আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গাম্বিয়া গণহত্যার প্রমাণ দিতে পারেনি বলে দাবি করেছে মিয়ানমার।
আলজাজিরা জানায়, নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বিতীয় দিনের শুনানির শুরুতে নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন করে মিয়ানমার।
মিয়ানমারের পক্ষে উইলিয়াম সাবাস বলেন, ‘গাম্বিয়ার আবেদনে রাখাইনের তিনটি গ্রামে কয়েকশ মৃত্যুর কোনো হিসাব দেয়া হয়নি। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে যে ১০ হাজার রোহিঙ্গা নিহত হওয়ার কথা বলা হয়েছে, সেটির তথ্য প্রমাণও দেয়া হয়নি। এখানে গণহত্যার কোনো উদ্দেশ্য প্রমাণিত হয়নি।’
তিনি বলেন, আকাশ থেকে তোলা ছবি দিয়ে তিনটি গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়ার প্রমাণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানে কোনো গণকবরের দৃশ্য ওই ছবিতে ধরা পড়েনি।
মিডলসেক্স ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক অপরাধ এবং মানবাধিকার বিষয়ের এই শিক্ষকের দাবি, ‘জাতিসংঘের তদন্ত দলের অনুসন্ধান ত্রুটিপূর্ণ। আদালতের উচিত, ওই তদন্ত প্রতিবেদন উপেক্ষা করা।’
মুসলিম সংখ্যালঘু গোষ্ঠী রোহিঙ্গা গণহত্যা ও জাতিগত নিধনে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নভেম্বরে অভিযোগ আনে গাম্বিয়া।
মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ১৭ জন বিচারপতির উপস্থিতিতে তিনদিন ব্যাপি এই শুনানি শুরু হয়।
শুনানির প্রথমদিন সু চির উপস্থিতিতে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মানবতাবিরোধী নৃশংস কর্মকাণ্ডের অভিযোগগুলো তুলে ধরেন গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু।
বুধবার দ্বিতীয় দিনের শুনানির শুরুতে মিয়ানমারের পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করেন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর সু চি। এতে তিনি গাম্বিয়ার আনা অভিযোগগুলো অস্বীকার করেন।
অং সান সু চি বলেন, ‘রাখাইনের সমস্যা আন্তর্জাতিক আদালতে আনার মতো বিষয় নয়। সেনাবাহিনীর সদস্যরা যুদ্ধাপরাধ করে থাকলে তা দেশীয় তদন্ত ও বিচার ব্যবস্থায় নিষ্পত্তি করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘এটা দুঃখের বিষয় যে, গাম্বিয়া রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে একটি অসম্পূর্ণ, বিভ্রান্তিকর চিত্র তুলে ধরেছে। শুধু অনুমানের ভিত্তিতে গণহত্যার বিষয়টি মিয়ানমারের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।’
১৯৪৮ এর গণহত্যা সনদ এখানে প্রযোজ্য নয়। মিয়ানমার সেখানে যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে গাম্বিয়ার তা উপলব্ধি করা উচিত বলে মন্তব্য করেন মিয়ানমারের শীর্ষ নেতা।
সু চি বলেন, রাখাইনে কোনো ধরনের বৈষম্য করা হবে না। সেখানে মুসলমান শিশু ও ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বৃত্তি চালু করা হচ্ছে। তিনটি আইডিপি (ইন্টারনালি ডিসপ্লেসড পিপল) শিবির বন্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশান্তরিত মুসলমানদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তার প্রশ্ন, ‘এ রকম অবস্থায় কীভাবে বলা হয় যে, রাখাইনে গণহত্যার উদ্দেশ্য নিয়ে কার্যক্রম চলছে?’
২০১৭ সালের রক্তাক্ত সহিংসতাকে রোহিঙ্গাদের অভ্যন্তরীণ বিরোধ বলে অবহিত করেন তিনি। রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) হামলার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল মিয়ানমার সেনাবাহিনী।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন