আন্তঃ কোরিয়া সম্মেলনে অংশ নিতে উত্তর কোরিয়া পৌঁছেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন। গতকাল মঙ্গলবার পিয়ংইয়ংয়ের ‘সুনান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে’ তাঁকে স্বাগত জানান উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। তিন দিনের সফরে মুন ও উনের মধ্যে দুই দফা বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বৈঠকে উনের আগ্রহ থাকবে দুই কোরিয়ার বাণিজ্য সম্পর্ক জোরালো করার দিকে। অন্যদিকে পিয়ংইয়ংয়ের পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেবেন মুন।
২০০৭ সালের পর এই প্রথম দক্ষিণ কোরিয়ার কোনো প্রেসিডেন্ট উত্তর কোরিয়ায় পা রাখলেন। এর আগে গত এপ্রিল ও মে মাসে দুই নেতার বৈঠক হয়। তবে বৈঠক দুটি হয় দুই কোরিয়ার মধ্যকার বেসামরিকায়ন অঞ্চলে।
এবার তিন দিনের সফরে মুনের প্রতিনিধিদলটি বেশ বড়। তবে প্রতিনিধিদলের বেশির ভাগই দেশটির শীর্ষ ব্যবসায়ী। এদের মধ্যে আছেন স্যামসাংয়ের প্রধান জে ওয়াই লি’ও।
দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা জানান, ক্ষমতায় আসার পর গতকালই প্রথমবারের মতো কোনো অতিথিকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে যান উন। বিমান থেকে নামামাত্রই মুনের সঙ্গে আলিঙ্গন করেন তিনি। এ ছাড়া ফুল ছিটিয়ে, ব্যান্ড বাজিয়ে স্বাগত জানানো হয় মুনকে। এ সময় দুই নেতার স্ত্রীদের পাশাপাশি উভয় দেশের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে দুই নেতা ছাদখোলা গাড়িতে করে পিয়ংইয়ংয়ের রাস্তায় ঘুরে বেড়ান। এ সময় তাঁদের করতালি দিয়ে অভ্যর্থনা জানায় রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা হাজার হাজার মানুষ।
পিয়ংইয়ংয়ের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে এক টুইটার বার্তায় মুন লেখেন, ‘শেষমেশ আমি যেটা অর্জন করতে চাই, সেটা হলো শান্তি। আমি এমন কোনো পরিবর্তন চাই না, যেটা ক্ষণস্থায়ী। আমি চাই স্থায়ী পরিবর্তন।’ এর আগের দিন মন্ত্রিসভার বৈঠকে মুন বলেন, ‘এবার উনের সঙ্গে বৈঠকে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করব। বিস্তারিত আলোচনা করব উত্তর কোরিয়ার দাবিদাওয়া নিয়েও।’
গত জুনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে উনের ঐতিহাসিক বৈঠকের পর ওয়াশিংটন ও পিয়ংইয়ংয়ের মধ্যকার আলোচনায় যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, তার মূলে রয়েছে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের ইস্যুটি। ওয়াশিংটনের দাবি, পিয়ংইয়ংকে আগে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের নিশ্চয়তা দিতে হবে। আর উত্তর কোরিয়া চায়, দুই কোরিয়ার যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক ইতি ঘোষণা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মুনের সঙ্গে এবারের বৈঠকে অবশ্য উনের আগ্রহ থাকবে দুই কোরিয়ার বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়ানোর দিকে। বিশেষ করে দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগকারীদের প্রলুব্ধ করার চেষ্টা থাকবে তাঁর। বিশ্লেষকরা আরো বলছেন, এবারের বৈঠকে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ ইস্যুতে অগ্রগতি কিংবা কোরিয়া যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক ইতি ঘোষণা করার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। কারণ দুটি ইস্যুতেই যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের ‘সম্মতির’ বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক রাজনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ইউরোশিয়া গ্রুপ’ বলছে, ‘বৈঠক নিয়ে গণমাধ্যমে হয়তো চমকপ্রদ কিছু শিরোনাম দেখা যাবে, তবে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের ইস্যুতে অগ্রগতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। উন মূলত দুই কোরিয়ার সম্পর্ক, বিশেষ করে বাণিজ্যিক সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার দিকেই বেশি মনোযোগ দেবেন।’ সূত্র : সিএনএন, এএফপি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন