বিবিসি উর্দূর বিশ্লেষণ
ইরান কর্তৃক মার্কিন সামরিক ড্রোন ভূপাতিত করার পর মধ্যপ্রাচ্যে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। সোমবার থেকে ইরানের বিরুদ্ধে নতুন করে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করছে যুক্তরাষ্ট্র।
এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ও তার কার্যালয়ও রয়েছে।
চলমান এ উত্তেজনায় যুক্তরাষ্ট্র কি ইরানের সঙ্গে সংঘাতে জড়াবে? এ প্রশ্নটিই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে সর্বত্র। যদি দেশ দু’টি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে এর রূপরেখা কেমন হবে?
নিকট অতীতে আফগানিস্তান ও ইরাকে হামলা চালিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। ইরানে তাদের হামলা এ দুটি দেশে চালানো আগ্রাসনের সঙ্গে কতটুকু মিলবে?
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আফগানিস্তান এবং ইরাকের অভিজ্ঞতা থেকে যুক্তরাষ্ট্র এটা বুঝেছে যে আধুনিক যুগে কোন যুদ্ধে প্রচলিত অর্থে 'জয়ী' হওয়া যায় না। যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধে হারাতে পারবে, ইরানও এমন মনে করে না।
যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত আলি সারওয়ার নকী এ বিষয়ে বলেন, আফগানিস্তান ও ইরাকের মতো ইরানে হামলা চালাবে না যুক্তরাষ্ট্র। আগের মতো সে পরিস্থিতি এখন নেই। কারণ যুদ্ধ যেখানেই হোক, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও তা ব্যাপক প্রভাব ফেলে।
তাছাড়া ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ হলে তা হবে ব্যয়বহুল, আর এর ফল কী হবে তা আগে থেকে বলাও কঠিন। নতুন কোনো যুদ্ধে জড়ালে এতে যে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ হবে তা নিশ্চিত নয়। এর দ্বারা মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ক্রমবর্ধমান প্রভাব কতটুকু কমবে, সেটিও একটি প্রশ্ন রয়েছে।
মূলত দু পক্ষই এ ক্ষেত্রে কৌশলগত বিজয় চায়। ইরান মার্কিন যে ড্রোনটি ভূপাতিত করেছে - তা অত্যন্ত উচ্চ প্রযুক্তির এবং অত্যন্ত ব্যয়বহুল। আফগানিস্তান ও ইরাকের মতো ইরান ততটা দূর্বল নয়।
তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা ব্যবস্থা যত উন্নতই হোক না কেন - তাদের কিছু দুর্বলতাও রয়েছে।
এখানে একটি পক্ষ খুবই শক্তিশালী, অন্য পক্ষ অপেক্ষাকৃত দুর্বল।
পাকিস্তানের নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সামরিক ব্যক্তিত্য মোহাম্মদ আমের রানা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানে হামলা চালালে শিয়া সম্প্রদায়ের বিশাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে তা ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করবে। বিপরীতে সৌদি আরব, কুয়েতসহ আরব রাষ্ট্রগুলোও প্রতিক্রিয়া দেখাবে।
তিনি বলেন, লেবাননের হিজবুল্লাহসহ ইরানের মিত্র যে দেশগুলো রয়েছে, ইরান তাদের এ যুদ্ধে সম্পৃক্ত করতে চাইবে। বিপরীতে সৌদি আরবও তার মিত্র দেশগুলোকে সহযোগিতার আহ্বান জানাবে। সে ক্ষেত্রে যুদ্ধের পরিধিও বাড়বে, জটিলতাও বাড়বে।
তাই এখন কোনো পক্ষই যুদ্ধে জড়ানোকে বুদ্ধিমানের কাজ মনে করছেন না, বরং আগের মতো যুদ্ধের বিষয়টি এখন তারা এড়িয়ে চলছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের এখন মূল টার্গেট হলো, সৌদি আরবসহ আরব দেশগুলোর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব কমানো। সে লক্ষ্যে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে রয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও।
পারস্য উপসাগরীয় দেশ, ইউরোপ ও এশিয়াকে নিয়ে ইরানের বিরুদ্ধে একটি জোট গঠনের চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন