সৌদি আরবের প্রশাসনের বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনা করে এক বিবৃতিতে ব্রিটেন বলেছে, ‘আধুনিক সমাজব্যবস্থায় এধরনের গণবলি গ্রহণযোগ্য নয়। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকায় একদিনে ওই ৩৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে সৌদি আরব। যাদের মধ্যে রয়েছে দেশটির মেধাবি শিক্ষার্থীও। ২০১২ সালে গ্রেফতার হওয়া মুজতাবা আল-শিকাত’কে শিরশ্ছেদ করা হয়েছে এবং সৌদি সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর। গ্রেফতারের সময় মুজতাবা প্রাপ্তবয়স্ক ছিল না। গ্রেফতারের আগে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান ইউনিভার্সিটিতে পড়তে যাওয়ার কথা ছিল তার। ২০১৭ সালে মুজতাবার মুক্তি চেয়ে সৌদি প্রশাসনের কাছে আপিল করেছিল ওই ইউনিভার্সিটি। যদিও তা খারিজ হয়ে যায়।
সৌদি সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রশাসনিক সম্পত্তি ভাঙচুর, নিরাপত্তাকর্মীদের কাজে বাধা জাতীয় অভিযোগকে ‘সন্ত্রাসবাদ’ আখ্যা দিয়ে মুজতাবাকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়। ৮ বছর হাজতে থাকার পরও মৃত্যুদণ্ডের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠছে আন্তর্জাতিক মহলে।
এই ধরনের প্রতিবাদকে সন্ত্রাস অভিহিত করে আটক ব্যক্তিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা ছাড়াও গোটা বিষয়ে সৌদি প্রশাসনের বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনা করেছে ব্রিটেন। তবে এসবব ঘটনায় মার্কিন প্রশাসন বরাবরের মত নীরব। কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তবে ‘স্তম্ভিত’ বলে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার শাখার প্রধান মাইকেল ব্যাসলেট। নিন্দা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নও।
শুধু মৃত্যুদণ্ড কার্যকর নয়, মস্তকবিহীন একটি লাশ ক্রুশবিদ্ধ করে রাখে সৌদি প্রশাসন। ১৬ বছরের আরেক তরুণ আব্দুলকারিম আল-হাওয়াজকে ৪ বছর আগে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর কারণে আটক করা হয়। শিরশ্ছেদ করা হয়েছে তাকেও। মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত অধিকাংশ তরুণ শিয়া মুসলিম। এ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল প্রহসনের বিচারের আড়ালে এসব ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড দেয়ার নিন্দা জানিয়েছে। আটক ব্যক্তিদের পক্ষে আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ দেয়নি সৌদি প্রশাসন। ওয়াশিংটন ভিত্তিক গালফ ইনস্টিটিউটের প্রধান আলী আল-আহমেদ বলেন, সৌদি আরবে এর আগে এত বেশি শিয়া অনুসারীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়নি। এর আগে ২০১৬ সালের ২ জানুয়ারি ৪৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল।
এ্যামনেষ্টি বলছে ৩৭ জনের মধ্যে ১১ জনের বিরুদ্ধে ইরানের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনা হয়। এর আগে ২০১১ ও ২০১২ সালে ১৪ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরা করা হয় যাদের অধিকাংশই ছিলেন শিয়া মুসলিম। সর্বশেষ যে ব্যক্তির মস্তকবিহীন লাশটি ঝুলিয়ে রাখা হয় তার নাম হচ্ছে খালেদ বিন আব্দেল কারিম আল-তুওয়াইজরি। তবে সৌদি আরবের কোনো শহরে তার লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয় তা জানানো হয়নি।
এদিকে হিজবুল্লাহ সৌদিতে এধরনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নিন্দা জানিয়ে এজন্যে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বহীনতাকে দায়ী করেছে। স্বাধীনচেতা ও সৌদি সরকারের বিরোধিতা করার কারণে এসব ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে বলে বলছে হিজবুল্লাহ। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে যাদের তাদের অনেকে সৌদি আরবে বাকস্বাধীনতার দাবি জানিয়েছিল। দি সান/ডেইলি মেইল/মিডিল ইস্ট মনিটর
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন