ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে এখন পর্যন্ত তাঁর আনা চুক্তির ভিত্তিতে ব্রেক্সিটপ্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে গতকাল রবিবার কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, তাঁর নেতৃত্ব এখন চরম হুমকির মুখে পড়েছে। বিরোধী লেবার পার্টি মেকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করছিল শুরু থেকেই। পত্রিকাগুলোর দাবি, এবার সেই চেষ্টা শুরু করেছেন মের মন্ত্রিসভার সদস্য এবং কনজারভেটিভ দলের জ্যেষ্ঠ নেতারাও। বিবিসি বলছে, প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেবেন, এমন প্রতিশ্রুতি দিলেই মে ব্রেক্সিট চুক্তি পাসে প্রয়োজনীয় সমর্থন পেতে পারেন বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন রক্ষণশীল দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা। আর সানডে টাইমসের ভাষ্য, মের মন্ত্রিসভার জ্যেষ্ঠ সদস্যরাই আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁকে উত্খাতে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছেন।
যদিও মে নিজে এখনো তাঁর ব্রেক্সিট চুক্তির পক্ষে এমপিদের সমর্থন প্রত্যাশা করছেন। এমপিদের উদ্দেশ্যে লেখা এক খোলা চিঠিতে মে বলেন, ‘আশা করি, সবাই সম্মত হবেন যে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণের মুহূর্তে এসে উপনীত হয়েছি।’ এর আগেই লেখা এক চিঠিতে এমপিদের সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় তীব্র সমালোচনা করেন মে। তবে এবার তাঁর ভাষা অনেকটাই নরম ছিল। তিনি বলেন, ‘আপনাদের একটি কঠিন কাজ করতে হবে এবং আমি পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলতে চাই না।’ এ সপ্তাহেই মের আনা চুক্তি তৃতীয়বারের মতো ভোটাভুটির জন্য তোলার কথা। তবে মে ইঙ্গিত দিয়েছেন জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত না হলে তিনি এ উদ্যোগ নেবেন না।
এমন এক জটিল অবস্থার মধ্যে বিবিসি জানায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে পরবর্তী দফা আলোচনার নেতৃত্বে মে থাকছেন না, এমনটা জানলে অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কনজারভেটিভ দলের এমপিরা ব্রেক্সিট চুক্তিতে সমর্থন দেওয়ার কথা বলছেন। মন্ত্রিসভার সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন, যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যমগুলোতে এমন প্রতিবেদনের মধ্যেই কনজারভেটিভ দলের এমপি ও জ্যেষ্ঠ নেতাদের এ মনোভাবের কথা জানা গেল। তবে মেকে সরে দাঁড়াতে প্ররোচিত করা হচ্ছে সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলো গুজব বলে নাকচ করে দিয়েছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট।
গতকাল ব্রিটেনের বেশ কয়েকটি পত্রিকার প্রতিবেদনে অবশ্য মন্ত্রিসভার সদস্যরা মেকে সরিয়ে একজন ‘তত্ত্বাবধায়ক নেতাকে’ দায়িত্ব দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন বলে জানানো হয়েছে। এ বছরের শেষে নতুন নেতা নির্বাচনের আগ পর্যন্ত ওই ‘তত্ত্বাবধায়কই’ সব দেখভাল করবেন বলেও ভাবছেন তাঁরা। মের স্থলাভিষিক্ত কে হবেন, তা নিয়েও টোরিদের (কনজারভেটিভ পার্টি) মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি আছে বলেও প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে। এদের মধ্যে মের ডি-ফ্যাক্টো সহকারী ডেভিড লাইডিংটনই এগিয়ে আছেন বলে জানিয়েছে সানডে টাইমস। লাইডিংটন ব্রিটেনকে ইইউয়ের ভেতরে রাখার পক্ষে ছিলেন।
এদিকে দ্য মেইল বলছে, ব্রেক্সিটপন্থী পরিবেশমন্ত্রী মাইকেল গোভই মের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে ‘সবার পছন্দ’। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী সরে দাঁড়ালেই যে তাঁর ব্রেক্সিট চুক্তি প্রয়োজনীয় সমর্থন পাবে, সে বিষয়ে নিশ্চয়তা নেই বলে মন্তব্য করেছেন টোরি দলের জ্যেষ্ঠ এক নেতা। মেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য করা হতে পারে কিংবা তিনি জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীদের সঙ্গে কিছু ‘কাজ ভাগাভাগি’ করতে পারেন—এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট।
আসছে দিনগুলোতে মের ব্রেক্সিট চুক্তির পাশাপাশি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আরো ছয়টি বিকল্পের ওপর ভোট হতে পারে। এ বিকল্পগুলো হচ্ছে, আর্টিকেল ৫০ প্রত্যাহার করে ব্রেক্সিট বাতিল করা, আরো একটি গণভোট করা, প্রধানমন্ত্রীর চুক্তির সঙ্গে একটি কাস্টমস ইউনিয়ন যুক্ত করা, প্রধানমন্ত্রীর চুক্তির সঙ্গে কাস্টমস ইউনিয়ন ও সিঙ্গেল মার্কেট অ্যাকসেস প্রতিষ্ঠা, কানাডার মতো অবাধ বাণিজ্য চুক্তি এবং চুক্তি ছাড়াই ইইউ ত্যাগ।
এদিকে ব্রেক্সিট নিয়ে আরেকটি গণভোটের দাবিতে গত শনিবারও মধ্য লন্ডনে লাখো মানুষ বিক্ষোভ করেছে। মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের হাতে ছিল ‘সবচেয়ে ভালো চুক্তি ব্রেক্সিট না হওয়া’, ‘আমরা একটি গণভোটের দাবি করছি’ লেখা প্ল্যাকার্ড। মিছিলে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ অংশ নিয়েছে বলে আয়োজকরা দাবি করেছে। লন্ডনের মেয়র সাদিক খান টুইটারে একটি ভিডিও পোস্ট করে মিছিলের সঙ্গে একাত্মতাও জানিয়েছেন।
সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন