রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের মধ্যে প্রথম শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠক শেষে দুই নেতা জানিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে এবং এ নিয়ে তাঁরা উভয়েই সন্তুষ্ট। বৈঠকে মার্কিন প্রভাব মোকাবেলায় দুই দেশের আরো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরির প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তাঁরা। একই সঙ্গে কোরীয় উপদ্বীপের পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ ইস্যুতে সফল আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুই নেতা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাশিয়ার দূরপ্রাচ্যের বন্দরনগরী ভ্লাদিভোস্তকে এই ঐতিহাসিক শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠক ভেঙে যাওয়ার পর এই প্রথম কোনো বিশ্বনেতার সঙ্গে বৈঠক করলেন উন। ধারণার চেয়েও বেশি সাড়ে তিন ঘণ্টা বৈঠক করেন দুই নেতা। এর মধ্যে প্রায় দুই ঘণ্টা একান্ত আলোচনা করেন তাঁরা। বৈঠকের শুরুতে কিম জং উন রাশিয়া সফরে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য পুতিনকে ধন্যবাদ জানান। এ সময় রুশ প্রেসিডেন্ট আমন্ত্রণ রক্ষা করার জন্য উনকে ধন্যবাদ জানান।
একান্ত বৈঠক শুরুর আগে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন ও উত্তর কোরীয় নেতা উন করমর্দন করেন। বৈঠক শেষে সংক্ষিপ্ত এক বিবৃতিতে দুই নেতা বলেন, তাঁরা উভয়েই একটি শক্তিশালী বন্ধন তৈরির ওপর জোর দিয়েছেন, যা উনের দাদা ও উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা কিম ইল সাংয়ের প্রতি তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থনের দিনগুলোতে ফিরিয়ে নেবে।
বৈঠক শেষে উন বলেন, তিনি আশা করছেন মস্কোর সঙ্গে আধুনিক সম্পর্ক হবে আরো স্থিতিশীল ও গভীর। এ সময় পুতিন বলেন, উনের এই সফর দুই দেশের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরো শক্তিশালী করবে। এই বৈঠকের জন্য পুতিনকে ধন্যবাদ দিয়ে উন বলেন, খুবই ভালো আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা পারস্পরিক স্বার্থের বিষয়গুলো নিয়ে খুবই অর্থপূর্ণ মতবিনিময় করেছি।’
বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা ছিল রাশিয়ায় ১০ লাখ উত্তর কোরিয়ার অভিবাসী শ্রমিকের ভাগ্যের বিষয়টি সুরাহা করা। এর আগে এসব শ্রমিককে চলতি বছরের শেষের দিকে রাশিয়া ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। উত্তর কোরিয়ার বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহের অন্যতম উৎস হলো জনশক্তি রপ্তানি। এ অবস্থায় গতকালের বৈঠকে রাশিয়াকে শ্রমিকদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিতে অনুরোধ জানিয়েছে।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবেলায় উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে এই বৈঠকে নিজেদের এজেন্ডা অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ নিয়েছে রাশিয়া। কারণ গতকালই চীনা রাষ্ট্রীয় দৈনিক পত্রিকা পিপলস ডেইলি প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে পুতিন পশ্চিমা দেশগুলোর আধিপত্য নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘তারা (পশ্চিমারা) বেপরোয়াভাবে আন্তর্জাতিক আইন ও নিয়মনীতি পদদলিত করছে। এ জন্য ব্ল্যাকমেইল, নিষেধাজ্ঞা ও চাপ প্রয়োগের কৌশল অবলম্বন করছে। তারা তাদের মূল্যবোধ ও আদর্শ অন্যান্য দেশ ও জনগণের ওপর চাপিয়ে দিতে চাইছে।’ কিম জং উনের সঙ্গে বৈঠক শেষে চীনের সঙ্গে আসন্ন শীর্ষ বৈঠকের আগে তিনি এ সাক্ষাৎকার দিলেন।
ঝুঁকিপূর্ণ আলোচনার আশঙ্কা মাইক পম্পেওর : অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, তিনি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ আলোচনার আশঙ্কা করছেন। তবে তিনি পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ কর্মসূচি নিয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছার ব্যাপারে এখনো আশাবাদী বলে জানিয়েছেন। বুধবার সিবিএসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তিনি মনে করেন, গত ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প-কিম বৈঠক সম্পর্কে যা-ই প্রচারিত হোক না কেন, প্রকৃতপক্ষে ওই বৈঠকে মতবিরোধ ছিল খুবই সামান্য। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি উত্তর কোরিয়া নতুন করে অস্ত্র পরীক্ষা চালানোর পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু আলোচনা থেকে মাইক পম্পেওকে প্রত্যাহার করে নিতে হোয়াইট হাউসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। সূত্র : এএফপি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন