কানাডা ভিত্তিক জনপ্রিয় ইন্টারনেট পোর্টাল মুসলিম লিংক(Muslim Link) সম্প্রতি ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান ডকুমেন্টারি বা প্রামাণ্য চিত্র পরিচালক সুরা মালৌহ’র সিবিসি নিউজের জন্য সিরিয়ান উদ্বাস্তুদের নিয়ে তৈরি প্রকাশিতব্য একটি ডকুমেন্টারি এবং তার চলচ্চিত্রসমূহ নিয়ে একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছে। আরটিএনএনের পাঠকদের জন্য তা ভাষান্তরে তুলে ধরা হলো:
১। আপনার সম্পর্কে আমাদের বলুন
আমি ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত টরোন্টো ভিত্তিক একজন কানাডিয়ান মুসলিম চলচ্চিত্র নির্মাতা। আমি গ্রিস, কিংস্টন শহর এবং অটোয়ায় বসবাস করেছি। এসব স্থানে বসবাসের সুবাদে আমি অনেক বৈচিত্র্য শিখেছি।
গ্রিস আমাকে বিভিন্ন প্রয়োজন নিয়ে উৎসব করতে শিখিয়েছে। কিংস্টন আমাকে শিখিয়েছে যে, লোকজন হয়তো আমার ধর্ম এবং আমার জাতীয়তার কারণে আমাকে অপছন্দ করতে পারে এবং অটোয়া আমাকে শিখিয়েছে, আমার বিশ্বাস এমন কিছু নয় যার সাথে আমি আপোষ করতে পারি।
এসব অভিজ্ঞতা আমাকে এবং আমার কাজে দিকনির্দেশনা দিয়েছে এবং আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস যুগিয়েছে যে, শিল্প মানুষের হৃদয় পরিবর্তন করতে পারে।
২। আপনি কখন উপলব্ধি করেছেন যে, আপনি একজন ডকুমেন্টারি নির্মাতা হতে চান?
এই পেশাগত পথ কখনো আমার মনের বিরুদ্ধে যায়নি। আমি সবসময় ভাবতাম, আমি একজন আইনজীবী হব। আমি সত্যিকার অর্থেই সামাজিক ন্যায়বিচারে আগ্রহী ছিলাম এবং আমি ইতিবাচক পরিবর্তনের অংশীদার হতে চাইতাম।
তবে আমার বয়স ২০ বছরে পৌঁছালে আমি নিজেকে একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে দেখতে চাইতাম।
আমি জানতাম না কোথা থেকে শুরু করতে হবে। আমি বেশ কয়েকটি তথ্যচিত্র দেখি এবং এগুলোর গল্প বলার ধরণ আমার মূল জায়গায় আগাত করে। আমি তখন এর একটি অংশ হতে চেয়েছিলাম। সুতরাং ওই তথ্যচিত্র নির্মাতাকে একটি ই-মেইল করেছিলাম এবং তিনি আমাকে সামনে এগিয়ে আসার জন্য পরামর্শ দিলেন। আর এটিই আমাকে চলচ্চিত্র বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য সাহস জুগিয়েছে। আর বাকিটা তো ইতিহাস।
৩। এই পেশার জন্য আপনি কিভাবে অধ্যয়ন করেছেন?
আমি চলচ্চিত্র বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু শেখার সবচেয়ে বড় অভিজ্ঞতা হচ্ছে এর ব্যবহারিক দিক, আপনাকে একটি ক্যামেরা নিয়ে বেরিয়ে পড়তে হবে এবং নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে।
দুই বছর যাবত আমি আমার হাতে ক্যামেরা নিয়ে ঘুরেছি এবং সবকিছুই ধারণ করেছি। আমি মানুষের যোগাযোগের সামান্য পার্থক্য ধারণ করতে শিখেছি, যা আজ পর্যন্ত আমাকে সহায়তা করে যাচ্ছে।
৪। আপনি কি অনুভব করেন যে, আপনার চলচ্চিত্রে সাধারণ কিছু বিষয়বস্তু আছে?
আমি বলতে চাই যে, গত দুবছর যাবত আমার চলচ্চিত্র সমূহে কিছু সাধারণ বিষয়বস্তু ছিল। আমি মুসলিম সমাজ নিয়ে অনেক কাজ করেছি। কিন্তু এটি সবসময় তেমন ছিল না। আমি মনে করি, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি আমাকে ভেতরটা দেখতে বাধ্য করেছে এবং আমাকে আমার নিজের কমিউনিটি আর নিজেদের মতামত তুলে ধরতে উৎসাহ দিয়েছে।
আমরা নিজেরা সংখ্যালঘু এবং আমি মনে করি আমাদের নিজেদেরই নিজেদের কথা বলতে হবে। আমাদের জানতে হবে যে, আমরা প্রকাশ্যে আসার যোগ্য। আমাদের নিজেদের ইতিহাসের মহান হিরোদের দেখতে হবে এবং আমি আমার চলচ্চিত্রে তাই দেখাতে চেষ্টা করছি।
৫। আপনি সম্প্রতি সিবিসি নিউজের জন্য কানাডার পূর্বাঞ্চল নিউ ব্রুনসিউইকে একটি সিরিয়ান উদ্বাস্তু পরিবার সম্পর্কে তথ্যচিত্র তৈরি করেছেন এ সম্পর্কে আমাদের বলুন
‘সেদরা’ নামের তথ্যচিত্রটি সিবিসি নিউজে প্রথম দেখানো হবে। অবশ্য আগস্ট মাসের ১৪ তারিখ এটি অনলাইনেও পাওয়া যাবে। এই গল্পটি সেদরা নামের ১৭ বছর বয়সী একজন সিরিয়ান উদ্বাস্তু নিয়ে যে কিনা কানাডার নিউ ব্রুনসিউইকে নামক স্থানে তারা পরিবারের জন্য নতুন জীবন সাজাতে সংগ্রাম করে যাচ্ছে।
এই গল্পটিতে পিতা-কন্যার একে অপরের প্রতি ভালোবাসা তুলে ধরছে এবং তাদের মনের কষ্টকে চাপিয়ে তাদের আন্তরিকতার কথা বর্ণনা করা হয়েছে।
কি হতো যদি এখানে সূর্য কিরণ বা রংধনু না দেখা যেত? এখানে কি উদ্বাস্তুদের জন্য পর্যাপ্ত সহায়তা রয়েছে? তারা কি সৌভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত?
৬। আপনি একজন আরব এবং মুসলিম, সে হিসেবে এই গল্পটিতে আপনি কতটা প্রভাবিত হয়েছেন বলে আপনি মনে করেন?
একজন ফিলিস্তিনি হিসেবে আমি উদ্বাস্তুদের সম্পর্কে অনেক জানি এবং সেদরার পরিবারের জন্য সমবেদনা জানাতে পারি। আমার পরিবার যুদ্ধের কারণে স্থানচ্যুত হয়েছে তাই আমি সেদরার পরিবারের সাথে নিজের সেতুবন্ধন খুঁজে পাই।
আমি বুঝতে পেরেছি যে, আমার আরবি বলা এখন অতোটা সাবলীল নয় কিন্তু সেদরার পরিবারের সাথে আরবি ভাষায় কথা বলতে পেরে আমি খুব আনন্দিত।
আমি এটি চিন্তা করি না যে, আরব হওয়ার কারণে আমার সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু আমি মনে করি মুসলিম হওয়ার কারণে আমরা আমাদের বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি।
৭। আপনি সেইসব কানাডার মুসলিম নারীদের কি পরামর্শ দিবেন, যারা আপনার মত ডকুমেন্টারি নির্মাণ করতে চায়?
সামনে এগিয়ে যাও। তোমার মতামতের গুরুত্ব আছে এবং তুমি এটা পারবে। এখানে অনেক বাধা বিপত্তি আছে। তোমাকে অনেক ইসলামভীতি মূলক আক্রমণ এবং যৌনতার বিরুদ্ধে কাজ করতে হতে পারে।
ব্যাবহারিক দিক থেকে, আমি তাদের তাই বলবো যা আমাকে আমার পরামর্শদাতা বলেছিলেন: সকল ব্যবসায় অংশীদার হও। চলচ্চিত্র তৈরির সবকিছু বুঝে নাও। তোমাকে প্রত্যেক ক্ষেত্র ভালো হতে হবে না কিন্তু তোমাকে প্রতিযোগিতা করতে হবে।
যদি তোমার ক্ষমতায়ন পরবর্তী প্রজন্মের মুসলিম নারী না হয়ে থাকে, তবে কে হবে?
৮। এর পরে কি?
আমি বর্তমানে একটি তথ্যচিত্র নিয়ে কাজ করছি এবং এর সংবেদনশীলতার কারণে তা নিয়ে আমি এই মূহূর্তে আমি কিছু বলতে পারছি না। এছাড়াও আমি ইমাম ওমার সুলেমান এবং প্যাস্টর মাইকেল ওটরেস সম্পর্কে একটি চলমান তথ্যচিত্র নির্মাণ করছি, যা শীঘ্রই প্রকাশিত হবে।
সূত্র: মুসলিমলিংক ডট সিএ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন