ভারতের পশ্চিমবঙ্গে শুরু হচ্ছে বিজেপির ‘রথযাত্রা’। আর ‘কীর্তনের’ প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজ্যে ক্ষমতাসীনদের দল তৃণমূল। এরি মধ্যে খোল ও করতাল নিয়ে কীর্তনের প্রস্তুতি জমে উঠেছে। বুধবার (৫ ডিসেম্বর) কর্মীদের মধ্যে খোল ও করতাল বিতরণ করেছে তৃণমূল।
রাস্তায় থাকছে তৃতীয় এবং চতুর্থ দলও। সেই দু্ই দল হলো কংগ্রেস এবং বাম দল। তারা নামছে লাল পতাকা আর তেরঙ্গা পতাকা নিয়ে। তারা রাজ্যজুড়ে সম্প্রীতির মিছিল করবে। ঝান্ডা নিয়ে রাস্তায় হাঁটবে, সভা সমাবেশ করবে।
ভারতের সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার ৫৪৩টি আসনের নির্বাচন হওয়ার কথা আগামী বছরের এপ্রিল বা মে মাসে। পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে এই লোকসভার ৪২টি আসন, যার ৩৪টি আসন দখল করে আছে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। জাতীয় কংগ্রেসের দখলে আছে ৪টি, আর বাম দল ও বিজেপির দখলে আছে ২টি করে আসন। এবার মমতা দাবি করেছেন রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনের সব ক’টিই ছিনিয়ে নেবে তৃণমূল।
আর রাজ্যজুড়ে নির্বাচনী ঝড় তোলার জন্য বিজেপি এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ’গণতন্ত্র বাঁচাও ’ নামে তিনটি প্রচার রথ বের করার। রথ তিনটি বের হবে রাজ্যর তিন প্রান্ত থেকে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কটাক্ষ করেছেন রথকে। বলেছেন, ’এত রথ নয়; যেন পাঁচতারা হোটেল।’
এই রথ বের হবে কাল ৭, ৯ ও ১৪ ডিসেম্বর। কালকের রথ বের হবে কোচবিহার থেকে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরদ্বীপ থেকে রথ বের হবে ৯ ডিসেম্বর আর বীরভূমের তারাপীঠ থেকে শুরু হবে ১৪ ডিসেম্বর।
রথযাত্রার মতো ধর্ম আশ্রিত এক কর্মসূচির মোকাবিলায় পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল ঘোষণা দিয়েছে তারা খোল-করতাল নিয়ে সংকীর্তন যাত্রা করবে। তারাপীঠে রথযাত্রার আগে বীরভূম জেলাজুড়ে বের হবে এই কর্মসূচি। পথে পথে তাঁদের কীর্তন দলের সদস্যরা গাইবেন গাইবেন ’হরে রাম হরে কৃষ্ণ’। তৃণমূল কংগ্রেসের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মন্ডল আগেই ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন, এই সংকীর্তন যাত্রায় ভক্তদের হাতে তুলে দেওয়া হবে ৪ হাজার খোল আর ৮ হাজার করতাল। এগুলো বানিয়ে আনা হয়েছে নবদ্বীপ আর মুর্শিদাবাদ থেকে। এ জন্য খরচ হয়েছে প্রায় ২ কোটি রুপি। ভক্তরা এই খোল করতাল নিয়ে জেলার ১৯টি ব্লক জুড়ে সংকীর্তন করবেন।
অনুব্রতর কথায়, বিজেপির ওই রথযাত্রা হবে ’শ্মশান যাত্রা’। দলের ’অন্তিম যাত্রা’। যদিও সিপিএমের বীরভূমের জেলা সভাপতি ও সাবেক সাংসদ রামচন্দ্র ডোম প্রশ্ন তুলে বলেছেন, কোথা থেকে এই টাকা পেল অনুব্রত মন্ডল— তা জানানো হোক জনগণকে। আবার স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক মিলটন রশিদ বলেছেন, বিজেপির এ এক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার চক্রান্ত। এবার সাম্প্রদায়িকতার মুখোশ খসে পড়বে তৃণমূলেরও। আর বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন,’খোল করতালতো শবযাত্রায় লাগে। তৃণমূলের দিন শেষ। তাই শবযাত্রার জন্য খোল করতাল এনেছে। ’
তৃণমূল কংগ্রেসের পাশাপাশি এই রথযাত্রার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে বাম দল এবং জাতীয় কংগ্রেস। তারা সমস্বরে বলেছে, এই রথযাত্রার বিরুদ্ধে তারা পথে নামবে।
এর আগে বিজেপির এই রথযাত্রা ঘোষণার পর সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র পাল্টা ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন, ‘এই রাজ্যের মেহনতি ও শান্তিপ্রিয় মানুষ রাস্তায় নেমে বিজেপির রথযাত্রা আটকে দেবে। প্রয়োজনে রাস্তায় মানুষের দেয়াল তুলে দেবে , যাতে বিজেপির রাস্তা স্তব্ধ হয়ে যায়, রথযাত্রা যেন কোনো পথ খুঁজে না পায়’। এই মন্তব্যের প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে বিজেপির মহিলা মোর্চার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি লকেট চট্টোপাধ্যায় পাল্টা হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘বাংলায় রথযাত্রা আটকানোর চেষ্টা হলে, যাঁরা তা করবেন তাঁদের রথের চাকাতেই পিষে মারা হবে’। এরপরই হুগলির এক জনসভায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও ফের হুমকি দিয়ে বলেছিলেন , ‘এবার মারের বদলা হবে মার। আর হাসপাতালে কাউকে পাঠানো হবে না’।
এসব উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে । গত ২৬ নভেম্বর থেকে পশ্চিমবঙ্গের ৫০টি গণসংগঠন এই রথযাত্রার প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে শুরু করেছে, ‘সংহতি যাত্রা’।
এই যাত্রা শেষ হবে ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিন। এই দিনই বাম দল সহ বিভিন্ন দল গোটা রাজ্যজুড়ে পালন করছে সংহতি দিবস। আর রাজ্যের ৬টি বাম দল আজ বাবরি ধ্বংসের দিনে সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী সম্প্রীতি মিছিল বের করছে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন