অবৈধভাবে ইউরোপ যাওয়ার সময় নৌকাডুবিতে নিহত সিরীয় শিশু আয়লান কুর্দির কথা মনে পড়ে? ২০১৫ সালে তুরস্ক উপকূলে ভেসে আসা তিন বছর বয়সী শিশুটির উপুড় হওয়া লাশের ছবি পৃথিবীর সব বিবেকবান মানুষকে তীব্র ঝাঁকুনি দিয়েছিল। আয়লানের মৃত্যু যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল, মধ্যপ্রাচ্যে সহিংসতা আর ইউরোপের শরণার্থী সংকটের মধ্যে কতটা গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। শিশুটির মৃত্যু সবাইকে কাঁদালেও পৃথিবীর অবস্থা আজও বদলায়নি। এবার অনেকটা একই রকম মৃত্যু দিয়ে যেন আবারও আয়লান কুর্দিকে মনে করিয়ে দিলেন এল সালভাদরের নাগরিক অস্কার আলবের্তো মারটিনেজ রামিরেজ ও তার ২৩ মাস বয়সী মেয়ে ভ্যালেরিয়া। অবৈধভাবে মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকার পথে রিও গ্রান্ডে নদীতে ডুবে মরতে হয়েছে তাদের। অভিবাসনপ্রত্যাশী এই বাবা-মেয়ের লাশ সম্প্রতি
ভেসে আসে রিও গ্রান্ডে নদীর মেক্সিকোর মাতামোরোস অংশে। যার ছবি এখন ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্ব মিডিয়ায়।
মর্মস্পর্শী ছবিটি তুলেছেন মেক্সিকোর সংবাদপত্র লা জর্নাদার ফটোগ্রাফার জুলিয়া লে ডাক। এতে দেখা যায়, বাবা অস্কার
ও ছোট্ট ভ্যালেরিয়ার নিথর দেহ উপুড় হয়ে পড়ে আছে নদীর তীরে। শিশুটির পরনে লাল রঙের প্যান্ট ও পায়ে জুতা। বাবা আর মেয়ের মাথার কিছু অংশ কালো কাপড়ে ঢাকা। শিশুটির একটি হাত তখনো বাবার কাঁধ জড়িয়ে ধরে আছে। ছবিটি প্রসঙ্গে ফটোগ্রাফার জুলিয়া লিখেছেন, মৃত্যুর আগে মেয়েকে বাঁচাতে বাবা প্রাণপণ চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু প্রচ- স্রোতে তাদের এই করুণ পরিণতি।
বিভিন্ন গণমাধ্যম জানায়, এল সালভাদরের নাগরিক অস্কার আলবের্তো মারটিনেজ রামিরেজ (২৫) তার ২৩ মাসের মেয়ে ভ্যালেরিয়া ও স্ত্রী তানিয়াকে গত রবিবার স্থানীয় সময় বিকালে মেক্সিকো থেকে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিতে চেয়েছিলেন। ঘটনার সময় তানিয়া আগেই রিও গ্রান্ডে নদী পেরিয়ে যান। পরে অস্কার মেয়েকে কাঁধে নিয়ে সাঁতরে নদী পার হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রচ- স্রোতে তারা ডুবে যান। কিন্তু মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অস্কার মেয়েকে ছাড়েননি। পরে পানিতে ডুবে তারা দুজনই মারা যান।
অস্কারের স্ত্রী তানিয়া লা জর্নাদাকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে যেতে আমরা গত দুই মাস ধরে মাতামোরোসের একটি শরণার্থী শিবিরে অপেক্ষা করছিলাম। তীব্র গরমের মধ্যে দীর্ঘ অপেক্ষার পরও স্থলসীমান্ত পার হতে না পারায় তারা সিদ্ধান্ত নেন, নদী পার হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকবেন। তবে চোখের সামনেই আমি আমার স্বামী ও মেয়েকে স্রোতে ডুবে যেতে দেখেছি।
এদিকে অস্কার ও ভ্যালেরিয়ার এই করুণ মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন এল সালভাদরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্দ্রা হিল। জনগণের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, তারা যেন দেশেই থাকে, উন্নত জীবনের আশায় বিদেশে না যায়। একই সঙ্গে তিনি দেশের অর্থনৈতিক সংকট সমাধানেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন