নাগরিকত্ব আইন নিয়ে ভারতের অস্থিরতা প্রভাব ফেলেছে বাংলাদেশে। গত ২ জানুয়ারি বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, নাগরিকত্ব আইন সংশোধন হওয়ার পর গত দুই মাসে ভারত সীমান্ত দিয়ে ৪৪৫ জন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। যদিও এদের সবাইকে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবেই উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, “এনআরসির পরে নভেম্বর মাসে ৩১২ জন এবং ডিসেম্বরে ১৩৩ জন দেশে এসেছে। এরা মূলত ঝিনাইদহ, মহেশপুর এবং সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে এসেছে।এরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে আমরা তা নিশ্চিত হয়েছি।” তবে ভারতের নাগরিকত্ব আইন নিয়ে দিনকে দিন টেনশন বেড়েই চলেছে বাংলাদেশের। এরইমধ্যে ভারতের বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) এবং নাগরিকপঞ্জিকে (এনআরসি) কেন্দ্র করে নিরাপত্তার শঙ্কায় দেশের সীমান্ত এলাকায় টেলিযোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। যদিও দুদিন পর তা আবার সচল করেছে বাংলাদেশ। তবে নিরাপত্তার শঙ্কাটা কী ছিল সে সম্পর্কে সরকারের কাছ থেকে স্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। যদিও পিলখানায় বিজিবি মহাপরিচালক এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, সিএএ এবং এনআরসি নিয়ে বিজিবির কোনো উদ্বেগ নেই। এগুলো ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এর আগে গত ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেনও একই দাবি করেছিলেন। যদিও সংবাদ সম্মেলনেই বিজিবির মহাপরিচালক জানান, গত এক বছরে ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে যত মানুষ বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছেন, তার প্রায় অর্ধেকই এসেছেন গত নভেম্বর- ডিসেম্বরে। গত বছর ভারত থেকে প্রায় এক হাজার জন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন জানিয়ে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, “এর মধ্যে নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে এসেছে ৪৪৫ জন। এরা সবাই বাংলাদেশি। বিভিন্ন সময় তারা দেশ ছেড়ে ভারতে গিয়েছিল।”
ভারতে নাগরিকপঞ্জি নিয়ে অস্বস্তির শুরু আসাম থেকে। গত ৩১ আগস্ট আসামের নাগরিকপঞ্জি প্রকাশের পর সেখানকার ১৯ লাখ মানুষের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়ে, যাদের বেশিরভাগই বাঙালি। একই ধারাবাহিকতায় গত ১০ ডিসেম্বর ভারতের লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাস হয়। এতে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ভারতীয় মুসলিমদের আশঙ্কা, এই সিদ্ধান্ত একদিন তাঁদের রাষ্ট্রহীন করে দেবে। ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশেও এ নিয়ে উদ্বেগ আছে। ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের (মাসুম) সাাধারণ সম্পাদক কিরীটি রায় একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বেনার নিউজকে বলেছেন, “ভারতে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক, বাংলাদেশেও। বাংলাদেশে শুধু দক্ষিণাঞ্চল দিয়ে অনুপ্রবেশ হচ্ছে, তা-ই নয়, রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর দিয়েও লোকজন ঢুকছে। বিষয়টা বাংলাদেশ সরকারের খোলাসা করা দরকার এবং যথাযথভাবে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।”
গত ২৯ ডিসেম্বর বিটিআরসি মোবাইল ফোন অপারেটরদের কাছে চিঠি দিয়ে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সীমান্তে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়।
বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের উপপরিচালক মো. সোহেল রানা স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, “বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত সীমান্ত এলাকায় নেটওয়ার্ক কাভারেজ বন্ধ রাখতে হবে।” নিরাপত্তা বিঘিœত হওয়ার আশঙ্কা কেন সে ব্যাখ্যা অবশ্য বিটিআরসির কাছে পাওয়া যায়নি। তবে, বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিটিআরসি চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেন, এনআরসি নিয়ে যেন কোনো অসন্তোষ সৃষ্টি না হয়, কেউ যেন গুজব রটাতে না পারে, সেজন্য সরকার তৎপর আছে। “ গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট আছে যে গুজব রটনা হতে পারে।” তবে এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রায় দেড় কোটি মানুষ মোবাইল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় দুই দিনের মাথায় এ সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসে সরকার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল মনে করেন সিএএ ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়। তার মতে, আইনটি পাস হওয়ার সময় যে তিনটি দেশের কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের বর্তমানে কোনো সীমান্ত নেই। অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে বৈরী রাষ্ট্র পাকিস্তানের সীমান্তে সার্বক্ষণিক উত্তেজনা বিরাজমান। এ পরিস্থিতিতে সিএএ আইনের কারণে নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তা হারানো ভারতীয় মুসলমানদের সবচেয়ে বেশি অনুপ্রবেশ ঘটার আশঙ্কা বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে।
সরকার প্রথম থেকেই বিষয়টি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে বর্ণনা করেছে এবং বাংলাদেশের চিন্তার কারণ নেই বলে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের কথা উল্লেখ করেছে। এড়িয়ে গেছে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, সঙ্গে আরও কয়েকজন বিজেপি নেতার অনুপ্রবেশকারীদের বাংলাদেশের বলে দাবি করার বিষয়টি। আইনটি পাস করার সময় লোকসভার আলোচনায় ধর্মীয় সংখ্যালঘু নিপীড়নে বাংলাদেশকে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সঙ্গে এক কাতারে ফেলার পর আমরা দেখেছি যে বাংলাদেশের দুজন মন্ত্রীর ভারত সফর স্থগিত হয়েছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এটিও জানানো হয় যে এই স্থগিতের সঙ্গে সিএএর কোনো সম্পর্ক নেই; বরং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমন বক্তব্য প্রদান করেন যে ভারতে অনুপ্রবেশকারীরা বাংলাদেশের হলে তাদের ফেরত নেওয়া হবে। আসিফ নজরুলে মতে,এই আইনের কারণে ভারত থেকে লাখ লাখ মুসলমানের বাংলাদেশে চলে আসার মতো চাপ বা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে, এর আলামত এখনই দেখা যাচ্ছে। এটি সত্যি সত্যি ঘটলে তা সামাল দেওয়ার সামর্থ্য আমাদের আছে কি? গণহত্যার মুখে রোহিঙ্গারা প্রাণভয়ে একসঙ্গে এ দেশে চলে এসেছে বলে তাদের জন্য আমরা কিছু বিদেশি সাহায্য পাচ্ছি। ভারত থেকে মুসলমানরা ভীতি ও অনিশ্চয়তার কারণে এ দেশে আসতে থাকলে তেমনটি ঘটবে না।
নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় সব বিরোধী দল
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) বাতিলের দাবিতে ভারতজুড়ে বিক্ষোভের ঢেউ নতুন বছরেও অব্যাহত থাকবে- এ ঘোষণা দিয়ে একজোট হয়েছে কংগ্রেসসহ দেশটির প্রায় সব বিরোধী রাজনৈতিক দল। বিভিন্ন রাজ্যে এখনও সাধারণ জনতা ও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছেন। এতে যোগ দিয়েছেন হিন্দু পুরোহিতরাও। অপরদিকে ‘বিতর্কিত’ আইনের পক্ষে থাকতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এটির পক্ষে অনলাইনে প্রচারও শুরু করেছেন বিজেপির এ নেতা। আনন্দবাজার পত্রিকা বলছে, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিক তালিকা (এনআরসি) বাতিলের দাবিতে জোটবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদের আহ্বানে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির চিঠিতে সাড়া দিয়েছেন রাজনীতিকরা। কংগ্রেসসহ বিরোধী প্রায় সব রাজনৈতিক দল এতে সমর্থন দিয়েছে।
ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী দল কংগ্রেসের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী এক চিঠিতে মমতাকে সমর্থন দিয়ে প্রতিবাদ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। ঝাড়খন্ডে ২৯ ডিসেম্বর জেএমএম-কংগ্রেস জোট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে হেমন্ত সারেনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দেশটির প্রায় সব অ-বিজেপি দলের প্রতিনিধিরা। পশ্চিমবঙ্গ, ছত্তিশগড় ও রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি তামিলনাড়ুর ডিএমকে-র সভাপতি, সিপিএম এবং সিপিআইয়ের দুই সাধারণ সম্পাদক, আরজেডি ও এলজেডির প্রধান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বিরোধীদলীয় নেতাদের আলাপচারিতায় উঠে এসেছে, সিএএ ও এনআরসির বিরোধিতায় সব দলই প্রতিবাদ চালিয়ে যাবে।
উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে নাগরিকত্ব আইন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ চলছে। রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী বিক্ষোভকারীদের ওপর ‘বদলা’ নেয়ার ঘোষণা দিয়ে মামলা, ক্ষতিপূরণ দাবি অব্যাহত রেখেছেন। এ অবস্থায় গত ৩০ ডিসেম্বর মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে সমালোচনায় বিদ্ধ করেছেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াংকা গান্ধী। তিনি বলেন, ভারতে হিংসা ও প্রতিশোধের কোনো স্থান নেই। এদিকে ৩০ ডিসেম্বর কলকাতার মেয়ো রোডে মহাত্মা গান্ধীর মূর্তির পাদদেশে সিএএ ও এনআরসির বাতিলের দাবিতে প্রতিবাদে শামিল হয় পশ্চিমবঙ্গের পুরোহিত ও পূজারিদের সংগঠন ‘পশ্চিমবঙ্গ সনাতন ব্রাহ্মণ পরিষদ’। পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্রীধর মিশ্র বলেন, ধর্মের ভিত্তিতে যেভাবে দেশকে বিভক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগের। আজ যদি একটি সম্প্রদায়কে টার্গেট করা হয়ে থাকে, তাহলে আমাদেরও যে কোনো সময় করা হতে পারে।
সিএএ ও এনআরসি নিয়ে টালমাটাল অবস্থার মধ্যে জাতীয় আদমশুমারি (এনপিআর) করার ঘোষণা দিয়েছে বিজেপি সরকার। এর প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন সমাজবাদী পার্টির প্রধান ও উত্তরপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব। ওদিকে বিক্ষোভকারীদের কটাক্ষ করে ভারতের সেনাপ্রধান বিপিত রাওয়াতের বক্তব্যের সমলোচনা করেছেন কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম।
টাইমস অব ইন্ডিয়া বলছে, নাগরিকত্ব আইন ইস্যুতে দেশজুড়ে কোণঠাসা হয়ে পড়া বিজেপি সরকারের ভাবমূর্তি উদ্ধারে এবার অনলাইনে প্রচারে নেমেছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে সাধারণ মানুষকে এ আইন সমর্থনের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
টুইটে হ্যাশট্যাগ দিয়ে মোদি লেখেন, এটি নিপীড়িত শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেয়ার আইন, কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার জন্য নয়। অ্যাপে গিয়ে সিএএ সংক্রান্ত ভিডিও, খবর ও অন্যান্য সব কিছু কিভাবে জানা যাবে তাও জানিয়েছেন। তার দল বিজেপিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আইনটির পক্ষে প্রচার চালানো শুরু করেছে।
নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের পক্ষে সহমত জানিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখলেন এনসিপি প্রধান। এই চিঠিতে পওয়ার লিখেছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তৃত্ববাদী আচরণের বিরুদ্ধে আমরাও ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচিতে যুক্ত হতে চাই।’’
বিজেপি বিরোধী এই আন্দোলনে সমমনোভাবাপন্ন সব দলকে একমঞ্চে আনতে সম্প্রতি অবিজেপি নেতাদের চিঠি লিখেছিলেন মমতা। কংগ্রেস ও এনসিপি তাতে ইতিবাচক সাড়া দেওয়ার পরই নতুন সম্ভাবনা রাজনৈতিক মহলে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে। জানা গিয়েছে, দেশজুড়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে আলোচনার জন্য দিল্লিতে বিরোধী নেতাদের একটি বৈঠকের উদ্যোগ শুরু হয়েছে।
বিরোধী শিবিরে ঐক্যের ভাবনা স্পষ্ট করে তৃণমূলনেত্রী বলেন, দেশে বিজেপিকে একা করে দিন। যারা দেশবাসীকে তাড়াতে চায়, ভারতে তাদের জায়গা নেই।’’ ঝাড়খন্ডে অবিজেপি সরকারের শপথ অনুষ্ঠানের মঞ্চে দেশের বিরোধী নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর তৃণমূলনেত্রীর এই আহ্বানে রাজনৈতিক শক্তির নতুন বিন্যাসের সম্ভাবনা দেখছে রাজনৈতিক মহল।
পুরুলিয়ার ভিক্টোরিয়া হাইস্কুল মোড়ে এই সভায় তিনি বলেন, এনআরসি’র নাম করে দেশের মানুষকে তাড়ানোর চক্রান্ত চলছে। সবাইকে বলব, এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে জোট বাঁধুন, তৈরি হোন। এ রাজ্যের আন্দোলনকে সর্বভারতীয় প্রতিবাদের সঙ্গে জুড়ে দিতে মমতা এদিন বলেন, শুধু বাংলায় নয়। সারা ভারতে যে যেখানে এই আন্দোলন করছেন, তাদের প্রতি সহমর্মিতা জানাচ্ছি। এটা গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন, মাথার উপরের আশ্রয় রক্ষার আন্দোলন। ঠিকানা রক্ষার আন্দোলন।
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ‘‘দেশে ১৩০ কোটি মানুষই নাগরিক। তার মধ্যে ১০০০ জনকে নাগরিকত্ব দেবে। বাকিরা কি ললিপপ খাবে। কলা খাবে। দেশে শুধু বিজেপি থাকবে? আমরা সবাই নাগরিক। এক একটি রাজ্যের ভাষা আলাদা। কিন্তু সবটা মিলিয়ে আমাদের দেশ হিন্দুস্তান।’’ এ রাজ্যে এই এনপিআর এবং নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করবেন না বলে ফের জানিয়ে এদিনও মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এই এলাকায় এমন মানুষ আছেন, যারা ব্যবসা করেন, চাকরি করেন। তাদের কেউ গুজরাটের, কেউ উত্তরপ্রদেশে, পঞ্জাব, বিহার, রাজস্থানের বাসিন্দা। এনআরসি-র নাম করে সব লোকেদের ভারতবর্ষ থেকে বিতাড়নের জঘন্য চক্রান্ত চলছে।’’
নতুন নাগরিকত্ব আইন প্রত্যাহারের দাবিতে পুরুলিয়া শহরে পদযাত্রা করেন তৃণমূলনেত্রী। তার আগে ওই সভায় তিনি বলেন, ‘‘আদিবাসী ভাইবোনেরা তাদের জায়গা যাতে কেউ কেড়ে না নেয়, তা নিশ্চিত করতেই এই আন্দোলন।’’এই পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ভোটার লিস্টে নাম ভাল করে তুলুন। ভোটার লিস্টে অনেক ভুল করেছে। কারও বাবা-মার নাম ভুল হয়ে যায়, কারও ঠিকানা ভুল হয়ে যায়। ভালও করে মিলিয়ে নিন। আপনারা শুধু এটুকু করুন। কাউকে আমরা বাংলা ছেড়ে যেতে দেব না। এ আমার অঙ্গীকার।’’
এদিকে তৃণমূলের সমালোচনা করে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এদিন বলেন, ‘‘লোকসভা ভোটের আগেও ব্রিগেডে হাত ধরাধরি করে মোদি হটাও স্লোগান শুনেছিলাম। মানুষ যোগ্য জবাব দিয়েছে। দিদিমনি তাদের হাত ধরে আবার টেনে আনছেন।’’
মুসলমানদের ওপর চলছে অকথ্য নিপীড়ন
ভারতের বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের বিরুদ্ধে যে বিক্ষোভ চলছে গোটা ভারতজুড়ে। আর এই পরিস্থিতিতে মুসলিমরা আছে নির্যাতন, নিপীড়ন, ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে। আটক করা হচ্ছে হাজার হাজার মুসলিমকে। এমনকি গুণতে হচ্ছে বিক্ষোভের ক্ষতিপূরণও। বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনবিরোধী বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত ২৫ জন মারা গেছে। আহত হয়েছন অনেকেই। মৃতদের মধ্যে বেশির ভাগই মুসলিম। এই পরিস্থিতিতে মৃতদের দাফন ঠিক মতো করতে পারছে না তাদের স্বজনরা। কেননা, নিহতদের দাফনেও বিধি-নিষেধ আরোপ করে দিয়েছে দেশটির পুলিশ। পরিবারকে বাধ্য করছে গোপনে দ্রুত দাফন করতে। এমনকি জানাজায় কোনও বন্ধু বা শোকাহতকে আমন্ত্রণ জানানো যাবে না। কঠোর পুলিশি বন্দোবস্তের মধ্যে দাফন সম্পন্ন করতে হচ্ছে।
এনপিআর বিরোধ বক্তব্য, তোপের মুখে অরুন্ধতী রায়- মামলা
ভারতের জাতীয় নাগরিক নিবন্ধনে (এনপিআর) সরকারি কর্মকর্তারা বাড়িতে গেলে তাদের ভুল তথ্য দিতে লোকজনকে আহ্বান করায় তোপের মুখে পড়েছেন লেখক ও মানবাধিকারকর্মী অরুন্ধতী রায়। তার ওই বক্তব্যে সমলোচনা করেছেন দেশটির ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী বিজেপি। অবশেষে ভারতীয় ফৌজদারি বিধিমালা ও নিরাপত্তা আইনের অধীন বিভিন্ন ধারায় দিল্লির তিলাক মার্গ পুলিশ স্টেশনে অরুন্ধতী রায়ের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছে।
অরুন্ধতী রায় বলেন, নাগরিকপঞ্জি দেশের মুসলমানদের বিরুদ্ধে। কাজেই যারা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে আদমশুমারি কিংবা এনপিআর করবেন, পরেই সেই তথ্য এনআরসিতেই কাজে লাগানো হবে। কাজেই এই এনপিআরের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই করতে হবে। তিনি বলেন, যখন তারা বাড়িতে গিয়ে আপনার নাম জিজ্ঞাসা করবেন, তাদের রাঙ্গা-বিল্লা কিংবা কুংফু-কুত্তার মতো ভুল নাম দেবেন, যখন তারা ঠিকানা জিজ্ঞাসা করবেন, তখন সেভেন রেস কোর্স রোডের (প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন) ঠিকানা দেবেন। আমাদের ব্যাপক প্রতিরোধ দরকার।
তার এই বক্তব্যের সমালোচনা করে বিজেপি নেতা উমা ভারতী কয়েক দফা টুইটার পোস্টে বলেন, রাঙ্গা-বিল্লা নামে দুজন কুখ্যাত অপরাধী ছিলেন। সত্তরের দশকে তারা খবরের শিরোনাম হয়েছিলেন। একটি শিশুকে ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যা ও তার ভাইকে হত্যার মতো নৃশংসতা চালিয়েছিলেন তারা। তিনি বলেন, এনপিআর নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অরুন্ধতীর মনে পড়ল সেই সন্ত্রাসীদের কথা। কিন্তু আশফাকুল্লাহ খান কিংবা রামপ্রসাদ বিসমালের মতো মহান ব্যক্তিদের কথা স্মরণে এলো না। ‘কাজেই রাঙ্গা-বিল্লাকে আদর্শায়িত করে এমন একজন নারীর নাম মুখে নিতে আমার লজ্জা হয়। তার দৃষ্টিভঙ্গি কেবল নারীবিদ্বেষীই নয়- মানবতাবিরোধী। তিনি এক বিরক্তিকর মানসিকতার প্রদর্শন করেছেন,’ বললেন উমা। মধ্যপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শিভরাজ সিং চৌহান বলেন, আমাদের দেশে যদি এমন ধরনের বুদ্ধিজীবী থাকেন, তবে সবার আগে তাদের নিবন্ধন দরকার। অরুন্ধতীর উচিত তার বক্তব্যের জন্য লজ্জিত হওয়া। এমন বিবৃতি কি আমাদের দেশের সঙ্গে প্রতারণার শামিল নয়?
আর অরুন্ধতী রায়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। অভিযোগে আইনজীবী রাজিব কুমার রঞ্জন বলেন, তার এই বিবৃতি মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিকে ক্ষুব্ধ করে তোলার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃত ও বিদ্বেষপূর্ণ কার্যক্রম ছাড়া কিছু না।
মুসলিমদের পাশে অমুসলিমরা, প্রতিবাদ জানাচ্ছে যেভাবে
বিতর্কিত ও ধর্মভিত্তিক নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে ভারতজুড়ে চলছে বিক্ষোভ। আইনটি বাতিলের দাবিতে চলমান আন্দোলনে নিয়মিতই ঘটছে হতাহতের ঘটনা। বিভিন্ন ভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছে সকল ধর্মের মানুষ। চলমান বিক্ষোভের মধ্যে হিজাব পরে জাতীয় সংগীত গাইলেন ভারতীয় অভিনেত্রী এনা সাহা। জানা গেছে, নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে উত্তাল এই সময়ে সম্প্রীতির বার্তা দিতেই এমন অভিনব উপায় বেছে নিয়েছেন তিনি। গত ২৮ ডিসেম্বর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি ভিডিও পোস্ট করেন এনা। ভিডিওতে দেখা গেছে, হিজাব পরে আছেন এনা। শুধু এনাই নন, বিভিন্ন ধর্মের প্রচলিত পোশাক পরেছেন অন্যরা। কারো গায়ে নামাবলী, কারো মাথায় টুপি, আবার কারো গলায় ক্রুশ। তারা প্রত্যেকে ভারতের জাতীয় সংগীত ‘জনগণমন’ গেয়েছেন। ভিডিওর ক্যাপশনে এনা লিখেছেন, ‘বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য আমাদের সুন্দর দেশের নাগরিকদের চালিত করেছে সব সময়। দেশের সব ধর্মকে এক সূত্রে বাঁধার পথ হলো ঐক্য। আর বৈচিত্র্য হলো বিভিন্ন ধরনের মানুষের ধারণাগুলো এক জায়গায় আসা। আজ আমরা দেশের সব ধরনের সংস্কৃতিকে সম্মান জানাই।’এমন পরিস্থিতিতে সরব হয়ে ওঠেছে টালিউড নায়িকা স্বস্তিকা মুখার্জি। স্বস্তিকা নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পাতায় দেওয়া এক পোস্টে তিনি মোদি সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, ধর্মের নামে মানুষকে পিশাচ বানিয়ে লাঠি ঘোরাতে দেবেন না।
এদিকে ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনে অংশ নেওয়া কেরালার পন্ডিচেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী সমাবর্তন অনুষ্ঠানে স্বর্ণপদক নেননি। জানা গেছে, ওই ছাত্রীর নাম রবিনা অ্যাবডারহিম। তিনি পন্ডিচেরি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর শেষ করেন। কিন্তু নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদ করা রবিনা তার স্বর্ণপদক নেননি।
নাগরিকত্ব আইন বাতিলের প্রস্তাব পাস কেরালা বিধানসভায়
ভারতের বিতর্কিত সিএএ বাতিলের প্রস্তাব পাস হয়েছে কেরালা বিধানসভায়। গত ৩০ ডিসেম্বর বিধানসভার একদিনের বিশেষ অধিবেশনে এ প্রস্তাব পাস করা হয়। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সিএএ বাতিল করার প্রস্তাব আনা হয়। এতে সম্মতি দেয় বিরোধীরা। যদিও বিজেপি বিধায়ক সাবেক কেন্দ্রীয়মন্ত্রী রাজাগোপাল এদিন বিধানসভায় সিএএ বিরোধী প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বলেন, এই আইন প্রত্যাহারের দাবি সংকীর্ণতার লক্ষণ। কিন্তু বিধানসভায় তার বিরোধিতায় কোনো প্রভাব ফেলেনি। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন নাগরিকত্ব সংশোধিত আইন (সিএএ) বিরোধী সনদ পাঠ করেন। এ সময় তিনি বলেন, ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ ক্ষুণœ করছে ধর্মভিত্তিক নাগরিকত্ব প্রদানের আইনটি। সংবিধানের আদর্শের সঙ্গে এই আইনটির সরাসরি সংঘাত তৈরি হচ্ছে। দেশজুড়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে এই আইন পাস হওয়ায়। কেন্দ্রের উচিত ধর্মনিরপেক্ষতার খাতিরে এই আইন প্রত্যাহার করা। পাশাপাশি তিনি জানিয়ে দেন কেরালায় কোনো ডিটেনশন ক্যাম্প হবে না। এর আগে গত ২৯ ডিসেম্বর সিএএ প্রত্যাহার বিষয়ক প্রস্তাব আনার জন্য সর্বদলীয় বৈঠক ডাকেন পিনারাই বিজয়ন। সেখানে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ দাবি করে, একদিনের বিশেষ অধিবেশন করে (সিএএ) প্রত্যাহারের প্রস্তাব পাস করা হোক। বছরের শেষদিনকে এই অধিবেশনের জন্য ধার্য করা হয়।
এনআরসি ও এনপিআর ইস্যুতে পিছু হটছে বিজেপি
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসির বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছে দেশ। প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ক্রমশ বৃহৎ হচ্ছে। জনতার অসন্তোষ আঁচ করতে পেরে বেঁকে বসেছে শরিক দল। এই পরিস্থিতিতে কিছুটা অস্বস্তিতে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি। চাপের মুখে তাই এনআরসি নিয়ে সুর নরম করেছে বিজেপি নেতৃত্ব। অবিলম্বে দেশজুড়ে এনআরসি লাগুর কোনও পরিকল্পনা কেন্দ্রীয় সরকারের নেই বলে জানাচ্ছেন তারা। এনআরসি হলে চরম বিপদের আশঙ্কা করছেন দেশের সংখ্যালঘু মুসলমানরা। বিরোধী শিবির বলছে ধর্মের ভিত্তিতে তৈরি এনআরসি বিজেপির দেশভাগের চক্রান্ত। বিরোধী প্রচারের জবাবে কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রকের মন্ত্রী মুক্তার আব্বাস নাকভির জবাব, ‘দেশজুড়ে এনআরসি লাগুর কোনও পরিকল্পনাই হয়নি। সরকারি কোনও স্তরেও এনআরসি নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও আলোচনা এগোয়নি। এনআরসি কেবল আসামে হয়েছে। শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই তাকে নিয়ে নানা রটনা রটার মত বিষয় হচ্ছে।’ বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাম মাধবের কথায়, ‘সম্পূর্ণ বিষয়টিই এখনও পরিকল্পনা স্তরে রয়েছে। এখনই এনআরসি নিয়ে কথা বলার মতো কিছু নেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন এনআরসি সংক্রান্ত প্রস্তাবটিতে ২০২১ সালের আগে কার্যকর হবে না। আমাদের কাছেও এনআরসি নিয়ে কোনও বিস্তারিত তথ্য নেই।’ কিন্তু, গত ডিসেম্বর মাসেও তো দলের কার্যকরী সভাপতি জে পি নাড্ডা বলেছিলেন, ‘দেশজুড়ে এনআরসি লাগু হবে’। রাম মাধব বলেন, ‘এই ঘোষণা বিজেপি সভাপতি করেছেন। তবে এখনও তা বছর দুয়েক দেরি রয়েছে। তাই চটজলদির কিছু নেই।’ বিজেপি সাধারণ সম্পাদক স্পষ্ট করেছেন যে, আপাতত বিজেপির মূল লক্ষ্য সিএএ-কে লাঘু করা। শাসক দলের নেতা, মন্ত্রীর কথায় পরিষ্কার যে, সিএএ নিয়ে আক্রমণাত্মক হলেও চাপের মুখে এনআরসি নিয়ে আপাতত ধীরে চলো নীতি অবলম্বন করেছে বিজেপি ও মোদি সরকার। এনআরসিকে পাশে সরিয়ে আপাতত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের গুরুত্ব বোঝাতে মাঠে নেমেছেন মোদি-শাহরা। নয়া আইন নিয়ে আপসে রাজি নয় গেরুয়া বাহিনী। উল্টে, নাগরিকত্ব আইনকে পুঁজি করেই ভোটবাক্সে ডিভিডেন্ট পেতে মরিয়া পদ্মশিবির।
ভারত থেকে অনুপ্রবেশকারীদের হটাতে দেশে এনআরসি লাগু হবে বলে ভোটের প্রচারে অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিল বিজেপির। দলের সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একাধিরবার জানিয়েছেন এনআরসি লাগু হবেই। সিএএ সম্পূর্ণ হলেই কাজ শুরু হবে এনআরসির। সংসদে দাঁড়িয়েও সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষার কথা জানিয়েছেন শাহ। তবে, এনআরসি নিয়ে আপাতত সেই চড়া সুর নেই বিজেপির কোনও নেতা, মন্ত্রীর গলায়। নাকভি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ‘কাদের জন্য এনআরসি হবে? কেবল মুসলমানদের জন্য? না, এটা হবে প্রত্যেকটি ভারতবাসীর জন্যই। এতে লুকোছাপা বা কোনও সম্প্রদায়ের মানুষের ভয়ের কিছু নেই। সরকার নির্দিষ্ট প্রক্রিয়াতেই সব কাজ করবে। তবে, সরকারি স্তরে এই নিয়ে এখনও কোনও আলোচনা হয়নি। তাই বিস্তারিত কোনও তথ্যও নেই।’
সিএএ ও এনআরসির প্রতিবাদে আসমুদ্র হিমাচল প্রবল বিক্ষোভ, রক্তক্ষয়ী আন্দোলন চলছে। এই পরিস্থিতিতে এনআরসি নিয়ে প্রকাশ্যে তৎপরতা জাহিরে রাজি নয় বিজেপি। এনআরসি নিয়ে প্রচার করে মহারাষ্ট্র, পাঞ্জাব, বাংলাসহ দেশের বাকি উপনির্বাচনগুলিতে ফল ভাল হয়নি দলের। আসামে বিক্ষোভ শুরু হতেই এনআরসি নিয়ে অবস্থান বদল করেছে এনডিএ শরিক অগপ। নীতীশ কুমার জানিয়েছেন বিহারে এনআরসি লাগু করবেন না। বেসুর আরেক এনডিএ শরিক বিহারের দল এলজেপির। আর এতেই বেকায়দায় গেরুয়া শিবির। আপাতত তাই এনআরসি প্রসঙ্গে ধীরে চলো নীতি নিয়েই রাজনীতির জল মাপতে চাইছে বিজেপি ও মোদি সরকার।
বন্ধু খোয়াবে ভারত
বিক্ষোভে উত্তাল গোটা ভারত। সিএএ বিরোধিতায় সোচ্চার দেশের বিরোধী সব রাজনৈতিক দল, পড়ুয়া থেকে সমাজের বিশিষ্টরা। এতেই উদ্বিগ্ন ভারতে কর্মরত বিদেশি কূটনীতিকরা। অবশ্য, প্রকাশ্যে বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকরা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনকে এদেশের অভ্যরীণ বিষয় বলে জানিয়েছেন। কিন্তু, নয়া আইন নিয়ে বিক্ষোভের তীব্রতা বাড়লেও মোদি সরকার নীরবতা বজায় রেখেছে। এতেই বিদেশি কূটনীতিকদের উদ্বেগ ক্রমশ আশঙ্কায় পরিণত হচ্ছে। এই তালিকায় রয়েছে ভারতের বেশ কয়েকটি বন্ধু রাষ্ট্রও।
ভারতে নিযুক্ত ১৬ টি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকদের সঙ্গে সিএএ বিরোধী আন্দোলন প্রসঙ্গে কথা বলেছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। সেই আলোচনাতেই নয়া আইন ও প্রতিবাদ আন্দোলন প্রসঙ্গে উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন তারা।
(সাপ্তাহিক শীর্ষকাগজে ৬ জানুয়ারি ২০২০ প্রকাশিত)
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন