ইহুদিবাদী ইসরায়েলি সেনার হাতে নিষ্ঠুরভাবে নিহত হওয়া পশ্চিম খান ইউনিসের ২৭ বছর বয়সী মুহাম্মাদ আল-নাঈমের বাড়িতে পিতা, স্ত্রী ও পুত্রের শোকে কাতর তার স্বজনরা। শেষবারের মতো নিজ ছেলেকে একটু দেখার জন্য ও বাড়ির কাছে দাফন করার জন্য ইসরায়েলি বাহিনীর কাছে ছেলের লাশ ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করেছে নিহত মুহাম্মাদের মা।
নিহত মুহাম্মাদের মা মিরওয়াত বলেন, আমার ছেলের কোনও তুলনা নেই। সে খুব বিনয়ী, ধর্মভীরু ও নৈতিক ছিলো। আমি তার হত্যা মেনে নিতে পারছিনা।
তিনি আরো বলেন, এরা কতো নির্দয়ভাবে আমার ছেলেকে হত্যা করেছে! তারা যা করেছে তা মানবতার বিরুদ্ধে একটি বড় অপরাধ। আমার এখন একটাই চাওয়া যে, তারা আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিক। যেন শেষ বারের মতো তাকে দেখার ও বিদায় দেওয়ার সুযোগ হয়।
মুহাম্মাদের ২৫ বছর বয়সী স্ত্রী হীবা যিনি কান্নার জন্য বারবার বাকরুদ্ধ হয়ে যাচ্ছিলেন তিনি বলেন, মুহাম্মাদকে হত্যা করার ভিডিওটি আমি দেখিনি ও দেখবোওনা। কারণ এটি সহ্য করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। মুহাম্মদ খুব দয়ালু এবং খুব লক্ষণীয় ব্যক্তি ছিলেন। তার সাথে এমনটি ঘটতে পারে তা আমি কল্পনাও করতে পারি না। আমরা দেড় বছর আগে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি। আমার প্রতি তাঁর আচরণ ছিলো অত্যন্ত অত্যন্ত কোমল,মধুর এবং মিষ্টি। আমাদের এক বছরেরও কম বয়সী বাচ্চাটার কী অপরাধ যে তাকে এখন বাবার আদর সোহাগ ছাড়াই বড় হতে হবে!
হীবা জানান, মুহাম্মদ একজন প্রকৌশলী ছিলেন। পরিবারের জীবিকা নির্বাহের জন্য তিনি বিভিন্ন সংস্থায় কাজ করতেন।
উল্লেখ্য, গত রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) গাজার খান ইউনিসে এক ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যার পর মৃতদেহ বুলডোজার দিয়ে পিষে দিয়েছে ইহুদিবাদী অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েলি বাহিনী।
ওদিন সকালে ফিলিস্তিনের গাজা-ইসরাইল সীমান্তে ফিলিস্তিনের কয়েক জন নাগরিকের ওপর গুলি করলে ওই ব্যক্তি নিহত হন। এই ঘটনায় আরও কয়েক জন আহত হন।
পরে ওই ফিলিস্তিনির লাশ বুলডোজার দিয়ে পিষে দিতে দেখা যায় এক ভিডিওতে। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন ফিলিস্তিনের নাগরিক নিহত ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করতে যায়। কিন্তু হঠাৎ করেই ইসরায়েলি বাহিনী বুলডোজার নিয়ে গাজা উপত্যকার ভেতরে ঢুকে পড়ে। এরপর নিহতের মরদেহ বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিতে থাকে।
ফিলিস্তিনিরা লাশ উদ্ধার করার চেষ্টা করলেও পারেনি। তবে আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করেন তারা। আর লাশটি থেতলে দিয়ে সেটি বুলডোজারে তুলে নিয়ে চলে যায় ইসরায়েলি বাহিনী। এসময় কয়েকজন ফিলিস্তিনিকে ঢিল ছুড়তে দেখা যায়।
ফিলিস্তিনের ইসলামিক জিহাদ (পিআইজে) নামক একটি দল বলছে, মৃত ব্যক্তির নাম মুহাম্মদ আলী আল-নাঈম। তিনি এ দলের একজন সদস্য ছিলেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ওই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানিয়েছে, তারা একজন ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করেছে যাকে সীমান্ত বেষ্টনীর কাছে বোমা রেখেছিল বলে সন্দেহ করা হয়েছিল।
সূত্র: আল-জাজিরা
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন