মালদ্বীপ সেখানে মোতায়েন করা সামরিক হেলিকপ্টার ও সেনাদের ফিরিয়ে নিতে ভারতকে অনুরোধ করেছে। এ আচরণের মধ্য দিয়ে ভারতীয় প্রভাব বলয় থেকে বেরিয়ে আসার জন্য মালদ্বীপের প্রচেষ্টাটিই ফুটে উঠেছে। চীনের রাষ্ট্রীয় মিডিয়ায় এ মন্তব্য করা হয়েছে।
গ্লোবাল টাইমসে এক মন্তব্য প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় কূটনীতিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের এটা ভাবা ভুল যে মালদ্বীপ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটা চীনের প্রভাবের কারণে নিয়েছে। চীন কোন দেশের অভ্যন্তরীণ নীতিতে হস্তক্ষেপ করে না।
এতে বলা হয়েছে, এই সিদ্ধান্ত কোয়াডভুক্ত দেশগুলোর কাছেও একটা বার্তা দিয়েছে। কোয়াডের মধ্যে রয়েছে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান। কোয়াড ভারত মহাসাগারীয় অঞ্চলে চীনের প্রভাবকে থামিয়ে দিতে চায়। এই ব্লকটি পুনরুজ্জীবিত হওয়ায় বেইজিংকে কিছুটা নাড়া দিয়েছে।
গত সপ্তাহে, মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূত মিডিয়াকে বলেন যে, তার দেশ ভারতকে তাদের সামরিক হেলিকপ্টার এবং সেনাদের ফিরিয়ে নিতে বলেছে। এই হেলিকপ্টারগুলোর ব্যপারে চুক্তির মেয়াদ জুনে শেষ হয়েছে।
মালদ্বীপকে তাদের প্রভাব বলয়ের অংশ হিসেবে বিবেচনা করে এসেছে ভারত। ভারত মহাসাগরে ব্যাস্ততম বাণিজ্যিক জলসীমার কাছেই এই দ্বীপপুঞ্জের অবস্থান।
তবে, আব্দুল্লা ইয়ামিন সরকারের সময় ভারতের সাথে মালদ্বীপের সম্পর্কে টানাপড়েন তৈরি হয়। ইয়ামিনকে চীনপন্থী হিসেবে বিবেচনা করা হয়, ভারতের জন্য যেটা মনোবেদনার কারণ।
পত্রিকাটিতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে নয়াদিল্লী দীর্ঘদিন তাদের ঘরের পেছনের উঠান এবং নিজের প্রভাবাধীন অঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করে এসেছে। মালের উপরও তারা নিজেদের কর্তৃত্ব বজায় রাখার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে এসেছে এবং সেটাকে অন্য দেশগুলোর প্রভাব থেকে বাইরে রাখার চেষ্টা করেছে।
“স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে, এই দ্বীপ রাষ্ট্রটি নিজেদের অতিরিক্ত ভারতীয় প্রভাব থেকে বের করে আনার চেষ্টা করেছে এবং অন্যান্য বড় শক্তিগুলোর সাথে সম্পর্ক বাড়ানোর চেষ্টা করেছে”।
প্রতিবেদনের মতে, “হেলিকপ্টার ও সেনাদের ফিরিয়ে নেয়ার অনুরোধও তাদের সে আকাঙ্ক্ষার বহি:প্রকাশ মাত্র। তাদের এই পদক্ষেপ ইন্দো-প্রশান্ত অঞ্চলের অন্যান্য শক্তিগুলোর উদ্দেশ্যেও একটা বার্তা দিয়েছে”।
২০১১ সালে মালদ্বীপে দূতাবাস চালু করে চীন। সেখানে তারা বড় ধরনের অবকাঠামো প্রকল্পের কাজ করছে। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এগুলোর যথেষ্ট কৌশলগত গুরুত্ব রয়েছে।
গ্লোবাল টাইমস লিখেছে, “মালদ্বীপ কোন বিশেষ দেশের প্রভাবাধীনে থাকতে চায় না বা বড় শক্তিগুলোর মধ্যে কারো পক্ষ নিতে চায় না। দক্ষিণ এশিয়া বা দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অন্য কোন দেশও এটা চায় না। শীতল যুদ্ধে যে ধরনের প্রভাব কাজ করেছিল, সেই ধরনের প্রভাব বলয় তৈরির বিরোধীতা করে চীন”।
দক্ষিণ চীন সাগরে নিজেদের অবস্থান দাবির পাশাপাশি বিভিন্ন জলসীমায় অবকাঠামো নির্মাণের কারণে চীন এখন ভারত মহাসাগরে অনেক বেশি জাহাজ পরিচালনা করছে, যেটা নয়াদিল্লীকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
নিবন্ধে বলা হয়েছে, “ইন্দো প্রশান্ত অঞ্চলে যে কোন ধরনের প্রভাব বজায় রাখার প্রচেষ্টা, যেমন ভারত কর্তৃক মালদ্বীপে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা বা যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্রশান্ত কৌশল – এগুলো ব্যর্থ হতে বাধ্য। কারণ এ অঞ্চলের দেশগুলোর যে চাহিদা বা স্বার্থ রয়েছে, তার বিরুদ্ধে চলছে এই প্রচেষ্টাগুলো”।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন