ইদলিব পরিস্থিতি নিয়ে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে তুরস্ক-মস্কো আলোচনা। এমন পরিস্থিতিতে সিরিয়ায় অভিযান চালানোর হুমকি দিয়েছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোয়ান। তবে সিরিয়ার বৈধ সরকারের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হলে পরিণতি চরম ভয়াবহ বলে পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছে রাশিয়া।
ইদলিব পরিস্থিতি নিয়ে গত দুই দিন (১৭-১৮ ফেব্রুয়ারি) ধরে আলোচনায় বসে দুই দেশ। তাবে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই আলোচনা শেষ হওয়া ও দুই দেশে পারস্পরিক হুমকি পাল্টা হুমকির কারণে আতঙ্কিত সিরিয়ার ইদলিবের সাধারণ মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে জীবন বাঁচাতে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে সাধারণ মানুষ।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং রিসেপ তাইপ এরদোয়ান ইদলিবের বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নেবেন, তা চূড়ান্ত করতে ব্যর্থ হয়েছি আমরা। এ বিষয়ে আরো আলোচনার দরকার। তবে আমাদের পক্ষ থেকে নতুন কোনো দাবি ছিল না। ইদলিবে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে হলে সবার আগে সন্ত্রাসীদের নির্মূল করতে হবে।
এদিকে, তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোয়ান বলেছেন, সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশে তুর্কি সামরিক অবস্থানের আশপাশ থেকে সেনা প্রত্যাহার করা না হলে দেশটির সরকারি সেনাদের বিরুদ্ধে যেকোনো মুহূর্তে অভিযান চালাবে তার দেশ। এসময় যেকোনো মূল্যে ইদলিবে নিরাপত্তা অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন এরদোয়ান।
এদিকে ইদলিবের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে মস্কো আলোচনার পর বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) জরুরি বৈঠকে বসে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। বৈঠকে অঞ্চলটির বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানান জাতিসংঘের মানবিক সহযোগিতা বিষয়ক কমিশনার।
ইদলিবের পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করলেও সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরুর দীর্ঘ আট বছর পর প্রথমবারের মতো খুলে দেয়া হয়েছে আলেপ্পো বিমানবন্দর। এদিন যাত্রীবাহী বিমান অবতরণের মাধ্যমে বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম পুনরায় চালু করা হয়।
সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশ হচ্ছে এখন বাশার আসাদ বিরোধী বিদ্রোহীদের সর্বশেষ ঘাঁটি। এই বিদ্রোহীদের মধ্যে আল-কায়েদা সমর্থক জিহাদি গোষ্ঠী যেমন আছে, তেমনি আছে তুরস্ক-সমর্থিত বিদ্রোহী, কিছু কুর্দি বাহিনীও আছে।
অন্যদিকে রাশিয়া ও ইরানের সাহায্য নিয়ে প্রেসিডেন্ট বাশার আসাদ সরকারের সেনাবাহিনী এখন সিরিয়ার প্রায় সব ভূখন্ড বিদ্রোহীদের হাত থেকে মুক্ত করে ফেলেছে।
বাকি আছে শুধু এই ইদলিব। বাশার আসাদের সংকল্প হলো, তিনি ইদলিব দখল করে পুরো সিরিয়াকে বিদ্রোহীদের হাত থেকে পুনরুদ্ধার করবেন।
এ কারণেই তিনি ডিসেম্বর থেকে ইদলিবে এক অভিযান শুরু করেছেন - যাতে ইতিমধ্যেই শত শত লোক নিহত হয়েছে। জাতিসংঘ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও তাতে এখনো কোন কাজ হয়নি। এরদোয়ান চান ইদলিব প্রদেশের সীমান্ত-সংলগ্ন অঞ্চলগুলোকে নিরাপদ এলাকায় পরিণত করতে।
কারণ হলো, সিরিয়ার দশ বছরব্যাপি যুদ্ধের কারণে এত বিপুল সংখ্যক লোক পালিয়ে তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছে যে তুরস্ক এখন বলছে, তাদের আর নতুন অভিবাসী আশ্রয় দেবার জায়গা নেই।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন