উগ্রহিন্দুত্ববাদী তাণ্ডব ছুঁতে পারেনি দিল্লির যে এলাকা
সাংবাদিকদের সঙ্গে নিজেদের সম্প্রীতিপূর্ণ এলাকা নিয়ে কথা বলছেন এনডিটিভির সাংবাদিকরা।
ভারতের মুসলিমবিদ্বেষী নাগরিকত্ব আইনবিরোধী বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত ৩৪ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস।
দেশটির রাজধানী নয়াদিল্লিতে তিন দিন ধরে চলা ওই সংঘর্ষে বেছে বেছে মুসলিমদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
হিন্দুত্ববাদীদের তাণ্ডবে সৃষ্ট সহিংসতা থেকে রেহাই পায়নি মসজিদ ও ধর্মগ্রন্থ কোরআনও।
আনন্দবাজার জানিয়েছে, গত রোববার উত্তর-পূর্ব দিল্লির ফরাবাদ ও মৌজপুর নামের পাশাপাশি দুই এলাকা হিন্দুত্ববাদীদের এ তাণ্ডব শুরু হয়। সেখানে থেকে তা ছড়িয়ে পড়ে দিল্লির অন্যান্য এলাকাতেও।
সিএএ-বিরোধীদের ওপর এর পক্ষের দুবৃর্ত্তরা ঝাঁপিয়ে পড়ে লুটপাট, ভাঙচুর ও জ্বালাও-পোড়াও চালায়। উগ্রহিন্দুত্ববাদীদের থেকে রেহাই পায়নি অশীতিপর বৃদ্ধাও।
মঙ্গলবার সংঘর্ষ চলকালে নয়াদিল্লির একটি প্রাচীন মসজিদে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে। ‘জয় শ্রী রাম’ এবং ‘হিন্দুওকা হিন্দুস্তান’ স্লোগান দিয়ে একদল সশস্ত্র হিন্দুত্ববাদী এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটায়।
ওই দুর্বৃত্তরা মসজিদের মিনার থেকে মাইক ফেলে দিয়ে সেখানে ভগবান হনুমানের ছবি সম্বলিত পতাকা লাগায় বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আলজাজিরা।
এমন পরিস্থিতিতেও দিল্লিতে এমন এক এলাকার সন্ধান পাওয়া গেছে যেখানে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতি বজায় রেখেছেন। চলমান সহিংসতার কালোছায়া পড়েনি সেই এলাকায়।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, জনশূন্য ফরাবাদ ও মৌজপুর এলাকার মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত ওই এলাকাটি। সহিংসতার খবর সংগ্রহ করতে বুধবার সেখানে সাংবাদিকরা দেখেন, একটি ব্যারিকেডের পেছনে কিছু মানুষকে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। সাংবাদিকরা ব্যারিকেড পেরিয়ে ভেতরে ঢুকতে গেলে প্রথমে বাধাপ্রাপ্ত হন। পরিচয় পাওয়ার পর তাদের ভেতরে ঢুকতে দেন তারা। ভেতরে প্রবেশ করে পরিবেশ দেখে অনেকটাই অবাক হয়ে যান সাংবাদিকরা।ভাঙচুর, আগুনের পুড়ে যাওয়ার মতো কোনো দৃশ্য সেখানে নেই।
সাংবাদিকদের এলাকাবাসী জানান, দিল্লির সহিংসতা এই এলাকায় প্রবেশ করতে পারেনি। এখানের হিন্দু ও মুসলমান বাসিন্দারা বেশ সম্প্রীতি বজায় রেখে বসবাস করছেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী সিরাজ আহমেদ এনডিটিভিকে জানান, ‘এই এলাকা থেকে জাফরাবাদের দিকে মুসলমানদের বসবাস আর উল্টোদিকে অর্থাৎ মৌজপুরের দিকে হিন্দুদের বসবাস। আমরা সবাই সহাবস্থান বসবাস করে আসছি। এখানে কোনো দাঙ্গা হয় না’।
গার্মেন্টস ব্যবসা করেন শেহজাদ। তিনি বলেন, সময়টা এতো খারাপ যাচ্ছে যে শান্তি নিশ্চিত করতে পুরো রাত জাগতে হয় আমাদের।
তিনি বলেন, ‘এনআরসি বিষয়টি আসার পর থেকে এমন পরিস্থিতিতে পড়েছে দিল্লি। তাই কোনো রকম সহিংসতা এড়াতে হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ই পরস্পরকে পাহারা দেয় এখানে।’
শেহজাদ যোগ করেন, ‘কয়েক মাস ধরেই এখানে প্রতিবাদ হচ্ছে কিন্তু কখনোই সহিংসতা হয়নি। হঠাৎ কপিল মিশ্র এসে উসকানি দেয়ায় বিষয়টি তাণ্ডবে রূপ নিয়েছে।’
শেহজাদের সঙ্গে একমত পোষণ করেন স্থানীয় বাসিন্দা মুকেশ কুমারও।
তিনি বলেন, আমরা এখানে সবাই ভ্রাতৃত্ববোধ নিয়ে বসবাস করে আসছি। যুগ যুগ ধরেই এটা চলছে। এ ধরনের সহিংসতা আমার জন্মের আগেও হয়নি বলে শুনেছি।’
সাংবাদিকরা মহল্লাটি ঘুরে দেখেন, সেখানে একটি মন্দির, মসজিদ ও একটি গুরুদুয়ারা রয়েছে।
এ বিষয়ে গার্মেন্টস ব্যবসায়ী শেহজাদ বলেন, ‘আমাদের এই এলাকায় এই তিনটি ধর্মীয় উপাসনালয় রয়েছে। আমরা যে যার মতো ধর্মীয় প্রার্থনা করি। এখানে ঈদ, দিওয়ালি, গুরু পরব সবই পালিত হয় কিন্তু আমাদের মনে কখনোই সাম্প্রদায়িক মনোভাব তৈরি হয়নি’।
গত চারদিন ধরে বহিরাগতরা তাণ্ডব চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন স্থানীয়দের সবাই।
তারা বলেন, এজন্য সংঘবদ্ধ হামলাকারীদের প্রবেশ ঠেকাতে ব্যারিকেড দেয়া গেট বসিয়েছি আমরা।রাত জেগে পাহারা দিই। যেন আমাদের এই মহল্লায় কোনো রকম উগ্রবাদী তাণ্ডব না চলে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন