জম্মু-কাশ্মিরের স্বায়ত্ত্বশাসন ও বিশেষ অধিকার বাতিল এবং অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের স্থলে রাম মন্দির নির্মাণে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ফলে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) দুটি নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়েছে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিশাল জয় পাওয়া নরেন্দ্র মোদির দল আরেকটি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দিকে এগুতে শুরু করেছে। এবার তাদের লক্ষ্য ‘অনুপ্রবেশকারীদের উচ্ছেদ’ করতে নাগরিকত্ব আইনের সংশোধন এবং পশ্চিমবঙ্গে আসামের মতো নাগরিক তালিকা।
‘নাগরিকত্ব সংশোধন বিল-২০১৬’ লোকসভায় ২০১৬ সালে প্রথমবার উত্থাপন করা হয়। পরে তা যৌথ সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠানো হয়। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে কমিটি পার্লামেন্টে তাদের প্রতিবেদন দাখিল করে এবং তা লোকসভায় পাস হয়। রাজ্যসভায় অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা বিলটি ১৬তম লোকসভায় পাস হয়নি। এখন তা পুনরায় উত্থাপন করা হবে।
বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাশ বিজয়াবারগিয়া বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গের জন্য নাগরিকত্ব আইনের সংশোধন একেবারে প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে।
বিজেপি নেতা বলেন, আমরা যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছি তা বাস্তবায়ন করেছি। কাশ্মির হয়েছে, অযোধ্যও হয়েছে। এবার আমরা নাগরিকত্ব আইন সংশোধন বিল আনব। অনুপ্রবেশকারী ঠেকাতে এবং জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পশ্চিমবঙ্গে এটি করা আবশ্যক। দল এখন পশ্চিমবঙ্গে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করছে। রাজ্যের স্বার্থে অবিলম্বে আমাদের নাগরিকত্ব সংশোধন বিল বাস্তবায়ন করা উচিত।
নাগরিকত্ব সংশোধন বিল বিজেপির একটি বিতর্কিত উদ্যোগ। এতে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সংখ্যালঘু হিন্দু, জৈন, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মালম্বীদের শরণার্থী হিসেবে নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
নরেন্দ্র মোদির দলের আশা, ভারতজুড়ে জাতীয় নাগরিক তালিকা (এনআরসি) তৈরির মাধ্যমে ‘অবৈধ অভিবাসীদের’ চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। তবে সমালোচকরা এই উদ্যোগকে মুসলিম অভিবাসীদের বিতাড়নের উদ্যোগ বলে অভিহিত করছেন।
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গে মোট জনসংখ্যার ত্রিশ শতাংশ মুসলমান। বিজেপির এই উদ্যোগকে রাজ্যের ভোটারদের বিভক্ত করার প্রয়াস হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। রাজ্যটিতে বিজেপি ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে। এই রাজ্যে কখনও ক্ষমতায় না থাকলেও গত কয়েক বছরে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে এবং ২০২১ সালে রাজ্যের ক্ষমতায় যেতে চায় দলটি।
বিজেপি সভাপতি বলছেন, পার্লামেন্টের শীতকালীন অধিবেশনে এই প্রস্তাবিত আইনটি উত্থাপন করা হবে। যদি বিলটি পাস হয় দ্রুতই তা বাস্তবায়ন করা হবে। শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া এরপরই শুরু হবে। সব শরণার্থীকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার পর সরকার পুরো দেশের এনআরসি তৈরি করবে। আমরা যদি নিজেদের নাগরিক না বানাই তাহলে শরণার্থীরা কোথায় যাবে? ফলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এনআরসির মধ্যদিয়ে আমরা শুধু অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করব।
বিজেপির এই প্রস্তাবের সমালোচনা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এটিকে ‘বিভেদ সৃষ্টিকারী’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
কলকাতায় এই বিতর্কিত বিষয়টি তুলে ধরেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কলকাতায় এক বড় সমাবেশে নাগরিকত্ব সংশোধন বিল ও এনআরসি নিয়ে মোদি সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন তিনি। বলেন, আমি আগেও বলেছি, আবারও বলছি। মনে রাখবেন, প্রথমে আমরা নাগরিকত্ব সংশোধন বিল বাস্তবায়ন করব। এরপর এনআরসি শুরু হবে।
অমিত শাহ আরও বলেন, পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীনরা জনগণকে ভুল পথে নিতে চাইছে এবং এনআরসি নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
শীতকালীন অধিবেশনকে ঘিরে পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান শক্তিশালী করতে বিজেপির আরেকটি পরিকল্পনা রয়েছে। রাজ্যসভায় রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি তুলে ধরা হবে।
এক বিজেপি এমপি বলেন, অধিবেশনে আমরা মূলত পশ্চিমবঙ্গেই মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করব। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাংলার পুলিশকে যে প্রতিবন্ধকতায় পড়তে এমন অনেক ঘটনাই রয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন