সৌদি আরবের দুটি তেলক্ষেত্রে ড্রোন হামলার প্রতিশোধ নিতে ইরানের হামলার পাঁয়তারা করছে যুক্তরাষ্ট্র। ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহী গোষ্ঠী শনিবারের ওই হামলার দায় স্বীকার করলেও এজন্য তেহরানকে দায়ী করছে ওয়াশিংটন।
খুব শিগগিরই এর প্রতিশোধ নেয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছে। সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, সৌদি হামলার জবাব দিতে ‘পুরোপুরি প্রস্তুত’ রয়েছে মার্কিন বাহিনী। তেল স্থাপনায় হামলার পেছনে ইরানই দায়ী- এ দাবির পক্ষে ইতিমধ্যে তথ্য-প্রমাণও হাজির করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
উপগ্রহের ছবি ও গোয়েন্দা তথ্যকে সামনে এনেছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক কর্মকর্তা। তবে তেহরান ওই ড্রোন হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে।
সেই সঙ্গে ইরানে হামলার চেষ্টা হলে পারস্য উপসাগরে মোতায়েন মার্কিন রণতরীগুলো ডুবিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছে তেহরান। এর মধ্যেই সৌদির তেল ক্ষেত্রগুলোতে আবারও হামলার হুমিক দিয়েছে হুথি বিদ্রোহীরা। খবর এএফপি ও রয়টার্সের।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ তেল রফতানিকারক দেশের গুরুত্বপূর্ণ ওই দুটি প্ল্যান্টে হামলায় বৈশ্বিক তেল সরবরাহ পাঁচ শতাংশেরও বেশি হ্রাস পেয়েছে। সোমবার থেকে তেলের বাজারও চড়া।
তেলের দাম ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এর মধ্যেই এক টুইটার বার্তায় ট্রাম্প বলেন, ‘সৌদি আরবে বিশ্বের বৃহত্তম তেল স্থাপনা হামলার শিকার হয়েছে।
কে এই অপরাধী তা আমরা জানি; সেটি বিশ্বাস করার মতো যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। আমরা ‘লকড অ্যান্ড লোডেড’ অর্থাৎ সম্পূর্ণ প্রস্তুত। তবে সৌদি রাজতন্ত্র কি বিশ্বাস করে তা জানার প্রতীক্ষায় রয়েছি আমরা।
সেই ভিত্তিতেই আমরা অগ্রসর হব।’ যুক্তরাষ্ট্র সামরিক ব্যবস্থা নেবে- এই টুইটকে তারই ইঙ্গিত বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এই প্রথমবারের মতো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ড্রোন হামলার বিরুদ্ধে সামরিক জবাব দেয়ার সরাসরি ইঙ্গিত দিলেন। এই ড্রোন হামলায় বিশ্বের বৃহত্তম তেল উৎপাদক সৌদি আরবের তেল উৎপাদন অর্ধেক হয়ে গেছে।
বৃদ্ধি পেয়েছে তেলের মূল্য। বাধ্য হয়ে সৌদি আরব এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই নিজেদের রিজার্ভ খুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। পাঁচ বছর ধরে যুদ্ধ করছে সৌদি আরব ও ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা।
আরামকোর স্থাপনাগুলোতে হামলার দায় স্বীকার করেছে হুথি বিদ্রোহীরা। গত জুনে ইরানের বিরুদ্ধে প্রায় একই শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করেছিলেন ট্রাম্প। তখন তিনি বলেছিলেন ইরানে হামলার জন্য ‘লকড অ্যান্ড লোডেড’ বা পূর্ণমাত্রায় প্রস্তুত ছিল তার দেশ। কিন্তু তিনি শত শত প্রাণ যাওয়ার শঙ্কায় সে নির্দেশ দেননি। বিশ্বের বৃহত্তম তেল সরবরাহ স্থাপনাসহ একাধিক সৌদি তেল স্থাপনায় শনিবার ড্রোন হামলা চালায় ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও-এর দাবি, হুথিদের আড়ালে এই হামলা চালিয়েছে আসলে ইরান।
এই টুইটে ইরানের নাম উল্লেখ করেননি ট্রাম্প। তবে এ হামলার ফলে ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্রের চলমান টানাপোড়েন আরও বেড়েছে। অথচ ট্রাম্প এবং ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সম্ভাব্য বৈঠক নিয়ে দরকষাকষি চলছিল।
পম্পেও বলেছিলেন, ‘ইয়েমেন থেকে এই হামলা হয়েছে এমন কোনো লক্ষণ নেই।’ তবে এ ঘটনার দায় নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এর মুখপাত্র সৈয়দ আব্বাস মৌসাভি। তিনি বলেন, ‘কূটনৈতিকভাবে এ ধরনের অন্ধের মতো মন্তব্য করা ভীষণ অন্যায়। এটা দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ।’
ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) হুশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ইরানের চারদিকে দুই হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বের সব মার্কিন সামরিক ঘাঁটি ও যুদ্ধজাহাজ ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আওতায় রয়েছে।
আইআরজিসি’র অ্যারোস্পেস ডিভিশনের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমির আলী হাজিযাদে রোববার এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে এ হুশিয়ারি দেন।
তিনি বলেন, গত জুন মাসে একটি মার্কিন বিমানবাহী রণতরী টার্গেট করে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা হয়েছিল। এবার মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন ঘাঁটিগুলোর পাশাপাশি তাদের বিমানবাহী জাহাজ ও অন্যান্য রণতরী আমাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও ক্ষেপণাস্ত্রের আওতায় রয়েছে।
দুই হাজার কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে কোনো মার্কিন ঘাঁটি ইরানের হামলার আওতামুক্ত নয়।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন