ইউরোপে ইতালির পরই স্পেনে করোনাভাইরাস ভয়াবহ রুপ ধারণ করেছে। ইতালিতে যেমন একজন রোগীর ব্যাপারে সতর্ক না হওয়ার একটি ভুলেই করোনার মহামারি দেখা দেয় তেমিন স্পেনও ভুল করেছে শুরুতেই সতর্ক না হয়ে। দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৭,১৪৭ জন। সুস্থ হয়েছেন ১১০৭ জন। আর মারা গেছেন ৭৬৭ জন।
স্পেনের বাংলাদেশ দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি চিকিৎসক তাহসিনা আফরিন ফেসবুকে একটি পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছেন কেন স্পেনে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পেল, কেন বাড়ল মৃত্যুর সংখ্যা।
তার স্ট্যাটাসে তিনি বলেছেন, স্পেন হল ইউরোপের উষ্ণতর, আলোকোজ্জ্বল দেশ। রোদে খটখট করে সারা বছর। মরুভূমির মত ভূপ্রকৃতি। লোকজনের আয়ুস্কাল দীর্ঘ। ৯০ শতাংশ দেশবাসী সুস্থ খায়, সুস্থ চলে। সুস্থ থাকে। এ সময়ে করোনা নিয়ে মাতামাতি করতে কারোই ভালো লাগছিল না। করোনা যখন ইতালিতে বিষবাষ্প ছাড়ছে তখনো স্পেন ছিল নির্বিকার। কিন্তু এখন মৃত্যুর মিছিল যখন প্রতিদিন লম্বা হচ্ছে হাত কামড়াচ্ছে সরকার। ভাবছে আর একটা সপ্তাহ আগে যদি সবাইকে ঘরে ঢুকাতে পারতাম। যেমন, চীন রুখেছে, সাউথ কোরিয়া, সিংগাপুর রুখেছে।
পাঠকদের জন্য স্পেনের বাংলাদেশ দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি চিকিৎসক তাহসিনা আফরিনের পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো:
“করোনা না গরম মানে, না সুস্থ শরির মানে, না নারী শিশু মানে!! করোনা কোন করুনা করছে না, বিদ্যুৎ বেগে ছড়াচ্ছে, যাকে বাগে পাচ্ছে আইসিইউ অবদি টেনে নিয়ে মেরে ফেলছে!”
‘... আমাদের হাতে তিন মাসের লম্বা সময় ছিল। যা আমরা হেলায় হারাচ্ছি, এবং সে সময়ে তাসের ঘরের মত থুবড়ে পড়বে স্বাভাবিক প্রতিরোধ টুকুও। বিপদের আন্দাজাও করতে পারছি না, এত ভয়াবহ হবে সেটা!!
স্পেইন হল ইউরোপের উষ্ণতর, আলোকোজ্জ্বল দেশ। রোদে খটখট সারা বছর। মরুভূমির মত ভূপ্রকৃতি। লোকজনের আয়ুস্কাল দীর্ঘ। জ্যাপানিদের পরেই স্পেইনের গড় আয়ু। ৯০% দেশবাসি সুস্থ খায়, সুস্থ চলে। সুস্থ থাকে।
সামনেই সামার। পর্যটন নির্ভর সুন্দর দেশটির রুটি রুজির অন্যতম সময়। এ সময়ে করোনা নিয়ে মাতামাতি করতে কারোই ভালো লাগছিল না।
করোনা যখন ইতালিতে বিষবাষ্প ছাড়ছে তখনো স্পেইন ছিল নির্বিকার!! অথচ করোনা হাটিহাটি পা পা করে সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই হানা দিলো রাজধানি মাদ্রিদে!!
কর্তারা তখনো শাক দিয়ে মাছ ঢাকছেন!! সেরে যাবে! চলে যাবে! ছুহ ছুহ করছেন!
এখন মরার পর কেউ ছুঁতে পারছে না।। দেখতে পারছে না। মরার বুকে আছরে পরে কাঁদতে পারছে না।। জানাজায় লোক হচ্ছে না, ফিউনারেল হচ্ছে না। দাফন হচ্ছে না। সরাসরি ক্রিমেশনে পুড়িয়ে ফেলছে!!
সেই স্পেইন থেকে বলছি।
আজ পাঁচদিন হয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। রাস্তায় সেনা ও পুলিশ ঘুরছে। আপনি কেবল তিন কাজের জন্য বের হতে পারবেন!!
খাদ্য কেনা বা
ওষুধ কেনা বা
গ্রেফতার হবার শখ হওয়া!
জরিমানা গুনবেন ২০০ ইউরো, যদি কোয়ারাইন্টাইনের নিয়ম না মানেন। খোলা আছে শুধু ব্যাংক, মুদি দোকান আর ফার্মেসি। বাকিরা সিল গালা তালা।
সকল সরকারি তো বটেই, বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক নেয়া হয়েছে সরকারের আওতায়। সব নিয়ন্ত্রণ সরকারের। সকল ইন্টার্ন এর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। যে কোনো ডিসিপ্লিনের চিকিৎসক হলেই প্রস্তুত করা হচ্ছে করোনা সৈনিক হিসেবে!! শেষ বর্ষের ছাত্র ছাত্রীদের যুক্ত করা হচ্ছে চিকিৎসক কাতারে! এরপর যুদ্ধ চলছে। হাসপাতালে হাসপাতালে। তবুও কমছে না মৃত্যু মিছিল।
হাত কামড়াচ্ছে সরকার, দূয়ো দিচ্ছে একে অন্যকে!! আহা! আর একটা সপ্তাহ! আর দিন দশেক আগেও যদি সবাইকে খেদিয়ে ঘরে ঢুকাতাম, তো এই দাবানল রুখে দেয়া যেত!!
যেমন, চায়না রুখেছে, সাউথ কোরিয়া, সিংগাপুর রুখেছে।
বাংলাদেশ ভালো থাকুক, সেটা কে না চায়! আমার সর্বস্ব সেখানেই। মরার পরের ঠিকানা সেটা। দেশ থেকে আমার কথা ভেবে ফোন আসলে অসহায় লাগে! আমি ভাবছি তাদের নিয়ে, তারা ভাবে আমাকে নিয়ে!!”
Dr. Tahsina Afrin
CMC 46, 2003/2004
Second Secretary
Embassy of Bangladesh
Madrid, Spain
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন