করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সহায়তা হিসেবে ৮০ কোটি মার্কিন ডলার দেবে মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গুগল। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও স্বাস্থ্যসেবা খাতের কর্মীদের জন্য এই বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। তাদের সহায়তায় এসব অর্থের বেশির ভাগই বিনা মূল্যের বিজ্ঞাপন দেখানো বাবদ দেওয়া হবে।
শুক্রবার (২৭ মার্চ) গুগলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুন্দর পিচাই এক ব্লগ পোস্টে জানিয়েছেন, গুগল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও সরকারি সংস্থাগুলোকে বিজ্ঞাপন মঞ্জুরি বাবদ ২৫ কোটি মার্কিন ডলার দেবে।
এর বাইরেও গুগল আরো ৩৪ কোটি মার্কিন ডলার দেবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের বিভিন্ন ব্যবসা অ্যাকাউন্টকে দেবে এই টাকা। এর বাইরে ২ কোটি মার্কিন ডলার ত্রাণ তহবিল এবং ছোট ব্যবসায়ের সহায়তার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।
গুগলের মতো একাধিক প্রযুক্তি সংস্থা তাদের বিস্তৃত আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সম্পদকে বিশ্বব্যাপী মহামারী মোকাবিলার জন্য কাজে লাগাচ্ছে।
গতকাল অ্যাপল একটি ওয়েবসাইট ও আইওএস অ্যাপ উন্মুক্ত করেছে, যা ব্যবহারকারীদের করোনা ভাইরাসের উপসর্গ পরীক্ষা করার সুযোগ দেবে। এর আগে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে এক কোটি মাস্ক বরাদ্দ করার কথা জানায় অ্যাপল।
গুগলের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জন্য বিনা মূল্যে বিজ্ঞাপন দেওয়ার সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, যাতে মানুষের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছাতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে এখনো ফেসবুকে কোনো বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়নি। তবে করোনা ভাইরাস ইনফরমেশন সেন্টার স্থাপন ও হোয়াটসঅ্যাপে হেলথ অ্যালার্ট অ্যাকাউন্ট চালু করেছে।
উল্লেখ্য, চীন থেকে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে পুরো বিশ্বে। সেখানে ভাইরাসটি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসলেও অন্যান্য দেশে বাড়ছে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বজুড়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৩ হাজার ২৭২ জন। এ নিয়ে করোনা ভাইরাসে বিশ্বে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২৭ হাজার ৩৪০ জনে। এর মধ্যে চীনে মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ২৯২। চীনের বাইরে মারা গেছে ২৪ হাজার ৪৮ জন।
বিশ্বজুড়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৪ হাজার ৪৮৬ জনসহ আক্রান্ত হয়েছে ৫ লাখ ৯৬ হাজার ৭২৩ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৩৩৫ জন সুস্থ হয়েছে বাড়ি ফিরেছেন। চীনে আক্রান্তের সংখ্যা ৮১ হাজার ৩৪০ জন। এছাড়া চীনের বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা ৫ লাখ ১৫ হাজার ৩৮৩ জন।
বিশ্বজুড়ে বর্তমানে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ১৬ জন আক্রান্ত রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪ লাখ ১২ হাজার ৪৯৩ জনের অবস্থা সাধারণ। বাকি ২৩ হাজার ৫২৩ জনের অবস্থা গুরুতর, যাদের অধিকাংশই আইসিউতে রয়েছেন।
এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান ড. টেড্রস আধানম গেব্রেয়াসুস অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, সরকারগুলো এই বৈশ্বিক মহামারি ঠেকাতে যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তিনি সরকারগুলোকে নিজ নিজ দেশের করোনাভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা আরও বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন।
করোনা ভাইরাস পৃথিবীজুড়ে অদ্ভুত এক আঁধারের ছায়া নিয়ে এসেছে। চারিদিক নিরব, নিস্তব্ধ। কেউ কারও সাথে মিশছে না বা চাইছে না। যেন সবাই সবাইকে এড়িয়ে যেতে পারলেই বাঁচে। ‘বিশ্ব গ্রাম’ ধারণায় মানুষ অনেক বছর ধরেই একাকি জীবনের অভ্যস্ত হয়ে উঠছিল। কিন্তু এতটা একাকি হয়তো তারা কখনোই হয়নি। যে চাইলেও তারা একে অন্যের সাথে দেখা করতে পারবে না। সবাই যেন এক যুদ্ধ কেন্দ্রীক জরুরি অবস্থায় রয়েছে।
এক করোনা ভাইরাস পুরো বিশ্বকেই যেন স্তব্ধ করে দিয়েছে। অধিকাংশ দেশেই রাস্তা-ঘাট, অফিস-আদালত, শপিংমল-মার্কেট, রেস্তোরাঁ-বার ফাঁকা। যেন সব ভূতুড়ে নগরী, যুদ্ধকালীন জরুরি অবস্থা চলছে। সবার মধ্যে ভয়, আতঙ্ক আর আশঙ্কা।
উহান, চীনের শিল্পোন্নত এই শহর থেকেই প্রথম করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে ভাইরাসটি প্রায় নিয়ন্ত্রণে চলে আসলেও চীনের বাইরে ব্যাপক হারে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা।
চীনে উদ্ভূত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১৯৯টি দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে।
এ রোগের কোনো উপসর্গ যেমন জ্বর, গলা ব্যথা, শুকনো কাশি, শ্বাসকষ্ট, শ্বাসকষ্টের সঙ্গে কাশি দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জনবহুল স্থানে চলাফেরার সময় মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। বাড়িঘর পরিষ্কার রাখতে হবে। বাইরে থেকে ঘরে ফিরে এবং খাবার আগে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে। খাবার ভালোভাবে সিদ্ধ করে খেতে হবে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন