যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন অঞ্চলের উত্তরের শহর মন্টগোমেরির প্রথম মুসলিম নারী মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়লেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত আমেরিকান সাদাফ জাফর।
মন্টগোমেরি শহরের লোকসংখ্যা প্রায় ২৫,০০০ হাজার। সাদাফ জাফর এই শহরের শুধুমাত্র প্রথম মুসলিম নারী মেয়র হিসেবেই নির্বাচিত হন নি বরং তিনি এখানকার প্রথম পাকিস্তানি-আমেরিকান মেয়র এবং একই সাথে তিনি দক্ষিণ এশিয়ান-আমেরিকান নারী হিসেবে প্রথম নির্বাচিত কোনো মেয়র।
তিনি হয়ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কোনো মেয়র যিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলাম, লিঙ্গ এবং দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস নিয়ে ডক্টরেট করেছেন। একই সাথে তিনি দেশটির প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দক্ষিণ এশিয়ান স্টাডিজ বিভাগে পোষ্ট-ডক্টরাল গবেষণায় কিছুদিন কাজ করেছিলেন এবং সেখানে তিনি দক্ষিণ এশিয়া, ইসলাম ও এশিয়ান-আমেরিকান বিভাগে পাঠদান করেছেন।
রিলিজিয়ন নিউজ নব নির্বাচিত মেয়র সাদাফ জাফরের একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছে। নিচে আরটিএনএনের পাঠকদের জন্য তা ভাষান্তরে তুলে ধরা হলো:
মেয়র পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিষয়ে আপনি কিভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?
আমি একটি সরকারি অফিসের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, কারণ আমি নির্বাচিত কর্মকর্তাদের মধ্যে আমার মূল্যবোধের প্রতিফলন দেখতে পাই নি। আমি একই সাথে একজন গবেষক এবং একজন কর্মী ছিলাম। আপনি যদি লোকজনদের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিতে থাকেন যে, তাদের মূল্যবোধের প্রতিফলন হচ্ছে না তবে আপনি একটি ঠিকই এর মূলে কুঠারাঘাত করতে পারবেন।
আমি সরকারি অফিসে এমন ব্যক্তি দেখতে চাই যার বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রেক্ষাপট বিদ্যমান এবং আমি নিজেই তা করতে চেয়েছিলাম।
কিভাবে আপনার বিশ্বাস আপনার কাজে প্রতিফলিত হয়েছে?
একজন মুসলিম হিসেবে বেড়ে উঠার সময় আমি এই অনুভব নিয়ে বেড়ে উঠেছি যে, যেখানেই আমরা অবিচার দেখতে পাই আমাদের উচিত সেখানেই এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা।
আমি যখন থেকে ইসলাম এবং দক্ষিণ এশিয়া নিয়ে আমার পি.এইচ.ডি গবেষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তখন থেকেই আমি দেখতে শুরু করলাম যে, ঠিক কোন ধর্মটি সবসময় তার আবেদন রেখে চলেছে। আমি দেখতে পাই যে, ইসলামের অতীত ছিল একেবারেই মহান এবং সংস্কৃতিতে এটি পুষ্পের মতোই। আর এটিই আমাকে ভবিষ্যতের বিষয়ে অনুপ্রেরণা দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে আপনার মত প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রিধারীদের সংখ্যা একেবারেই কম। আপনি কি আমাদের জানাবেন, কিভাবে ইসলাম, লিঙ্গ এবং দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক গবেষণা আপনাকে আপনার কাজে সহায়তা করছে?
আমি মনে করি যুক্তরাষ্ট্রে আমরা বর্তমানে সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটির মুখোমুখি হচ্ছি তা হচ্ছে, আমাদের নিজেদের সামাজিক অবস্থান সম্পর্কে আমরা খুব বেশী ভীত। সুতরাং শিল্প, সাহিত্য এবং সংস্কৃতি সম্পন্ন প্রেক্ষাপট নিয়ে আমি লোকজনদের একসাথে করতে পারছি।
যখন আমার শহরে কোনো মুসলিম বিরোধী অপরাধ ঘটে তখন আমি আমার অভিজ্ঞতা দিয়ে এবং ইসলামোফোবিয়া সম্পর্কে আমার গবেষণা দিয়ে তা প্রতিহত করতে পারি।
চলতি বছরে আপনিই একমাত্র নারী নন যিনি রাজনীতি নিয়ে নড়াচড়া করেছেন। ইলহান ওমার এবং রাশিদা তালিব প্রথম কোনো মুসলিম নারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসওম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম মুসলিম মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়ে আপনার নিকট কেমন অনুভূতি হচ্ছে?
আমাদের রাজনীতির প্রথায় মুসলিম নারীদের জয়জয়কার নিয়ে এবং তাদের তৈরী করা উদাহরণ নিয়ে আমি গর্বিত। আমরা কাঁদে কাঁদ মিলিয়ে বর্তমান কর্মী প্রজন্ম একসাথে দাঁড়িয়ে আছি যারা এই সমস্ত সুযোগ ব্যবহার করে তা সম্ভব করেছি।
আমি একই সাথে বলতে চাই, আমি আশা করি এর ফলে লোকজন স্থানীয় পর্যায়ে সরকারি কাজের সাথে সংযুক্ত হওয়ার গুরুত্ব বুঝতে পারবে। লোকজন অনেক সময় শুধুমাত্র জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক দিকেই নজর দেয় এবং তারা স্থানীয় রাজনীতি সম্পর্কে উদাসীন থাকে।
আমি আশা করি আরো অনেকেই এগিয়ে আসবেন এবং স্থানীয় পদ সমূহের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। আমরা সকলেই তখনই জয় লাভ করি যখন আমাদের সমাজের বেশিরভাগ লোকজন প্রয়োজনীয় তথ্য সম্পর্কে জ্ঞাত থাকে এবং নিজেদের কমিউনিটি নিয়ে সোচ্চার থাকে।
সূত্র: রিলিজিয়ননিউজ ডট কম।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন