দিল্লির তাবলিগ জামাতের মারকাজ নিজামুদ্দিনে জনসমাগমের অভিযোগে মামলা হয়েছে। এরপর থেকেই আত্মগোপনে থাকা তাবলিগ জামাতের শীর্ষ নেতা মাওলানা সাদ কান্দলভি। তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন বলে ভারতের পুলিশ ধারণা করছে। গত ২৮ মার্চ শেষবারের মতো জনসম্মুখে দেখা যায় তাবলিগ জামাতের এই প্রধানকে।
দিল্লির মারকাজ নিজামুদ্দিনে তাবলিগের ওই সমাবেশে অংশ নেয়াদের মধ্যে অন্তত ৪০০ জন করোনা সংক্রমিত হয়েছেন। শত বছরের পুরোনো ওই মসজিদে গত মাসে তাবলিগের একটি ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। দেশটির কর্মকর্তাদের ধারণা, এতে অন্তত ৯ হাজার মানুষ অংশ নেন; যাদের অনেকেই বিদেশি। তাবলিগ জামাতে অংশগ্রহণকারীদের সবাই করোনার ঝুঁকিতে আছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
তাবলিগ জামাতে অংশগ্রহণকারীদের অবস্থান শনাক্ত করতে রীতিমতো ঘাম ছুটেছে দিল্লি প্রশাসনের। দিল্লি পুলিশের একাধিক সূত্র দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে জানিয়েছে, ৫৬ বছর বয়সী মাওলানা সাদ সম্ভবত করোনা সংক্রমিত হয়েছেন।
থানায় মাওলানা সাদ এবং তার সহযোগী আরও ছয় মারকাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবৈধ জনসমাগমের অভিযোগ এনেছে পুলিশ। অভিযোগ আনার পর থেকে আত্মগোপনে থাকা তাবলিগ জামাতের শীর্ষ এই নেতাদের খোঁজে উত্তরপ্রদেশ এবং দিল্লিতে অভিযান পরিচালনা করছে দিল্লি পুলিশের অপরাধ দমন শাখা।
এছাড়া পুলিশ ইতোমধ্যে মাওলানা সাদের বাসায় নোটিশ পাঠিয়েছে। পরিবারের সদস্যরা দিল্লি পুলিশের নোটিশ গ্রহণ করেছেন। তারা বলেছেন, তিনি আইনজীবীর মাধ্যমে নোটিশের জবাব দেবেন। আত্মগোপনে থাকা তাবলিগ জামাতের এই নেতাকে গ্রেফতারে ১৪ টি হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করছে পুলিশ।
মাওলানা সাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে পুলিশ বলছে, তিনি সামাজিক দূরত্ব ও বড় ধরনের জনসমাগম বাতিলে সরকারের দেয়া নির্দেশনা উপেক্ষা করে ভক্তদের সমবেত হতে উৎসাহ দিয়েছেন। মারকাজ নিজামুদ্দিন ভবন খালি করতে পুলিশ দু'দফায় নোটিশ পাঠালেও তিনি তাতে কর্ণপাত করেননি।
বুধবার মাওলানা সাদের দুটি অডিও ক্লিপ প্রকাশিত হয়েছে। এতে তাকে বলতে শোনা যায়, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দিল্লিতে স্বেচ্ছা আইসোলেশনে আছেন তিনি। মারকাজের প্রকাশিত প্রথম অডিও বার্তাটিতে তিনি বলেন, মৃত্যুর জন্য মসজিদই সর্বোত্তম জায়গা। করোনাভাইরাস তার ভক্তদের কোনও ক্ষতি করতে পারবে না বলেও অডিওতে তাকে জোর দিয়ে বলতে শোনা যায়।
তবে দ্বিতীয় অডিও বার্তাটিতে ভিন্ন সুরে সরকারি নির্দেশনা মানতে ও বৃহৎ জনসমাগম এড়িয়ে চলতে ভক্তদের প্রতি আহ্বান জানাতে শোনা যায় তাকে। মাওলানা সাদ বলেন, নিঃসন্দেহে বিশ্বে যা হচ্ছে তা মানবতার অপরাধের ফল। আমাদের বাড়িতে থাকা উচিত। এটাই সৃষ্টিকর্তার ক্রোধ প্রশমিত করার একমাত্র উপায়। সকলকে চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে চলতে হবে এবং প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে হবে। আমাদের সদস্যরা যেখানেই রয়েছেন, তারা সেখানকার প্রশাসনের নির্দেশ মেনে চলবেন।
তাবলিগ জামাতের শীর্ষ এই নেতা বলেন, যেখানেই থাকুন না কেন, নিজেকে কোয়ারেন্টিনে রাখুন। এটা ইসলাম বা শরিয়তবিরোধী নয়।
গত ২৩ মার্চ এক বক্তৃতায় সামাজিক দূরত্বের সতর্কতাকে মুসলমানদের একে অপরের কাছ থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্র বলে মন্তব্য করেন মাওলানা সাদ। তিনি বলেন, আপনি মৃত্যু থেকে কোথায় পালাবেন? মৃত্যু আপনার সামনে... এটা সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমা চাওয়ার একটি উপলক্ষ।
এদিকে করোনা ভাইরাসে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৭২ জন এবং আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৫৪৩ জন।
উল্লেখ্য, করোনা ভাইরাসে পুরো বিশ্ব নিরব, নিস্তব্ধ। বিশ্ব গ্রাম ধারণায় যেখানে রাত-দিনের পার্থক্য করাই দুষ্কর ছিল। সেখানে সমগ্র বিশ্বই ঘরবন্দী। চারদিক শুনশান, জনশূন্য। যেন পৃথিবী আজ এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। বিশ্বাস করা কষ্টসাধ্য হলেও বিশ্বজুড়ে করোনায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৫ হাজার ৯৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা এ যাবৎ একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজার ১৬৬।
এই ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭৯ হাজার ৭৪৭ জন। এটিও একদিনে আক্রান্তের সংখ্যায় সর্বোচ্চ। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ১৫ হাজার ৫৯ জন। এর মধ্যে ২ লাখ ১২ হাজার ১৮ জন সুস্থ হয়েছে বাড়ি ফিরেছেন।
এছাড়া বিশ্বজুড়ে বর্তমানে ৭ লাখ ৪৯ হাজার ৮৫৭ জন আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৭ লাখ ১২ হাজার ১৬১ জনের অবস্থা সাধারণ। ৩৭ হাজার ৬৯৬ জনের অবস্থা গুরুতর, যাদের অধিকাংশই আইসিউতে রয়েছেন।
এদিকে করোনা ভাইরাসে বিপর্যস্ত ইতালিতে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১৩ হাজার ৯১৫ জন। স্পেনে মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ৩৪৮ জন। যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু হয়েছে ৬ হাজার ৭০ জনের। ফ্রান্সে ৫ হাজার ৩৮৭ জন। চীনে ৩ হাজার ৩১৮ জন। ইরানে ৩ হাজার ১৬০ জন। যুক্তরাজ্যে মৃত্যুর সংখ্যা ২ হাজার ৯২১ জনে দাঁড়িয়েছে।
এ রোগের কোনো উপসর্গ যেমন জ্বর, গলা ব্যথা, শুকনো কাশি, শ্বাসকষ্ট, শ্বাসকষ্টের সঙ্গে কাশি দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জনবহুল স্থানে চলাফেরার সময় মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। বাড়িঘর পরিষ্কার রাখতে হবে। বাইরে থেকে ঘরে ফিরে এবং খাবার আগে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে। খাবার ভালোভাবে সিদ্ধ করে খেতে হবে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন