তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়িব এরদোগানের সমালোচনা করে কঠিন বিপাকে পড়েছেন সৌদি আরবের বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার ও জনপ্রিয় লেখক ড. আয়েজ আল কারনি। এতে তার ওপর বেজায় চটেছেন ভারতের বুদ্ধিজীবী আলেম আওলাদে রাসুল সালমান নদভীও।
সোমবার সালমান নদভী এক ভিডিওবার্তায় আয়েজ আল কারনির এক হাত নিয়ে তার কঠোর বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, আমি জেনেছি, ড. আয়েজ আল কারনি স্বীকারোক্তি দিয়েছেন যে, তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়িব এরদোগানের ব্যাপারে তিনি ধোঁকা খেয়েছিলেন এবং বিভ্রান্তির শিকার হয়েছিলেন। এরদোগান সম্পর্কে তার যে সুধারণা ছিল- তা ছিল ভুল। কিন্তু আমি মনে করি তিনি বাদশাহ সালমান ও ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমানের ওপর প্রতিনিয়ত নতুন করে ধোঁকা খেয়ে যাচ্ছেন।
ড. আয়েজ আল কারনিকে ‘দরবারি’ আলেম আখ্যায়িত করে সালমান নদভী আরও বলেন, স্বৈরাচারীদের পালিত এসব আলেমের দাবি অগ্রহণযোগ্য। এরদোগানের বিপক্ষে অযৌক্তিক মন্তব্য করে মুসলিম উম্মাহর নিকট তিনি উপহাসের পাত্রে রূপান্তরিত হয়েছেন।
উপমহাদেশের সর্বসাধারণের পক্ষ থেকে সালমান নদভী বলেন, মুসলিম বিশ্বের প্রভাবশালী এই নেতার বিরুদ্ধে মিথ্যারোপ করে ইসলামি বিশ্বে তিনি ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয়েছেন। এরদোগানের মর্যাদা অবশ্যই মুহাম্মাদ বিন সালমানের চেয়ে শত শত গুন বেশি। মুহাম্মাদ বিন সালমান এরদোগানের জুতার সমানও না। একথা ঠিক, এরদোগান শরঈ কোন আলেম নয়; তবে তিনি একজন আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন আন্তর্জাতিক ইসলামি নেতা, যিনি মুসলমানদের সম্মান করতে জানেন। সিরিয়াসহ একাধিক রাষ্ট্রের মজলুম মুসলমানদের তিনি তুরস্কে আশ্রয় দিয়েছেন। অথচ ইহুদি- খৃষ্টানদের মদদপুষ্ট সৌদি আরব এসব নির্যাতিত ও অত্যাচারিত মুসলমানদের মুখের ওপর তাদের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। নিপীড়িত মুসলমান ভাইবোনের অসহায়ত্ব তাদের হৃদয়কে ছুঁতে পারেনি।
সৌদি শাসকশ্রেণীর প্রতি ড. আয়েজ আল কারনি যে ধোঁকা খেয়েছেন- এটা নিজের ওপর নিজে ধোঁকা খাওয়ার শামিল বলেও মন্তব্য করেন সালমান নদভী। তিনি মনে করেন, সৌদি এই আলেম ইসলামের সঙ্গেও ধোঁকাবাজি করছেন। ‘তারা আল্লাহকে ধোঁকা দিতে গিয়ে নিজেরাই সেই ধোঁকায় পতিত হয়েছে’ পবিত্র কুরআনের এই উদাহরণ এসব মানুষের জন্যই বলে তার দাবি।
সালমান নদভী বলেন, তার লিখিত কিতাবাদী কিছু কিছু অঞ্চলে সমাদৃত থাকলেও এরপর থেকে সবাই তাকে এবং তার কিতাবাদী প্রত্যাখ্যান করবে। এর মাধ্যমে মুসলিম যুবক ও মুসলিম উম্মাহর মনে তার জন্য আর সম্মানবোধ থাকলো না। নিজের আত্মপরিচয় নিয়ে ভাববার সময় এসেছে তার।
সালমান নদভী বলেন, সৌদি আরব ও ইসরায়েল, সৌদি আরব ও আমেরিকার মধ্যকার সম্পর্কের ব্যাপারে সবাই অবগত। বাদশাহ সালমান, মুহাম্মাদ বিন সালমানের সঙ্গে ট্রাম্প এবং নেতানিয়াহুর কি সম্পর্ক- এব্যাপারেও মুসলিম উম্মাহ বেখবর নয়। সৌদি আরব যে ইহুদি- খৃষ্টানদের বিক্রয় পণ্য ও খেলনার পুতুল- সেব্যাপারেও মুসলমানরা খবর রাখে। সবশেষ ফিলিস্তিনিদের ধোঁকা দিয়ে ট্রাম্প ও নেতানিয়াহু কথিত ‘ডিল অব দ্যা সেঞ্চুরি’ ঘোষণা করেছে- এতে সৌদি আরবের অবস্থান সম্পর্কেও মুসলমানরা জানে।
সৌদি শাসকশ্রেণীকে শয়তানের অনুসারী আখ্যা দেন সালমান নদভী। ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুকে প্রধান দুই শয়তান উপাধি দিয়েছেন তিনি। আর এসব শয়তানদের খুশি করতে ড. আয়েজ আল কারনি এসব মন্তব্য করেছেন বলেও তিনি দাবি করেন।
সালমান নদভী আয়েজ আল কারনিকে সত্যের দিকে ফিরে আসার আহবান জানিয়েছেন। বলেছেন, আগে তার যা কিছু অর্জন ছিল- তা ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। তার উচিত, সত্য ও হকের দিকে ফিরে আসা। আল্লাহ তাকে হেদায়েত দান করুন! আমরাও আশা করি মহান আল্লাহ তাকে সিরাতে মুস্তাকিমের দিকে প্রত্যাবর্তন করবেন।
আরবিতে দেয়া সালমান নদভীর এক ভিডিও বিবৃতি থেকে অনুবাদ করেছেন বেলায়েত হুসাইন
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন