বিদ্রোহীদের কারণে প্রায় তিন মাস পর নতুন করে ছাত্রদলের কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সিদ্ধান্তে অটল থাকায় শেষ পর্যন্ত ১৪ সেপ্টেম্বর বহুল প্রত্যাশিত কাউন্সিল হতে যাচ্ছে। তবে নয়া সম্ভাবনাময় ছাত্রদল বেরিয়ে আসতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। কারণ সিন্ডিকেটের থাবা। ছাত্রদলকে নিয়ন্ত্রণ করে আসছে মূলত চারটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট।
এদিকে গত শনি ও রবিবার ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্বে স্থান পেতে সভাপতি পদে ৪২ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ৬৬ জন মনোনয়নপত্র কিনেছেন। এসব গ্রুপ নিজেদের প্রার্থী এবং ডামি প্রার্থীও ঘোষণা করতে শুরু করেছে। এসব গ্রুপ ২০ বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে ছাত্রদলকে নিয়ন্ত্রণ করায় দেশজুড়ে তাদের অনুসারী রয়েছে। সারা দেশে ছাত্রদলের ১১৭টি সাংগঠনিক ইউনিটের ৫৮০ জন কাউন্সিলরই কোনো না কোনোভাবে এসব গ্রুপের আশীর্বাদে পদ পেয়েছেন। এ ক্ষেত্রে ‘বড় ভাই’দের কথার বাইরে তারা যাবে কি না, সেটি ভোট হওয়ার আগ পর্যন্ত পরিষ্কার নয়।
জানতে চাইলে কাউন্সিলের আপিল কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কাউন্সিলকে ঘিরে অনেক কিছু হবে, এটাকে বড় করে দেখার সুযোগ নেই। সিন্ডিকেট হিসেবে যেটা আসছে, সেটা সুবিধাবাদিতার অংশ। কেউ যদি কোনো নেতৃত্ব পছন্দ করে, তা খারাপ কিছু না। কিন্তু সেটাকে স্বাভাবিক পথে নিয়ে আসা জরুরি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ ব্যাপারে আন্তরিক। এর বাইরে কিছু হলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন।’
সিন্ডিকেটের প্রার্থী যাঁরা : ছাত্রদল নিয়ন্ত্রণ করে এমন চারটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট হলো নিখোঁজ বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী গ্রুপ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান গ্রুপ, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানির নোয়াখালী গ্রুপ ও যুবদল সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর গ্রুপ। এ ছাড়া বরিশাল গ্রুপ, খুলনা-যশোর-বাগেরহাট গ্রুপসহ কয়েকটি গ্রুপ রয়েছে। এসব গ্রুপের নেতৃত্বে থাকা নেতারা কোনো না কোনো সময় ছাত্রদলের শীর্ষ নেতৃত্বে ছিলেন। ইলিয়াস আলী গ্রুপের নরসিংদীপন্থী উপগ্রুপ চাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আল মেহেদী তালুকদারকে সভাপতি করতে। এই গ্রুপে ডামি প্রার্থীও ঠিক করা হয়েছে একজনকে। নোয়াখালী ও খুলনা-যশোর-বাগেরহাট মিলে প্রার্থী দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক হাফিজুর রহমানকে। এ গ্রুপটির সমন্বয় করছেন তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ রকিবুল ইসলাম বকুল।
আমানউল্লাহ আমান গ্রুপ ও সুলতান সালাউদ্দিন টুকু গ্রুপ মিলে সভাপতি হিসেবে সদ্য সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক বৃত্তি ও ছাত্র কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ ও সহ-অর্থবিষয়ক সম্পাদক আশরাফুল আলম ফকির লিঙ্কনকে নিয়ে মাঠে নেমেছে। বরিশাল গ্রুপ ছাত্রদল নেতা মামুন খান ও সাইফুদ্দিন জুয়েলকে বেছে নিয়েছে বলে জানা গেছে।
বড় ভাইদের কথায় এবার কাজ হবে না : রংপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মনিরুজ্জামান হিজবুল, বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রেজাউল করিম রনি, কক্সবাজার জেলা ছাত্রদল সভাপতি শাহাদাত হোসেন রিপনসহ কালের কণ্ঠের সঙ্গে বিভিন্ন জেলার বেশ কয়েকজন কাউন্সিলরের কথা হয়। তাঁদের বক্তব্য হচ্ছে ভোট তো দেব গোপনে, বড় ভাই আর সিন্ডিকেট ভাই যে যা-ই বলুক, এবার কাজ হবে না।
কঠোর বার্তা দেবেন তারেক : তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, যারা কাউন্সিলকে বিতর্কিত করতে কাজ করবে, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তাঁকে তারেক রহমান জানিয়েছেন। স্থায়ী কমিটির ওই নেতা জানান, কাউন্সিলের আগেই সিন্ডিকেট নেতাদের শনাক্ত করে ফোনে কঠোর বার্তা দেবেন তারেক।
কাউন্সিলের পরও কমিটিতে থাকবে গোঁজামিল : কাউন্সিলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন। কিন্তু বাকি পদগুলো কিভাবে পূরণ করা হবে, সেটি এখনো পরিষ্কার নয়। এর অর্থ, কাউন্সিল হলেও কমিটি গঠনে গোঁজামিলের আশঙ্কা রয়েই যাচ্ছে। বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যাঁরা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হবেন, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করেই ছাত্রদলের বাকি পদগুলো পূরণ করা হবে।’
প্রসঙ্গত, ছাত্রদলের নির্বাচনে মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার তারিখ ১৯ ও ২০ আগস্ট। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৩১ আগস্ট। ২২ থেকে ২৬ আগস্ট যাচাই-বাছাই শেষে ২ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। ১৪ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ভোটগ্রহণ হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন