দিল্লিতে সাম্প্রদায়িক হামলায় অনেক মানুষ নিখোঁজ। এর মধ্যে রয়েছে অল্পবয়সী ছেলে-মেয়েরাও। তেমন এক কিশোরীকে খুঁজে বেড়াচ্ছে তার পরিবার।
দ্য ওয়াল জানায়, দিল্লির খাজুরি খাস এলাকায় খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া ওই কিশোরীর। সোমবার পরীক্ষা দিতে স্কুলে গিয়েছিল সে। এর মধ্যে সহিংসতা শুরু হলে তার আর খোঁজ পাচ্ছে না পরিবার।
বিকেলে স্কুল থেকে ফিরিয়ে আনতে গিয়ে তার বাবা দেখেন, রাস্তায় আগুন জ্বলছে। স্কুলের সামনেই পোড়ানো হচ্ছে গাড়ি। লাঠি নিয়ে তেড়ে যাচ্ছে উগ্রবাদীরা। সুনসান স্কুলে কোনো নিরাপত্তারক্ষীরা নেই। শিক্ষিকা, ছাত্রীদেরও দেখা নেই। সোমবার থেকেই নিখোঁজ ১৩ বছরের মেয়েটি। হন্যে হয়ে তাকে খুঁজে চলেছেন তার বাবা।
নিখোঁজ মেয়েটির বাবা বলেন, “বিকেল ৫টা ২০ মিনিট নাগাদ স্কুল থেকে মেয়েকে আনতে গিয়ে দেখি তুমুল সহিংসতা চলছে। কিন্তু মেয়ে কোথাও নেই। আমিও বিক্ষোভের মাঝে পড়ে গিয়েছিলাম। কোনো রকমে সেখান থেকে বেরিয়ে স্কুলে ঢুকে পড়ি। কিন্তু মেয়ের খোঁজ পাইনি।
জানা যায়, মেয়েটির পরিবার থাকে সোনিয়া বিহার কলোনিতে। সেখান থেকে স্কুলের দূরত্ব প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার। স্কুলে একাই যেত মেয়েটি।
তার বাবার দাবি, বিক্ষোভের মাঝে পড়ে হয়তো স্কুলেই যেতে পারেনি সে। কেউ কি অপহরণ করল? সে উত্তরও দিতে পারেনি পুলিশ। তল্লাশি চলছে বলে জানানো হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।
সোমবার থেকে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে। সাম্প্রদায়িক হামলায় এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৪ জন। আহতের সংখ্যা দুই শতাধিক, যাদের মধ্যে অন্তত ৭০ জন গুলিবিদ্ধ।
পুলিশ জানায় মৌজপুরের বিজয় পার্কের বাসিন্দা এক যুবকও নিখোঁজ সোমবার থেকে। পরিবারের অভিযোগ, বাকিদের মতোই খুন করা হতে পারে যুবককে। অজ্ঞাতপরিচয় আততায়ীদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে পরিবার।
গত কয়েকদিন ধরে দিল্লির রাস্তায় পেট্রল-বোমা ছুড়ে, গাড়ি জ্বালিয়ে তাণ্ডব চালায় উগ্রবাদী হিন্দুত্ববাদীরা। মুস্তাফাবাদের অনেক জায়গায় অ্যাসিড হামলার খবর মিলেছে। অনেকের চোখ-মুখ, গোটা শরীর ঝলসে দেওয়া হয়েছে অ্যাসিডে। দিল্লির তেগ বাহাদুর হাসপাতালে অ্যাসিড ক্ষত নিয়ে ভর্তি হয়েছেন অনেকে। অ্যাসিড হামলায় চারজন হারিয়েছেন দৃষ্টিশক্তি। জ্বালাপোড়া ক্ষত নিয়ে রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে।
বুধবার রাতে নতুন করে নিহতের খবর না এলেও উত্তর-পূর্ব দিল্লি থমথমে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। তবে সেখানে একটি টায়ার কারখানায় উগ্রবাদীরা আগুন ধরিয়ে দেয় বলে জানা গেছে। আগুন ধরানো হয় বেশ কিছু গাড়িতেও।
জাফরাবাদ, মৌজপুর-বাবারপুর, গোকুলপুরি, শিব বিহার ও জোহরি এনক্লেভ মেট্রো স্টেশনের গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সেখানে কোনো ট্রেন দাঁড়াবে না। ওই এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে। দিল্লির আরও ১০ জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, ‘হিন্দুয়োঁ কা হিন্দুস্তান’, ‘জয় শ্রীরাম’- এসব স্লোগান দিয়ে সংখ্যালঘু মুসলিমদের বাড়িঘর, দোকানপাট ও মসজিদে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
বিবিসি বাংলা জানায়, পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক আছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দাঙ্গাকারীদের সঙ্গে পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে দেখা যায়। কোথাও আবার নিজ হাতে সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙেছে পুলিশ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন