ওমান উপসাগরে গত সপ্তাহে দুটো তেলের ট্যাংকারে হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের মধ্যে যেভাবে উত্তেজনা বাড়ছে, তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র এই দুটো ঘটনার ওপর নতুন কিছু ছবি প্রকাশ করে বলছে, ইরান যে ঐ দুটো হামলার পেছনে ছিল এসব ছবি তার অকাট্য প্রমাণ। ইরান অবশ্য বলছে, এসব হামলার কিছুই তারা জানেনা। খবর বিবিসি বাংলার
দুই বৈরি দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র উপসাগরে বাড়তি সৈন্য পাঠিয়েছে।
আর বিপজ্জনক এই উত্তেজনা প্রশমনে এই দুই দেশের প্রতি সারা বিশ্ব থেকে আহ্বান জানানো হচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তেলের ট্যাংকার দুটোতে হামলার হোতা যে ইরান, তার প্রমাণ সর্বত্র।
সোমবার, পেন্টাগন থেকে নতুন কিছু রঙ্গিন ছবি প্রকাশ করা হয়েছে যাতে দেখা যাচ্ছে জাপানী-পতাকাবাহী ট্যাংকারের খোলে বিরাট একটি ফুটো, যারা পাশে অবিস্ফোরিত একটি মাইনের কিছু অংশ।
আরেকটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ইরানের রেভল্যুশনারী গার্ড বাহিনীর সদস্যরা অবিস্ফোরিত একটি মাইন সরিয়ে নিচ্ছে।
এসব ছবি প্রকাশের পর মার্কিন অস্থায়ী প্রতিরক্ষা প্যাট্রিক শানাহান জানান আত্মরক্ষার্থে মধ্যপ্রাচ্যে আরো এক হাজার সৈন্য পাঠাচ্ছেন তিনি। গতমাসেই সেখানে দেড় হাজার সৈন্য মোতায়েন করা হয়।
ইরানের বাহিনী এবং তাদের পোষ্যরা যে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন স্বার্থ এবং সৈন্যদের জন্য হুমকি তৈরি করেছে, ইরানের এই সাম্প্রতিক হামলা সেটাই প্রমাণ করে,এক বিবৃতিতে বলেন মি শানাহান।
ইরানের প্রতিক্রিয়া
ইরান ট্যাংকারে হামলায় তাদের ভূমিকার অভিযোগ পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বলেছে, আমেরিকার এসব দাবি বানোয়াট।
সোমবার প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেন, ইরানকে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করতে ব্যর্থ হয়েছে আমেরিকা।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভিতে এক ভাষণে তিনি বলেন, আমেরিকার মূল লক্ষ্য ইরানকে একঘরে করা।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন
যুক্তরাষ্ট্রের সাথে গলা মিলিয়ে ট্যাংকারে হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করেছে ব্রিটেন। তবে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট দুপক্ষকে উত্তেজনা প্রশমনে অনুরোধ করেছেন।
হান্ট বলেন, আমরা আমাদের নিজস্ব গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ করেছি। কী ঘটেছে তার ভিডিও আমরা দেখেছি। প্রমাণ দেখেছি। আমরা বিশ্বাস করিনা (ইরান ছাড়া) অন্য আর কেউ এ কাজ করতে পারে। এই বিরোধের দুটো পক্ষই মনে করে অন্যপক্ষ যুদ্ধ চায়না। আমরা দু পক্ষকেই উত্তেজনা প্রশমনের জন্য অনুরোধ করছি।
সোমবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ট্যাংকারে হামলা ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য জাতিসংঘকে অনুরোধ করেছেন।
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো মাস বলেন, আমরা মার্কিন এবং ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের বক্তব্য জানি। তারা যা বলছেন তাতে আপনি প্রায় নিশ্চিত হতে পারেন যে এটা ইরানের কাজ।
এখন আমরা আমাদের সূত্রে পাওয়া তথ্যের সাথে তা মিলিয়ে দেখছি। আমি মনে করছি এক্ষেত্রে খুব সতর্কভাবে এগুতে হবে।
ইরান ডসিয়ের হুঁশিয়ারি
ফিনল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেক্কা হাভিসো বলেছেন, অকাট্য প্রমাণ ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবেনা।
লুক্সেমবার্গের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ আসেলবর্ন ২০০৩ সালে ইরাকে হামলার আগে ভুল গোয়েন্দা রিপোর্টের প্রসঙ্গ তুলেছেন।
১৬ বছর আগেও যেমন তেমনি আজও অমি বিশ্বাস করি বন্দুক দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা ভুল হবে।
রাশিয়া
মধ্যপ্রাচ্যে অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েন করে যুদ্ধের উস্কানি না দেওয়ার জন্য আমেরিকাকে আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়া।
রুশ ডেপুটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিবকভ বলেন, আমরা বেশ কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করছি যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, মনস্তাত্ত্বিক এবং সেই সাথে সামরিক চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রেখেছে।
অস্থিতিশীল এই অঞ্চলে এ ধরনের অবিবেচনা-প্রসূত কাজ থেকে বিরত থাকতে আমরা তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) এবং ঐ অঞ্চলে তাদের মিত্রদের বারবার সাবধান করেছি।
চীন
চীনও উপসাগরে সংযত আচরণের জন্য ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টির যে কৌশল, যুক্তরাষ্ট্রের উচিৎ তা পরিহার করা। একতরফা আচরণ আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। এতে কোনো সমস্যার সমাধান তো হয়ইনা, বরঞ্চ আরো বড় সমস্যা তৈরি করে।
সৌদি আরব
ট্যাংকারে হামলা বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। অবশ্য তিনি বলেন, সৌদি আরব কোনো যুদ্ধ চায়না।
সৌদি এক পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধ চাইনা কিন্তু আমাদের জনগণ, দেশ ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়লে, আমরা জবাব দিতে কুণ্ঠাবোধ করবো না।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন