অধিকৃত গোলান মালভূমির ওপর ইসরাইলের সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মুসলিম বিশ্ব ও আরব দেশগুলোকে অপমান করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন লেবাননের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহর নেতা সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ। মঙ্গলবার এক বক্তৃতায় তিনি আরও বলেন, বায়তুল মোকাদ্দাসকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার সময় মুসলিম বিশ্ব কড়া প্রতিক্রিয়া দেখালে ট্রাম্প এ সাহস পেতেন না।
হাসান নাসরুল্লাহ বলেন, গোলানকে ইসরাইলের স্বীকৃতি দিয়ে ট্রাম্প পশ্চিম এশিয়ার শান্তি প্রক্রিয়ায় চরম আঘাত হেনেছেন। তিনি তিউনিশিয়ায় আসন্ন আরব শীর্ষ সম্মেলন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান।
নাসরুল্লাহ প্রধান আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার বায়তুল মোকাদ্দাসকে দখলদার ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার পর আরব দেশগুলো যদি কড়া প্রতিক্রিয়া দেখাত তা হলে গোলান মালভূমির বিষয়ে এই ন্যক্কারজনক পদক্ষেপ নেয়ার সাহস ট্রাম্প দেখাতে পারতেন না।
সোমবার ওয়াশিংটনে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর উপস্থিতিতে গোলান মালভূমি ইসরাইলের ভূখণ্ড এ ঘোষণাপত্রে সই করেন ট্রাম্প।
১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময় ইসরাইল এ জায়গাটি সিরিয়ার কাছ থেকে দখল করে নিয়েছিল। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প বলেছিলেন- যুক্তরাষ্ট্র জেনেছে গোলান ইসরাইলের সার্বভৌম। আর এ কারণেই গোলান মালভূমিতে ইসরাইলের সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি দেয়া উচিত যুক্তরাষ্ট্রের।
টুইটারে ট্রাম্প বলেন, ৫২ বছর পর গোলান মালভূমিতে ইসরাইলের সার্বভৌমত্বে স্বীকৃতি দেয়ার সময় এটিই।
মালভূমিতে বর্তমানে ২০ হাজার অবৈধ দখলদার বসবাস করছেন। কাজেই এ দখলদারিত্ব কখনই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় স্বীকৃতি দিতে পারে না। এদিকে ট্রাম্পের এমন ঘোষণায় বিশ্বজুড়ে সমালোচনা ও নিন্দা জানানো হয়েছে। এর মধ্যে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, তুরস্ক, ফ্রান্সসহ অনেক দেশ রয়েছে।
১৯৬৭ সালে আরবদের সঙ্গে ছয় দিনের যুদ্ধে সিরিয়ার গোলান মালভূমি দখল করে নেয় ইসরাইল। সেই সময় ইহুদিবাদী বাহিনী ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীর ও গাজা উপত্যকারও নিয়ন্ত্রণ নেয়।
পরে ১৯৮১ সালে গোলান মালভূমিকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজ ভূখণ্ড বলে ঘোষণা দেয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক মহল কখনই ইসরাইলের এই দাবির স্বীকৃতি দেয়নি।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের ১৬ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গোলান মালভূমির মালিকানা সংক্রান্ত এক ভোটাভুটি হয়।
সেখানে উপস্থিত ১৫৩ দেশের মধ্যে ১৫১ দেশ এ ভূখণ্ডের মালিকানা সিরিয়ার বলে স্বীকৃতি দেয়। শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও ইহুদিবাদী ইসরাইল প্রস্তাবটির বিপক্ষে অবস্থান নেয়।
তা সত্ত্বেও গোলানবাসীর ওপর ৫২ বছর ধরে ইহুদিবাদী দখলদারিত্ব আর অত্যাচার একটুও কমেনি; বরং বেড়েই চলছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন