দ্বিতীয় দফার মোদি সরকার ১০০ দিন পার করার পরে প্রধানমন্ত্রীর মুখোমুখি হবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রায় আড়াই বছর পরে তাদের মধ্যে একান্ত বৈঠক হতে চলেছে। কাল, বুধবার বিকেলে দিল্লিতে তাদের মধ্যে আলোচনা হওয়ার কথা। আজ মঙ্গলবার বিকেলে দিল্লি যাবেন মমতা।
দেশটির আনন্দবাজার পত্রিকার খবর, রাজ্যের বিভিন্ন ‘বকেয়া বিষয়’ ও আর্থিক দাবিদাওয়া নিয়েই নরেন্দ্র মোদির কাছে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী।
তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই সময়ে মোদি-মমতা সাক্ষাৎ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ লোকসভা ভোটের আগে বিরোধী জোটের কর্মসূচিতে যোগ দিতে মমতা একাধিক বার দিল্লি গেলেও ‘সরকারি কাজে’ দীর্ঘদিন যাননি। গত মে মাসে মোদির শপথেও নয়। ঘোষিত ভাবেই বিভিন্ন সরকারি বৈঠক তিনি এড়িয়ে গিয়েছেন। গত জুনে নীতি আয়োগের বৈঠক বা ‘এক দেশ এক ভোট’ নিয়ে আলোচনা, কোনও কিছুতেই মমতাকে যোগ দিতে দেখা যায়নি। এমনকি, দেশে ‘সুপার ইমার্জেন্সি’ চলছে বলে দু’দিন আগেই মন্তব্য করেছেন তিনি।
অন্য দিকে, সিবিআই তদন্ত এখন গুরুত্বপূর্ণ মোড় নিয়েছে। পুলিশকর্তা রাজীব কুমার রীতিমতো চাপে। সারদা, নারদ মামলায় তলব করা হচ্ছে রাজ্যের একের পর এক মন্ত্রী ও তৃণমূল নেতাকে। পাশাপাশি রাজ্যের অর্থ ভাণ্ডারে টান পড়েছে। সব মিলিয়ে মোদির সঙ্গে বৈঠক তাই রাজনৈতিক ভাবেও অর্থবহ হতে পারে।
মমতার শিবির থেকে অবশ্য বলা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে মুখ্যমন্ত্রীর বিভিন্ন কাজ থাকে। অনেক দিন জমে থাকা সেই সব কাজ নিয়েই এ বারের সাক্ষাৎকার। এর পিছনে অন্য কোনও কারণ খোঁজা ঠিক নয়।
তৃণমূলের শীর্ষ স্তর থেকেও দাবি করা হয়, মমতার দিল্লি সফরে কোনও ‘রাজনৈতিক’ কর্মসূচি নেই। সবটাই সরকারি।
যদিও মমতার সফর নিয়ে বিরোধী দলগুলি কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘মাথা বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী।’
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীরও বক্তব্য, ‘মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতেই পারেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে এই সময়টা বেছে নেওয়ায়। কানে টান পড়তেই কি তিনি মাথা বাঁচাতে চাইছেন?’
কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানের মন্তব্য, ‘ঘোষিত কারণের বাইরে আর কোনও বিষয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে মমতা তুলবেন কি না, সেটা কি জানা যাবে?’
সূত্রের খবর, মমতা প্রধানমন্ত্রীর সুবিধা অনুযায়ী বুধ বা বৃহস্পতিবার সময় চেয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে বুধবারই তাকে সময় দেওয়া হয়েছে। ঘটনাচক্রে আজ মঙ্গলবার মোদির জন্মদিন। তার জন্য জন্মদিনের ‘শুভেচ্ছা’ ছাড়াও শারদ উপহার নিয়ে যেতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। দিল্লিতে আরও কয়েক জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছেও পৌঁছতে পারে তার উপহার। তিনি ব্যক্তিগত ভাবে দু’-এক জনের সঙ্গে দেখাও করতে পারেন।
গত বছর ২৫ মে বিশ্বভারতীর সমাবর্তনে মমতার সঙ্গে শেষ বার দেখা হয়েছিল মোদির। তখন উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। পরে শান্তিনিকেতনেই হাসিনার সঙ্গে মোদির একান্ত বৈঠক হয়। মমতাকে সেখানে ডাকা হয়নি। তার সঙ্গে মোদির শেষ একান্ত বৈঠক হয়েছে ২০১৭ সালের ১৯ এপ্রিল দিল্লিতে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন