জেনারেল আনোয়ার এশকি, সৌদি আরবের সাবেক সামরিক কমান্ডার। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তার দেশ ইসরায়েলি দখলদারিত্বের মুখে ফিলিস্তিনিদের রক্ষা করতে বাধ্য নয়। তিনি আরও বলেছেন, ইসরায়েল নয় বরং ইরানের বিরুদ্ধেই সৌদি আরবের সামরিক অভিযান চালানো উচিত। আনোয়ার এশকি বর্তমানে সৌদি আরবের ‘মিডল ইস্ট সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ’র চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি বিবিসি আরবি বিভাগকে গত বৃহস্পতিবার দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আরো বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনিদের রক্ষার বিষয়ে সৌদি আরবের বাড়তি কোনো দায়িত্ব নেই। ফিলিস্তিনিরা যেহেতু সৌদি নাগরিক নন সে কারণে মুসলিম এবং নির্যাতিত হওয়া সত্ত্বেও রিয়াদের কাছে থেকে সুরক্ষা পাওয়ার কোনো অধিকার তারা রাখেন না।’
আনোয়ার এশকি তার অবস্থান স্পষ্ট করে বিষয়টিকে উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘যদি আপনার নিজের এবং আপনার প্রতিবেশীর বাড়িতে আগুন লাগে তাহলে আপনি স্বাভাবিকভাবেই নিজের বাড়ির আগুন নেভানোর জন্য ছুটে যাবেন।’
সাক্ষাৎকারে ইসরায়েলের পক্ষে সাফাই গেয়ে সৌদি এ কর্মকর্তা বলেন, ‘বাস্তবতা হচ্ছে ইসরায়েল কখনো সৌদি আরবে আগ্রাসন চালায়নি, সে কারণে তেল আবিবের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের কোনো জবাব দেয়ারও প্রশ্ন নেই। ইসরায়েলকে নিছক সন্দেহবশত শত্রু ভাবা হয়।’
প্রসঙ্গত, জেনারেল এশকি সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কয়েকবার ইসরায়েল সফর করেছেন। আঞ্চলিক সংঘাতের জন্য সৌদি এ কর্মকর্তা ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানকে দায়ী করে বলেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নয় বরং সৌদি আরবের উচিত ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানো।
ইহুদিবাদী ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের যখন দৃশ্যত সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হচ্ছে তখন জেনারেল এশকি এসব কথা বললেন। সম্প্রতি সৌদি যুবরাজ মুহাম্মাদ বিন সালমানও ইসরায়েলের পক্ষে দাঁড়িয়ে বলেছেন, শান্তির জন্য ফিলিস্তিনদের মার্কিন পরিকল্পনা মেনে নেয়া উচিত, না হয় তাদের চুপ থাকতে হবে।
মোহাম্মদ বিন সালমানকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল নিজেদের পিতৃপুরুষের ভূমিতে একটি জাতিরাষ্ট্র হিসেবে ইহুদিদের বসবাসের সুযোগ আছে বলে তিনি মনে করেন কি না। তিনি উত্তরে বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, যে কোনো স্থানেই প্রত্যেক মানুষের শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের অধিকার রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, নিজেদের ভূমির ওপর ফিলিস্তিনি এবং ইসরায়েলিদের শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাসের পূর্ণ অধিকার আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন একটি শান্তিচুক্তি দরকার। যাতে সব পক্ষই স্থিতিশীল ও স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে।’
সৌদি আরবকে এর পূর্বে এমনভাবে ইহুদি সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ইসরায়েলকে জনসম্মুখে স্বীকৃতি দেতে খুব কমই দেখা গেছে। তাই বলে এটি কোনো অভূতপূর্ব ঘটনা নয়। মিসর এবং জর্ডান ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। সৌদি আরবের এমন শান্তিপূর্ণ পদক্ষেপ পূর্বের অন্য যে কোন সময়ের থেকে আঞ্চলিক শান্তি ব্যবস্থাকে ত্বরান্বিত করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশ্বের বহু মুসলিম প্রধান দেশের সাথে ইসরায়েলের সরাসরি কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। সেই দেশগুলো বরং ইসরায়েলের সাথে বাণিজ্য এবং প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে বড় ধরনের সুবিধা ভোগ করছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন