চলতি মাসের ১৫ তারিখ শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরের দুটো মসজিদে হামলা চালিয়ে ৫০ জন নিরীহ মুসলিমকে হত্যা করা হয়। হামলাকারী ব্রেন্টন হ্যারিসন টারান্ট ছিল একজন অস্ট্রেলীয় নাগরিক এবং সে খ্রিষ্টান উগ্রপন্থী দলসমূহের একজন সমর্থক।
সে শুধুমাত্র একটি নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালায়নি, বরং সে হামলার দৃশ্য ফেইসবুকে লাইভ করেছিল। হামলাকারী সে সময় অন্তত পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছিল, যার মধ্যে দুটো শট গান, দুটো আধা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র এবং একটি লিভার একশন ফার্মওয়ার ছিল। হামলাকারীর আগ্নেয়াস্ত্রে বেশ কয়েকটি নাম এবং স্লোগান লিখিত আকারে ছিল। এদের একজন ছিল সুইডেনের উগ্রপন্থী শিক্ষার্থী এ্যান্টন লুডিন পিটারসন।
২০১৫ সালে পিটারসন সুইডেনে আগত দুজন অভিবাসী শিশুকে হত্যা করে।
হামলাকারীর আগ্নেয়াস্ত্রে আলবেনিয়ান সেনা কমান্ডার স্কান্দারবেগের নাম খচিত ছিল। এই স্কান্দারবেগ অটোমান সম্রাজ্যের বিরুদ্ধে ১৫ শতকে বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিল।
অ্যালেক্সান্ডার বিসোনেটে নামক আরেক জনের নাম লিখিত ছিল নিউজিল্যান্ডের মসজিদে হামলাকারীর আগ্নেয়াস্ত্রে। এই অ্যালেক্সান্ডার বিসোনেটে ২০১৭ সালে কানাডার একটি মসজিদে হামলা চালিয়ে অন্তত ছয়জন মুসলিমকে হত্যা করেছিল।
এন্টোনিও ব্রাগেদিন নামের আরেকজনের নাম খচিত ছিল যিনি তুর্কি সালতানাতের সাথে শান্তি চুক্তি ভঙ্গ করে তুর্কি বন্দীদের হত্যা করেছিলেন।
স্প্যানিশ মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে মুসলিমদের পরাজিত কারী সেনা কমান্ডার চার্লস মারটেলের নামও হামলাকারীর আগ্নেয়াস্ত্রে খচিত ছিল।
আক্রমণকারীর বন্দুকে ১৬৮৩ সালের ভিয়েনা যুদ্ধ সম্পর্কে ইঙ্গিত করা হয়েছে। ১৬৮৩ সালের ভিয়েনার যুদ্ধে অটোমান শক্তি ভিয়েনা শহরকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল।
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আর্ডেন হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া মুসলিমদের পরিবার সমূহের সাথে একাত্মা প্রকাশ করেছেন।
তিনি অশ্রু সজল নয়নে মাথায় স্কার্ফ পরিধান করেছেন। নিউজিল্যান্ডের সকল নাগরিকের জন্য তিনি ভালোবাসা, সমর্থন, সহমর্মিতার বার্তা নিয়ে এসেছেন বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, ‘এই বিষাদময় সময়ে নিউজিল্যান্ড ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।’ একই সাথে তিনি নিউজিল্যান্ডের অস্ত্র আইন সংশোধনের কথা সাংবাদিকদের জানান।
তবে এখন একটি প্রশ্ন এসে যাচ্ছে যে, মুসলিমদের কে কি এখনো সন্ত্রাসবাদের দায়ে দায়ী করা হবে? কেন শুধুমাত্র মুসলিমদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য দোষ দেয়া হবে?
তবে বিশ্বে এখনো অনেক খামখেয়ালি পূর্ণ মানুষ বসবাস করে যেমন, অস্ট্রেলিয়ার একজন সিনেটর বলেছেন যে, আজ হয়ত মুসলিমরা আক্রমণের শিকার হয়েছেন কিন্তু এমন ঘটনা ঘটেছে মূলত ইউরোপে উগ্রপন্থী মুসলিম অভিবাসীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার ফলে।
ঠিক আছে, সে যা আশা করে ইতোমধ্যে তা পেয়ে গিয়েছে। গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে একজন বালক তার মাথায় ডিম ভেঙ্গে দিয়েছে।
মূলত সন্ত্রাসের সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। ইসলাম শান্তি, ভালোবাস, ভ্রাতৃত্ব বোধ এবং অন্যদের ক্ষমা করে দেয়ার ধর্ম।
ইসলাম ধর্মে কোনো জোর জবরদস্তি নেই। অমুসলিমদের জোর পূর্বক ধর্মান্তরিত করার কথা ইসলামে নিষিদ্ধ। যদি ইসলামের প্রচার করতে হয় তবে তা করা হয় ভালোবাসা এবং দয়ার মাধ্যমে।
তবে সন্ত্রাসবাদ শব্দটি কেন ইসলাম এবং মুসলিমদের সাথে সংযুক্ত করে দেয়া হয়েছে? যখন ইসলামের সাথে এর কোনো সম্পর্কই নেই? ইসলাম উগ্রপন্থার শিক্ষা দেয় না বরং ইসলাম উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে অবস্থান করে।
আমরা দেখতে পাই যে, বিভিন্ন ধর্ম এবং সংস্কৃতি থেকে আসা অনেক মানুষ উগ্রপন্থী দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। এর জন্য শুধুমাত্র বর্বর প্রাণী ব্রেন্টন হ্যারিসন টারান্টের উদাহরণ যথেষ্ট।
আমরা বলতে চাই যে, ইসলামকে উগ্রপন্থা এবং সন্ত্রাসবাদের সাথে জড়িত করার অপচেষ্টা বন্ধ করা উচিত। কোনো প্রমাণ ছাড়া আমাদের ধর্ম সম্পর্কে এরকম সিদ্ধান্ত দেয়ার এখতিয়ার কারো নেই।
একজন জার্মান মুসলিমকে যখন সন্ত্রাসবাদ এবং ইসলাম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল তখন তিনি উত্তরে বলেছিলেন- ‘প্রথম বিশ্বযুদ্ধ কারা শুরু করেছিল? না এটি মুসলিমদের কাজ নয়!
তাহলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কারা শুরু করেছিল?
এটিও মুসলিমদের কাজ ছিলনা। কারা হলোকাষ্টের নামে ছয় মিলিয়ন ইহুদি হত্যা করেছিল? না মুসলিমেরা তা করেনি!!
কারা অস্ট্রেলিয়ার ২০ মিলিয়ন আদিবাসীদের হত্যা করেছিল? না এটিও মুসলিমদের কাজ ছিল না! কারা জাপানের হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা মেরেছিল? না মুসলিমরা নয়! কারা উত্তরা আমেরিকায় ১০০ মিলিয়ন রেড ইন্ডিয়ানদের হত্যা করেছিল? এটি কোনো মুসলিমের কাজ ছিল না। কারা দক্ষিণ আমেরিকায় ১০০ মিলিয়নেরও অধিক রেড ইন্ডিয়ানদের হত্যা করেছিল? এমনটি কোন মুসলিম করে নি!
কারা আফ্রিকা থেকে ১৮০ মিলিয়ন কৃষ্ণাঙ্গকে দাস বানিয়েছিল এবং তাদের ৮৮ শতাংশকে হত্যা করে আটলান্টিক সাগরে ফেলে দিয়েছিল? না, মুসলিমরা এমনটি করে নি! সুতরাং আপনাকে প্রথমে সন্ত্রাসবাদের সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে।
যদি কোনো অমুসলিম কোনো খারাপ কাজ করে তবে এটি হয়ে যায় শুধুমাত্র একটি অপরাধ কিন্তু কোনো মুসলিম যদি ঠিক একই কাজ করে তবে সে হয়ে যায় সন্ত্রাসী। প্রথমে এরকম দ্বিমুখী আচরণ বাদ দিতে হবে। এর পরেই মূল আলোচনায় আসতে হবে।
সুতরাং, ইসলাম ধর্মকে সন্ত্রাসবাদের সাথে সংযুক্ত করা বন্ধ করুন।
সূত্র: ন্যাশন ডট কম ডট পিকে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন