ফ্রান্সে বসবাসরত মুসলিমরা তাদের ধর্মের জন্য উচ্চ মূল্য দিচ্ছেন। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা যায় যে, দেশটিতে মুসলিম চাকরি প্রার্থীদের চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা ভাগ্যের ব্যাপার। অন্যদিকে একই চাকরিতে খ্রিস্টান প্রার্থীদের হরহামেশাই নিয়োগ হচ্ছে।
ফ্রান্সের মুসলিম চাকরি প্রার্থীদের কেউ যদি ধার্মিক হয়ে থাকেন, তবে তিনি চাকরিদাতার নিকট থেকে ডাক পান না বলেই ধরে নিতে হবে। একই সাথে এ বিষয়টি ধার্মিক খ্রিস্টান প্রার্থীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
ভালফ্রোর্ট নামক গবেষণা প্রতিবেদনের অন্যতম গবেষক পান্থেওন-সোরবোনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ ম্যারি-এন বলেন, ‘ধার্মিক মুসলিমগণের চাকরি পাওয়ার জন্য ধার্মিক খ্রিস্টানদের মতই দুই বা ততোধিক বারের বেশী আবেদন করতে হয়।’
ভালফ্রোর্ট নামের গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল এ বিষয়টি যাচাই করে দেখা যে, চাকরির ক্ষেত্রে মুসলিমরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন কিনা। আর এর উত্তর খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাদের জন্য যারা নিরাপত্তা, সন্ত্রাস এবং ফ্রান্সের একত্রীকরণ সমর্থন করেন।
মুসলিমদের প্রতি বৈষম্যকে চিহ্নিত করার জন্য গবেষণার অংশ হিসেবে কিছু ভুয়া চাকরির আবেদন করা হয় যেখানে মুসলিম আবেদনকারী এবং খ্রিস্টান আবেদনকারী হিসেবে তাদের চিহ্নিত করার ব্যবস্থা রাখা হয়।
আর শুধুমাত্র ধর্মীয় ক্ষেত্রে প্রভাব লক্ষ্য করার জন্য সকল আবেদনকারীকে এমন একটি দেশ থেকে আগত অভিবাসী দেখানো হয়েছে যেখানে একাধিক ধর্মের জনগণের বসবাস আর দেশটি হচ্ছে লেবানন।
মুসলিম এবং খ্রিষ্টান আবেদনকারীদেরকে বিভিন্ন বৈচিত্র্যে ভাগ করা হয় যেখানে একই সাথে কাউকে ধার্মিক এবং কাউকে ধার্মিক নয় এমন দেখানো হয়েছে।
গবেষণার সুবিধার্থে আবেদনকারীদের সিভিতে তাদের অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখানো হয়েছে: মাইকেল এবং নাথালি এর মত ধার্মিক আবেদনকারীদের সিভিতে ‘একটি ক্যাথলিক চার্চে স্কাউট এবং ফ্রান্স সম্পর্কে দিক নির্দেশনা মূলক’ প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতা দেখানো হয়েছে। অন্যদিকে, মোহাম্মদ এবং সামিরার মত ধার্মিক আবেদনকারীদের সিভিতে ‘ফ্রান্সের মুসলিম স্কাউট এসোসিয়েশনে কর্মরত’ এরকমটি দেখানো হয়।
ভালফ্রোর্টের গবেষণার অংশ হিসেবে ৩,৩৩১ চাকরির বিজ্ঞাপনের বিপরীতে সমান সংখ্যক আবেদন পত্র পাঠানো হয়। আর ভালফ্রোর্ট দেখতে পান যে, ধার্মিক মুসলিম আবেদনকারীদের জন্য চাকরির আবেদন করার ফি হিসেবে মোটা অঙ্কের ফি নেয়া হয় এবং তা ধার্মিক খ্রিষ্টান আবেদনকারী আর ধার্মিক নয় এমন মুসলিম আবেদনকারীদের চাইতে বেশী।
ভালফ্রোর্ট বলেন, ‘যতজন ধার্মিক মুসলিম পুরুষ আবেদনকারীদের চাকরির সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয় তা ধার্মিক খ্রিষ্টান আবেদনকারীদের চাইতে অন্তত চার শতাংশ কম।’ একই সাথে তিনি দেখতে পান যে, যেসব মুসলিম সাক্ষাৎকারে অংশ নিয়েছেন তারা চাকরি জন্য সুপারিশ প্রাপ্ত হন নি এমন সংবাদও তাদের জানানোতে নিয়োগ কর্তাদের আপত্তি রয়েছে।
এই গবেষণার অংশ হিসেবে কিছু ভুয়া স্বেচ্ছাসেবী আবেদনকারীকে ইহুদি হিসেবে দেখানো হয়েছে। গবেষণায় দেখা যায় যে, তাদের ক্ষেত্রে আবেদন ফি যতটা ছিল তা মুসলিম আবেদনকারীদের চাইতে অনেকাংশেই কম ছিল।
ভালফ্রোর্টের গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফল এর পূর্বে একই রকমের একটি গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফলের সাথে মিলে যায়। ভালফ্রোর্টের পূর্বে করা গবেষণায় দেখা যায় যে, ফ্রান্সের মুসলিমরা চাকরির ক্ষেত্রে ‘অস্বাভাবিক বৈষম্যের’ শিকার হন।
আর এই বৈষম্য শুধুমাত্র চাকরির ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয় একই সাথে তা মুসলিমদের ধর্ম চর্চা আর ফ্রান্সের স্থানীয় সমাজের সাথে একীভূত হওয়ার চেষ্টার ক্ষেত্রেও সমান প্রযোজ্য।
প্রসঙ্গ, এই বৈষম্যের কারণে মুসলিম চাকরি প্রার্থীদের সাক্ষাৎকারের পর্যায়ে ঠিক কি অনুভব হয় তার তদন্ত করা হয় নি। আর ফলাফল হিসেবে ভালফ্রোর্ট বলেন, ‘এই গবেষণার মূল ফলাফল হচ্ছে রক্ষণশীল: আমরা মুসলিম বিরোধী মনোভাব মূলক বৈষম্যকে ঝুঁকির মধ্যে রেখেছি, কিন্তু অতি ঝুঁকির মধ্যে নয়।’
সূত্র: qz.com
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন