওই প্রতিষ্ঠানটি। তাদের কাছে এবার এক লাখ ব্যাগের চাহিদার কথা জানানো হয়েছে।
হোয়াইট হাউস আশঙ্কা করছে করোনা ভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে আড়াই লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে। এমনকি সংক্রমণ যদি খুব কম মাত্রায়ও হয়, তারপরও অন্তত এক লাখ প্রাণহানি হতে পারে। দেরিতে হলেও আসন্ন এই বিপর্যয়ের কথা স্বীকার করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, জনগণ সচেতন না হলে দেশটিতে ২০ লাখ মানুষও মারা যেতে পারেন।
উল্লেখ্য, করোনা ভাইরাসে পুরো বিশ্ব নিরব, নিস্তব্ধ। বিশ্ব গ্রাম ধারণায় যেখানে রাত-দিনের পার্থক্য করাই দুষ্কর ছিল। সেখানে সমগ্র বিশ্বই ঘরবন্দী। চারদিক শুনশান, জনশূন্য। যেন পৃথিবী আজ এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। বিশ্বাস করা কষ্টসাধ্য হলেও বিশ্বজুড়ে করোনায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৫ হাজার ৯৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা এ যাবৎ একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজার ১৬৬।
এই ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭৯ হাজার ৭৪৭ জন। এটিও একদিনে আক্রান্তের সংখ্যায় সর্বোচ্চ। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ১৫ হাজার ৫৯ জন। এর মধ্যে ২ লাখ ১২ হাজার ১৮ জন সুস্থ হয়েছে বাড়ি ফিরেছেন।
এছাড়া বিশ্বজুড়ে বর্তমানে ৭ লাখ ৪৯ হাজার ৮৫৭ জন আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৭ লাখ ১২ হাজার ১৬১ জনের অবস্থা সাধারণ। ৩৭ হাজার ৬৯৬ জনের অবস্থা গুরুতর, যাদের অধিকাংশই আইসিউতে রয়েছেন।
এদিকে করোনা ভাইরাসে বিপর্যস্ত ইতালিতে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১৩ হাজার ৯১৫ জন। স্পেনে মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ৩৪৮ জন। যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু হয়েছে ৬ হাজার ৭০ জনের। ফ্রান্সে ৫ হাজার ৩৮৭ জন। চীনে ৩ হাজার ৩১৮ জন। ইরানে ৩ হাজার ১৬০ জন। যুক্তরাজ্যে মৃত্যুর সংখ্যা ২ হাজার ৯২১ জনে দাঁড়িয়েছে।
এ রোগের কোনো উপসর্গ যেমন জ্বর, গলা ব্যথা, শুকনো কাশি, শ্বাসকষ্ট, শ্বাসকষ্টের সঙ্গে কাশি দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জনবহুল স্থানে চলাফেরার সময় মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। বাড়িঘর পরিষ্কার রাখতে হবে। বাইরে থেকে ঘরে ফিরে এবং খাবার আগে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে। খাবার ভালোভাবে সিদ্ধ করে খেতে হবে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন