: মালয়েশিয়ার পোর্ট ডিকসনের আসন্ন উপ-নির্বাচনে জয়লাভের মাধ্যমে আনোয়ার ইব্রাহীম দেশটির ‘নেলসন ম্যান্ডেলা’ হতে যাচ্ছেন বলে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের অভিমত।
তবে কারো কারো মতে, পোর্ট ডিকসনের উপ-নির্বাচন নয় বরং আনোয়ার ইব্রাহীম ‘মালয়েশিয়ার নেলসন মেন্ডেলা’ হতে পারবেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মাধ্যমে।
প্রসঙ্গত, পোর্ট ডিকসনের উপ-নির্বাচনে জয়লাভের মাধ্যমে আনোয়ার ইব্রাহীম দেশটির আইন সভাতে প্রবেশের সুযোগ লাভ করতে যাচ্ছেন।
‘কিছু সময় আগে বা পরে এটি ঘটতে চলেছে তবে যাই ঘটুক না কেন তা অবশ্যই কৌতূহল উদ্দীপক কিছু হবে।’ -মালয়েশিয়ার রাজনীতি বিশ্লেষক খাওভেয়ন সু এমনটি জানান।
আসন্ন পোর্ট ডিকসনের উপ-নির্বাচনকে অনেকে ‘সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। অনেকে ‘পোর্ট ডিকসন স্থানান্তরিত হচ্ছে’ বলেও ব্যাখ্যা দিয়েছেন যেটা অনেকটা এরআগে আনোয়ার ইব্রাহীমকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বানানোর উদ্যোগের মত একটি পদক্ষেপ।
এই উপনির্বাচনের মাধ্যমে পাকতান হারপান দলের অন্যতম দুই নেতা রাফিজ রামেলি এবং আজমিন আলীর মধ্যকার বিরোধের অবসান করার উদ্যোগ নেয়া হতে পারে যারা দুজনেই ডেপুটি প্রেসিডেন্ট পদ প্রার্থী।
খাওভেয়ন সু বলেন, ‘যদি বিপরীত কিছু না ঘটে তবে আনোয়ার ইব্রাহীম অবশ্যই জয় লাভ করবেন।’
তবে পোর্ট ডিকসন আনোয়ার ইব্রাহীমের জন্য পেমাটাং পায়ুহ রাজ্যের মত অতোটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। পেমাটাং পায়ুহতেই আনোয়ার ইব্রাহীম তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন। পোর্ট ডিকসেনের ভোটারদের মধ্যে ৪৪ শতাংশই স্থানীয় মালয় জনগোষ্ঠীর ভোট, ৩৩ শতাংশ ভোটার চীনা বংশোদ্ভূত এবং ২২ শতাংশ ভোটার ভারতীয় বংশোদ্ভূত।
এর পূর্বে পোর্ট ডিকসনের নির্বাচনে বালাগোপাল আবদুল্লাহ নামের একজন রাজনীতিবিদ বিজয়ী হয়েছিলেন। অনেকে মনে করেন তিনি দেশটির সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন।
‘এই উপ-নির্বাচনে জয় লাভের মাধ্যমে আনোয়ার দেশটির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রথম প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে চলেছেন। ড. মাহাথির মোহাম্মদ এতদিন ধরে বলে আসছিলেন, তার উত্তরসূরি হওয়ার জন্য আনোয়ারকে দেশটির কোনো একটি অঞ্চল থেকে আইনসভার সদস্য হতে হবে। আনোয়ার ইব্রাহীমের জন্য এই উপ-নির্বাচন ধারণার চাইতেও তাড়াতাড়ি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যদি তিনি জয় লাভ করেন তবে তিনি যে মালয়েশিয়ার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন এটা প্রায় নিশ্চিত হয়ে যাবে।’-দেশটির একজন রাজনীতি বিশ্লেষক এমনটি জানান।
আনোয়ার পাকতান হারফানের মধু-চন্দ্রিমার সময়ে দলটির নেতৃত্ব দিতে চান। ‘এই উপ-নির্বাচনে জয় লাভের জন্য তার উৎসাহ প্রয়োজন কারণ তিনি এই প্রথম তার স্থানীয় রাজনৈতিক কেন্দ্রের বাহিরে নির্বাচন করছেন।’
আনোয়ার ইব্রাহীম খাওভেয়ন সুকে বলেছেন, অবস্থার পরিবর্তনের জন্য তাকে পুনরায় আইন সভাতে ফিরে যাওয়া উচিত।
মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে খুব কমই গোপনীয় কিছু রয়েছে আর তার মধ্যে অন্যতম আসন্ন পোর্ট ডিকসনের উপ-নির্বাচন।
পাকতান হারফানের আরেক রাজনৈতিক আজমিন আলী যিনি ড. আফিফ বাহা উদ্দিনের সাথে মিত্রতা করেছেন, তারা উভয়ে মিলে মালয়েশিয়ার আরেক রাজনৈতিক দল Angkatan Belia Islam Malaysia (ABIM) এর নেতা মুদা কেইয়াডিলানকে টেক্কা দিতে চান। আজমিন এক টুইট বার্তায় বলেছেন, ‘দলের নির্বাচনের পরেই আসন্ন উপ-নির্বাচনের উপযুক্ত সময়। একটার পর আরেকটা এবং আমরা সবাই সু সংঘটিত ভাবে আর ধৈর্যশীল হয়ে অপেক্ষা করবো।’
তবে ওই টুইট বার্তার পরে আজমিন আলী আর কোনো বিবৃতি দেননি।
বর্তমানে মালয়েশিয়ার এই অর্থমন্ত্রী ভিয়েতনামের হ্যানয়তে World Economic Forum এর সভাতে যোগদান করার জন্য ভিয়েতনামে অবস্থানরত আছেন।
তবে আজমিন আলীর বড় ছেলে আমির এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, উপ-নির্বাচন করাটা একধরনের সময়ের অপচয় এবং আনোয়ার ইব্রাহীমের উচিত তরুণদের কে সুযোগ করে দেয়া।
দিগন্ত রেখায় সমস্যা দেখা যাচ্ছে
আজমিন আলী পরিষ্কার ভাবেই সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে দূরে রয়েছেন। এর মাধ্যমে এই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, তিনি আনোয়ারকে বিশ্বাস করেননা আবার অবিশ্বাস ও করেন না।
পাকতান হারফানের মধ্যে আনোয়ার ইব্রাহীমের জন্য যেসব ব্যক্তিত্ব গুরুত্বপূর্ণ তারা হচ্ছেন তার ঘনিষ্ঠ রাফিজি যিনি দলের সেক্রেটারির দায়িত্বে রয়েছেন এবং অন্যজন হচ্ছেন সাইফুদ্দিন নাসুতিওন।
পোর্ট ডিকসনের উপ-নির্বাচন ভোটারদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ কেননা এটি সাধারণ কোন নির্বাচন নয় বরং এর মাধ্যমে মালয়েশিয়ার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হবেন তা নির্ধারণ হয়ে যাবে। আনোয়ার ইব্রাহীম যদি উপ-নির্বাচনে ৫০ শতাংশের কম ভোট পান তবে এটি তার জন্য খুব ভালো ফলাফল বয়ে আসবে না।
পোর্ট ডিকসনের উপ-নির্বাচনের ফলাফল কি হবে তা সবারই জানা এবং আনোয়ার ইব্রাহীম ফলাফল সম্পর্কে খুবই আশাবাদী।
অধিকন্তু দেশটির সকলেই এখন ড. মাহাথির এবং আজমিন আলীর দিকে তাকিয়ে রয়েছেন তারা আনোয়ারের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন কিনা এটা দেখার জন্য। এর মাধ্যমে পোর্ট ডিকসন পর্যটকদের নিকটে ও জনপ্রিয় হতে যাচ্ছে। কারণ এটি হবে সেই শহর যেখান থেকে মালয়েশিয়ার ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী তার যাত্রা শুরু করবেন।
সূত্রঃ দ্যা স্টার নিউজ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন