এমনকি বিংশ শতাব্দীতেও যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ অঞ্চলে যখন ইসলামের উপস্থিতি একেবারেই কম ছিল, ঠিক একই সময়ে দেশটির শহুরে কৃষ্ণাঙ্গদের জীবনে ইসলাম একটি ধর্ম হিসেবে ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে।
আর বর্তমানে ২০১৭ সালে Pew গবেষণা কেন্দ্রের করা এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের মোট মুসলিমদের ২০ শতাংশই কৃষ্ণাঙ্গ মুসলিম।
তথাপি, যুক্তরাষ্ট্রের মোট কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের খুব কম সংখ্যকই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মুসলিম হয়েছেন। দেশটির বেশিরভাগ কৃষ্ণাঙ্গ হয় খ্রিস্টান(৭৯%) অথবা কোনো ধর্মের অনুসারী নয়(১৮%) আর অন্যদিকে দেশটির মোট কৃষ্ণাঙ্গের মাত্র ২ শতাংশ মুসলিম।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গ মুসলিমদের প্রায় অর্ধেক(৪৯%) হচ্ছেন ধর্মান্তরিত মুসলিম, যা দেশটিতে ইসলাম গ্রহণকারীদের দিক থেকে সর্বোচ্চ। আর অন্যদিকে কৃষ্ণাঙ্গদের বাহিরে শুধুমাত্র ১৫ শতাংশ মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে অধিকাংশই ধর্ম সম্পর্কে অতি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিশ্রুতি বদ্ধ। উদাহরণ স্বরূপ, একই সাথে কৃষ্ণাঙ্গ মুসলিম এবং কৃষ্ণাঙ্গ খ্রিস্টানদের(৭৫% এবং ৮৪%) একটি বৃহৎ অংশ বলেছেন যে, তাদের নিকট তাদের ধর্ম খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গ মুসলিমদের ৫৫ শতাংশ দিনে পাঁচবার সালাত আদায় করেন, অন্যদিকে সেখানকার অন্যান্য মুসলিমদের ৩৯ শতাংশ তা করে থাকেন।
১৯০০ সালের প্রথম দিকের মুসলিম ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে ইসলাম ধর্মকে তাদের জন্য প্রাকৃতিক বলে ধরে নিতেন, কেননা আফ্রিকা থেকে মুসলিম কৃষ্ণাঙ্গদের জোরপূর্বক ধরে নিয়ে আমেরিকাতে চালান দেয়া হতো।
তথাপি, এটি বলে রাখা ভালো যে, ২০১৭ সালের পরিসংখ্যানে যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিমরা ‘Nation of Islam’ এর অংশ হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেন কিনা অথবা এর সাথে পূর্ব জড়িত ছিলেন কিনা এমন প্রশ্ন করা হয়নি। যদিও এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, কারণ দেশটির অধিকাংশ কৃষ্ণাঙ্গ মুসলিম যাদের মধ্যে বিখ্যাত মুষ্টিযোদ্ধা মুহাম্মদ আলি, ম্যালকম এক্স এবং ইমাম ডব্লিউ. দীন মোহাম্মদসহ অন্যান্যরা ইসলাম ধর্মের অন্য ধরণ সমূহের সাথে সংযুক্ত হওয়ার পূর্বে ‘Nation of Islam’ এর সাথে জড়িত ছিলেন।
(Nation of Islam যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান রাজ্যের ডেটরোইট নামক স্থানে ১৯৩০সালে প্রতিষ্ঠিত আফ্রিকান-আমেরিকানদের একটি রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় আন্দোলনের নাম)।
যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিমদের বর্ণ এবং ভূতাত্ত্বিক অবস্থান
সাধারণভাবে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গ মানুষেরা রাষ্ট্রের সাথে তাদের বর্ণ বিষয়ক সম্পর্ক নিয়ে উদ্বিগ্ন। কিন্তু কৃষ্ণাঙ্গ মুসলিমরা দেশটির খ্রিষ্টান বা অন্যান্য মুসলিমদের নিয়ে কথা বলতে তেমন একটা আগ্রহী নন।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশটির প্রতি দশ জনের নয় জন কৃষ্ণাঙ্গ মুসলিম(৯২%) বলেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি ব্যাপক বৈষম্য করা হয়। অন্যদিকে দেশটির ৭৮শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ খ্রিষ্টান এবং ৬৬ শতাংশ অন্যান্য মুসলিমেরা এমনটি মনে করেন।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ৭৯শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ মুসলিমরা মনে করেন যে, দেশটিতে শ্বেতাঙ্গদের মত কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে এখনো অনেক সংস্কার প্রয়োজন রয়েছে। তবে ৬৬শতাংশ অন্যান্য মুসলিমরা এমনটি মনে করে থাকেন।
ভূতাত্ত্বিক দিক থেকে, যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গ মুসলিমরা দেশটির উত্তরাঞ্চলে বসবাস করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে থাকেন অন্যদিকে কৃষ্ণাঙ্গ খ্রিষ্টানরা দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে বসবাস করতে এমনটি মনে করে থাকেন।
একই সাথে, যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গ মুসলিমদের ৬৯শতাংশ জন্মগতভাবেই মুসলিম আর দেশটির অন্যান্য মুসলিমদের মাত্র ৩৬শতাংশ জন্মগত মুসলিম। তবে এ সংখ্যা খ্রিষ্টানদের চাইতে অনেক কম এবং তা ৯০ শতাংশ।
এছাড়াও যেসব কৃষ্ণাঙ্গ মুসলিম জন্মগতভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম জনসংখ্যার অন্তর্ভুক্ত তাদের পূর্ব পুরুষদের অধিকাংশই সাব-সাহারান আফ্রিকার দেশসমূহ যেমন সোমালিয়া এবং ইথিওপিয়ার দেশ সমূহ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন।
আর অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের জন্মগত মুসলিমদের মধ্যে যারা কৃষ্ণাঙ্গ নয়, তাদের অধিকাংশই দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহ যেমন পাকিস্তান থেকে এসেছেন।
সূত্র: pewresearch.org
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন