করোনা ভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে কমপক্ষে এক থেকে দুই লাখ মানুষ মারা যেতে পারে বলে সতর্ক করেছেন দেশটির সরকারি সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অ্যান্থনি ফসি। রবিবার মার্কিন প্রশাসনকে এই সতর্কবার্তা দিয়ে তিনি বলেন, দেশটিতে আরও কয়েক মিলিয়ন মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হবে।
বর্তমানে বিশ্বে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এমন পরিস্থিতিতে দেশটির জাতীয় অ্যালার্জি এবং সংক্রামক ব্যাধি ইনস্টিটিউটের প্রধান ডা. অ্যান্থনি ফসি এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন। দেশটিতে রবিবার পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ২৩ হাজার ৮২৮ এবং মারা গেছেন ২ হাজার ২৩১ জন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের সঙ্গে আলাপকালে অ্যান্থনি ফসি বলেছেন, আমি সতর্ক করে বলতে চাই, এই মহামারিতে যুক্তরাষ্ট্রে এক লাখ থেকে দুই লাখ মানুষ মারা যাবে। আমরা মিলিয়ন মিলিয়ন রোগী পেতে যাচ্ছি। তবে আমি এই হিসাব-নিকেশে আটকে থাকতে চাই না। কারণ, মহামারীটি এখন চলমান। এটি সত্যও হতে পারে আবার ভুলও প্রমাণিত হতে পারে।
করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে দেশটিতে নেয়া ১৫ দিনের বিধি-নিষেধ শেষে যেসব অঞ্চলে করোনার প্রকোপ বেশি দেখা দেয়নি সেসব অঞ্চলে শিথিলতা আরোপের চিন্তা-ভাবনা করছে ট্রাম্প প্রশাসন। মার্কিন সরকারের এমন পদক্ষেপের ব্যাপারে জানতে চাইলে ফসি বলেন, কম আক্রান্ত অঞ্চলগুলোতে যদি পরীক্ষা বৃদ্ধি করা হয়, তাহলেই কেবলমাত্র তিনি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো পদক্ষেপকে সমর্থন করবেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গঠিত করোনা ভাইরাস টাস্কফোর্সের অন্যতম সদস্য দেশটির জাতীয় অ্যালার্জি এবং সংক্রামক ব্যাধি ইনস্টিটিউটের এই প্রধান।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাসের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে নিউইয়র্ক শহর। সেখানে এখন পর্যন্ত অন্তত ৫৯ হাজার ৬৪৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ৯৬৫ জন। তবে করোনার পরবর্তী কেন্দ্র হিসেবে ড্রেট্রোয়েট, শিকাগো, লস অ্যাঞ্জেলস, নিউ ওরলিনস ও বোস্টন শহর ঝুঁকিতে রয়েছে।
হোয়াইট হাউসের করোনা ভাইরাস রেসপন্স কো-অর্ডিনেটর চিকিৎসক দেবোরাহ বার্ক্স রবিবার এনবিসি নিউজের মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বলেছেন, এই মহামারি থেকে কোনও অঞ্চলই রেহাই পাবে না।
উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরোসের প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলেছে। একইসঙ্গে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি। করোনায় আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৯৫৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে ৩ হাজার ৯৫ জন।
এই ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ২১ হাজার ৪১২ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ৫১ হাজার ৪ জন সুস্থ হয়েছে বাড়ি ফিরেছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫৮ হাজার ২৮৫ জন।
এছাড়া বিশ্বজুড়ে বর্তমানে ৫ লাখ ৩৬ হাজার ৪৫২ জন আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯ হাজার ৬৬৩ জনের অবস্থা সাধারণ। বাকি ২৬ হাজার ৭৮৯ জনের অবস্থা গুরুতর, যাদের অধিকাংশই আইসিউতে রয়েছেন।
করোনা ভাইরাসে সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত ইতালি। ইতালিতে মৃতের সংখ্যা দিন দিন বাড়েছে। এখন পর্যন্ত সেখানে মারা গেছেন ১০ হাজার ৭৭৯ জন।ইতোমধ্যে করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি স্থান চীনকেও পেছনে ফেলেছে স্পেন। সেখানে মৃতের সংখ্যা ৬ হাজার ৮০৩ জন।
এ রোগের কোনো উপসর্গ যেমন জ্বর, গলা ব্যথা, শুকনো কাশি, শ্বাসকষ্ট, শ্বাসকষ্টের সঙ্গে কাশি দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জনবহুল স্থানে চলাফেরার সময় মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। বাড়িঘর পরিষ্কার রাখতে হবে। বাইরে থেকে ঘরে ফিরে এবং খাবার আগে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে। খাবার ভালোভাবে সিদ্ধ করে খেতে হবে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন