কূটনীতিকদের বরাত দিয়ে ভারতীয় শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যমে এ কথা বলা হয়েছে। ফলে পানি কোন দিকে গড়ায় তার ওপর নয়াদিল্লি সতর্ক দৃষ্টি রাখছে। নিউজ ২৪
কাশ্মির ইস্যুতে জাতিসংঘের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে কোন চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হলেও চীন তাদের অবস্থান পরিস্কার করেছে। এমনটাই মনে করছেন ভারতীয় কূটনীতিকরা।
তাদের মতে, কাশ্মির নিয়ে চীনের সঙ্গে নতুন করে ক্ষত তৈরি হলো মোদি সরকারের। আগামী অক্টোবর মাসে ভারতে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের দ্বিতীয় ঘরোয়া আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু তার আগেই জম্মু ও কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের বিষয়টি নিয়ে চীন নতুন করে কূটনৈতিক বিরোধিতা দুদেশের মধ্যে টানাপড়েন শুরু হলো বলে মনে করা হচ্ছে।
দীর্ঘ ৪৯ বছর পর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রুদ্ধদ্বার বৈঠকের আলোচনায় উঠে এসেছে জম্মু ও কাশ্মির ইস্যু। যে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছিল পাকিস্তানের পাশাপাশি চীনও।
ভারতীয় গণমাধ্যম বলছে, এটা ঠিকই যে, জাতিসংঘের সিলমোহর মারা কোনো ভারতবিরোধী বিবৃতি দেয়নি নিরাপত্তা পরিষদ। কিন্তু সূত্র বলছে, বিষয়টি এখানেই মিটে যাচ্ছে না।
কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার বলছে, রুদ্ধদ্বার বৈঠকটি করানোর পেছনে পাকিস্তানের প্রতি চীনের সখ্যই একমাত্র কারণ নয়। বরং এর পেছনে রয়েছে বেইজিংয়ের নিজস্ব স্বার্থ ও উদ্বেগও।
খবরে বলা হয়েছে, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে আলোচনায় কাশ্মির নিয়ে মোদি সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে ঘোর অসন্তোষ প্রকাশ করে জানিয়েছিলেন, এর ফলে চীনের সার্বভৌমত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
শুক্রবার নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের আগে ও পরে এবং বৈঠকের ভেতরেও সংস্থাটিতে নিযুক্ত চীনের স্থায়ী প্রতিনিধি একই কথার পুনরাবৃত্তি করেছেন।
আগামী মাসে নিউ ইয়র্কে নিরাপত্তা পরিষদে যখন কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার নিয়ে ইসলামাবাদ উত্তাল হবে, তাতে প্রবল ইন্ধন থাকবে বেইজিংয়েরও।
সূত্র মতে, চীন সতর্ক হয়ে গিয়েছিল সম্প্রতি ভারতের সংসদীয় অধিবেশনে কেন্দ্রীয় দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বক্তৃতার সময়েই। যেখানে অমিত শাহ বলেছিলেন, জম্মু ও কাশ্মির বলতে গিলগিট, বেলুচিস্তান , পাক শাসিত কাশ্মির এবং আকসাই চীনকেও বোঝায়।
আকসাই চীনে পিপলস লিবারেশন আর্মির উপস্থিতি নিয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন সেদিন। অথচ, এত দিন পর্যন্ত আকসাই চীনকে ভারত ‘বিতর্কিত ভূখণ্ড’ বলেছে।
চীন মনে করছে, লাদাখকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করে বিভাজিত করার পর আকসাই চীন নিয়েও সক্রিয় হবে ভারত। পাশাপাশি ১৯৬২ সালের যুদ্ধের পর চীনের হাতে পাকিস্তানের তুলে দেয়া ৫১৮৩ বর্গ কিলোমিটার জমি নিয়েও এবার টানাপড়েন তৈরি হতে পারে।
কূটনীতিকরা মনে করছেন, চীন তার সামরিক এবং অর্থনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অন্য দেশকেও (বিশেষত নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী এবং অন্য অস্থায়ী সদস্য দেশ) সঙ্গে নেয়ার চেষ্টা শুরু করেছে।
শুক্রবারের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে রুশ প্রতিনিধির বক্তব্য ইতিমধ্যেই কপালে ভাঁজ ফেলেছে ভারতীয় কর্মকর্তাদের। কাশ্মির সমস্যার সমাধান ভারত এবং পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক বিষয়, এ কথা বলার পরও রুশ প্রতিনিধি যোগ করেছেন, এ বিষয়ে জাতিসংঘের সনদ এবং প্রস্তাবগুলিকেও গুরুত্ব দিতে হবে।
অথচ ভারতের অবস্থান হলো- কাশ্মির সমস্যার সমাধানে কোনো তৃতীয় পক্ষের নাক গলানো মানা হবে না। আর তাই রাশিয়ার ওই মন্তব্যের পেছনে বেইজিংয়ের ইন্ধন রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে ভারত।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন