পাকিস্তানের ইসলামাবাদে বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্স নির্মাণে আবারও জোর দিয়েছে সরকার।
দেশটির সরকার ইসলামাবাদের কূটনৈতিক জোনে বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য ২০০৩ সালে জমি দিয়েছিল। জমি গ্রহণের পর ২০০৭ সালে কমপ্লেক্সটি নির্মাণে বাংলাদেশ সরকার প্রকল্প নিলেও এতদিন তা ঢিমেতালেই চলছিল। দ্বিতীয় সংশোধনীর পর ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত এ প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় থাকলেও হঠাৎ করেই এর তৃতীয় সংশোধনী এনে এটি বাস্তবায়নের ওপর জোর দেয়া হয়েছে।
সংশোধনী প্রস্তাব জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) পরবর্তী সভায় অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
প্রকল্পের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখা ও তা শক্তিশালী করা; দুটি রাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়ন করা; বর্তমান চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে মিশনে প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামো সুবিধা সৃষ্টি এবং পাকিস্তান সরকারের বাংলাদেশ সরকারকে দূতাবাসের জন্য দেয়া জমির সদ্ব্যবহার করা।’
‘পাকিস্তানের ইসলামবাদে বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্স নির্মাণ (তৃতীয় সংশোধন)’ প্রকল্পটি বাংলাদেশ হাইকমিশন, ইসলামাবাদ বাস্তবায়ন করবে। মূল প্রকল্পে ২৯ কোটি ৮০ লাখ বরাদ্দ থাকলেও তৃতীয় সংশোধনীতে তা করা হয়েছে ৭৯ কোটি ৮৬ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুনে শেষ হওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
ইসলামাবাদের বাংলাদেশ হাইকমিশন বলছে, পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও দেশটিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের জন্য স্থায়ী নিজস্ব ভবন/কমপ্লেক্স নেই। বর্তমানে ভাড়া বাড়িতে দূতাবাসের কার্যক্রম চলছে। ২০০৩ সালে পাকিস্তান সরকার ইসলামাবাদ কূটনৈতিক জোনে বাংলাদেশ দূতাবাস নির্মাণের লক্ষ্যে জমি বরাদ্দ দেয় এবং ২০০৩ সালের ২৪ মার্চ বাংলাদেশ হাইকমিশন জমির দখলভার গ্রহণ করে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে স্থায়ী স্থাপনা/দূতাবাস ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ৫ সদস্যের একটি দল ২০০৫ সালের ২ থেকে ৫ আগস্ট ইসলামাবাদ সফর করে বিস্তারিত প্রতিবেদন পেশ করে। ওই পরিদর্শনের ভিত্তিতে মূল প্রকল্পটি সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নে মোট ২৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১০ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য ২০০৮ সালের ৩০ জানুয়ারি একনেক সভায় অনুমোদিত হয়।
পরবর্তীতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২০১০ সালের ২ মে ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে প্রকল্পটির মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে ২০১১ সালের জুন পর্যন্ত করে। এরপর ২০১১ সালের ৩ জানুয়ারি প্রকল্পটির মেয়াদ দ্বিতীয়বারের মতো ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে দুই বছর বাড়িয়ে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়।
ডলারের মূল্য বৃদ্ধি, পরামর্শক চূড়ান্ত করা, স্থাপত্য ও কাঠামোগত নকশা প্রণয়ন ও ঠিকাদার নির্বাচনে বেশি সময়ের প্রয়োজন হওয়ায় এবং অনুমোদিত স্থাপত্য নকশা অনুযায়ী চ্যান্সারি কমপ্লেক্সের এরিয়া বৃদ্ধি পাওয়ায় মোট ৫১ কোটি ৭৯ লাখ ১১ হাজার টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাস্তবায়নের জন্য প্রথম সংশোধিত ডিপিপি ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। পরবর্তীতে প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শুরু করতে দেরি হওয়ায় বাস্তবায়ন মেয়াদকাল এবং প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধির কারণে প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপি ৬৮ কোটি ৫২ লাখ ৫৮ হাজার টাকায় ব্যয়ে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত অনুমোদন করেন পরিকল্পনামন্ত্রী।
বর্তমানে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় একক উৎস পদ্ধতিতে ওই একই প্রতিষ্ঠানকে পুনরায় নিয়োগ, প্রকল্পের আওতায় নতুনভাবে সীমানা প্রাচীর এবং ল্যান্ডস্কেপিং অঙ্গ অন্তর্ভুক্ত করা, কিছু সংখ্যক বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি নতুনভাবে অন্তর্ভুক্তি, বিদ্যমান অঙ্গের ব্যয় বৃদ্ধি, মিনি অডিটরিয়াম তৈরি এবং বাস্তবায়নের মেয়াদ ২ বছর বাড়ার কারণে প্রকল্পটি তৃতীয়বার সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়।
চ্যান্সারি কমপ্লেক্স নির্মাণ, আসবাবপত্র ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি কেনা এবং পরামর্শক ফিসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কার্যক্রম করা হবে এই প্রকল্পের আওতায়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন