জম্মু-কাশ্মীরের জনগণকে ‘সংশোধনাগারে’ পাঠানো উচিত বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেছিলেন ভারতের সেনাবাহিনীর এক শীর্ষস্থানীয় জেনারেল। ওই সামরিক কর্তাব্যক্তির মন্তব্যের ফলে ভারতজুড়ে বিভ্রান্তি ও আশঙ্কার তৈরি হয়, যা ধর্মকেন্দ্রিক উত্তেজনাকে বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মধ্য জানুয়ারিতে দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে ভারতের চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াত বলেন, কাশ্মীরের শিশুরা চরমপন্থি জঙ্গিদের হাতে উগ্রপন্থার শিক্ষা পাচ্ছে। জঙ্গিদের থেকে ওই শিশুদের আলাদা করা দরকার। তিনি আরও বলেছিলেন, ‘দশ থেকে বারো বছর বয়সী শিশুদের এখন উগ্রপন্থার শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। এখনো সময় আছে তাদের এ উগ্রপন্থা থেকে বের করে আনার। কিন্তু ইতিমধ্যেই যারা উগ্রপন্থায় দীক্ষিত হয়েছে তাদের আলাদা করে সংশোধনাগারে নিয়ে যাওয়া দরকার।’
বিপিন রাওয়াতের বক্তব্যে এটা নিশ্চিত হয় যে, ইতিমধ্যেই কিছু সংশোধনাগার চালু করা হয়েছে ভারতে। তবে তিনি ওই শিবিরগুলোর অবস্থান ও এর প্রক্রিয়া সম্পর্কে কোনো বিস্তারিত জানাননি। তার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে অধিকারকর্মীরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের বিশ্লেষক মনোজ জোশি সিএনএনকে বলেন, ‘আমি ওই বিবৃতিতে বিস্মিত। কেউ কি বলতে পারবে ওই শিবিরগুলোর অবস্থান কোথায়। সেখানে কাদের আটকে রাখা হয়েছে? এই দেশে এমন কিছু কি হতে পারে? যদি এমন সংশোধনাগার থেকে থাকে, তবে সেটা খুবই উদ্বেগের বিষয়।’
জেনারেল বিপিন রাওয়াতের মন্তব্য নিয়ে মুখ খুলতে চায়নি ভারত সরকার ও সেনাবাহিনী। ভারতের প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ‘ক্যাম্প’ শব্দটি খুবই স্পর্শকাতর অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। চীন যেভাবে শিনজিয়াংয়ে ‘শিক্ষাকেন্দ্র’ খুলেছে উইঘুর মুসলিমদের জন্য, তেমনি ভারতও কোনো ‘শিবির বা ক্যাম্প’ খুলছে কি না তা অনুসন্ধান করে দেখা দরকার বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। আসামে এনআরসি ইস্যুতে ইতিমধ্যেই কয়েকটি বন্দিশিবির খোলা হয়েছে। ওই বন্দিশিবিরগুলোকে ব্যবহার করা হচ্ছে কথিত ‘বিদেশি’দের আটকে রাখার জায়গা হিসেবে।
কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলে সংবিধান থেকে ৩৭০ ধারা বাতিল ও সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) তৈরি করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইতিমধ্যেই যথেষ্ট বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। এ দুই ঘটনায় ভারতের মুসলিমরা দেশজুড়ে প্রতিবাদ করছেন। ৩৭০ ধারা বাতিলের পর ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত আগস্ট থেকে ওই অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। অতিসম্প্রতি কাশ্মীরের কিছু এলাকায় টুজি নেটওয়ার্ক চালু করা হলেও, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সুবিধা এখনো বন্ধ করে রাখা হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সাম্প্রতিক এক বিবৃতিতে বলা হয়, কাশ্মীরের অন্তত ১৪৪ জন শিশুকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। সাধারণ কাশ্মীরিরা অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে বলেও সংস্থাটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
কিংস কলেজের বিশেষজ্ঞ প্যান্টের মতে, ইসলামিক স্টেটের উত্থানের কারণে ভারত সরকারকে ‘সংশোধন প্রকল্প’ হাতে নিয়ে হয়েছে। কিন্তু ভারতের কোনো নিবেদিত সংশোধনাগার নীতি নেই। চীনের মতো করে কোনো পদক্ষেপ এখানে নেওয়া হলে তা বুমেরাং হতে পারে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন