সব সংশয়ের অবসান ঘটিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রথমবারের মতো বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন আজ। ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কিতে অনুষ্ঠেয় এই বৈঠক নিয়ে আগ্রহ ও কৌতুহল রয়েছে গোটা বিশ্বের। কিন্তু কেন এত আগ্রহ এই বৈঠককে ঘিরে? এর উত্তর পেতে হলে সাম্প্রতিক বিশ্ব রাজনীতির ঘটনাবলির সঙ্গে দুই দেশের সম্পর্কের ইতিহাসের দিকেও একটু ফিরে তাকাতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সম্পর্ক
১৯৪৫ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত স্নায়ুযুদ্ধকালীন সময়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে বৈরিতা তো ছিলোই, এমনকি সোভিয়েত ভেঙ্গে যাবার পরেও তাদের মধ্যকার সম্পর্কে উষ্ণতা দেখা যায়নি কখনো।
সোভিয়েত পরবর্তী যুগে রাশিয়ার ক্ষমতার পরিধি অনেকটাই কমে যায়। তবে বর্তমানে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাঁর দেশকে আবারও মহাশক্তিধর হিসেবে প্রমাণ করতে চান বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা। এ নিয়ে কখনো কখনো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থানে যেতেও দেখা গেছে দেশটিকে।
২০১৪ সালে ইউক্রেন থেকে ক্রিমিয়াকে আলাদা করে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করার পর রুশ-মার্কিন সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটে। তখন কয়েকটি মিত্র দেশসহ যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করে। বিশ্বরাজনীতির আরও কয়েকটি বিষয় নিয়ে দেশ দুটির মধ্যে দ্বৌরথ চলছিলোই। তবে ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পুতিনের হস্তক্ষেপের অভিযোগ সেই সম্পর্ক আরও খারাপ করে তুলেছে।
ট্রাম্প-পুতিন: শত্রু নাকি বন্ধু?
যুক্তরাষ্ট্রের ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগের পর বিশ্বরাজনীতির এই দুই আলোচিত ও সমালোচিত নেতার সম্পর্কের বিষয়টি গোটা বিশ্বের নজরদারির মধ্যে রয়েছে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে ওই হস্তক্ষেপের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। তবে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও মনে করে নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ের পেছনে পুতিন কলকাঠি নেড়েছিল।
সন্দেহ আরও দানা বাঁধে, যখন প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রচলিত রিপাবলিকান নীতির অনেকটা বিপরীতে গিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের আকাঙ্ক্ষার কথা জানান ট্রাম্প। এছাড়া কিছুদিন আগে শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট, জি সেভেন গ্রুপে রাশিয়াকে পুনরায় অন্তর্ভুক্তির পক্ষে সমর্থন দেন তিনি। যার ফলে কয়েকটি মিত্র দেশের সমালোচনার মুখেও পড়তে হয় ট্রাম্পকে।
একে অপরের সম্পর্কে মন্তব্য কী?
অনেকে বলেন, নিজেকে ছাড়া খুব কম মানুষেরই প্রশংসা করে থাকেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মজার ব্যাপার হলো, সেই গুটিকয়েক মানুষের মধ্যে পুতিন একজন। ২০১৬ সালে ট্রাম্প বলেন, ‘পুতিন খুব ভালো নেতা।`
চলতি বছরের মার্চে বিতর্কিত নির্বাচনে পুতিনের জয়ে অভিনন্দনও জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। যদিও তার উপদেষ্টারা তা না করার পরামর্শ দিয়েছিলেন তাকে।
অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে ভ্লাদিমির পুতিনের মন্তব্য হলো, ‘ট্রাম্প খুবই উজ্জ্বল একজন ব্যক্তিত্ব। একই সঙ্গে তিনি বুদ্ধিমান এবং বহুমাত্রিকও বটে।’
আলোচনার বিষয়বস্তু
কিছুদিন আগে ২০১৬ সালের যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনের সময় হ্যাকিংয়ের দায়ে ১২ রুশকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় ট্রাম্প এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন। এছাড়া পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ, রাশিয়ার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, ইউক্রেন এবং সিরিয়ার যুদ্ধসহ বিভিন্ন বিষয়ে দুই নেতার মধ্যে আলোচনা হতে পারে। যদিও ট্রাম্প বলেছেন, এই বৈঠকের কোনো আনুষ্ঠানিক এজেন্ডা নেই।
মিত্ররা উদ্বিগ্ন?
দুই শত্রু মিলিত হলে তাদের মিত্ররা উদ্বিগ্ন হওয়াটাই স্বাভাবিক। এই বৈঠককে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার মিত্রদেশগুলোর মনোভাব নিয়েও বিশ্বের কৌতুহল রয়েছে। ইউরোপীয় মিত্ররা বলছেন, হেলসিংকি বৈঠক থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প আসলে কি অর্জন করতে চাইছেন তা তাদের জানানো হয়নি।
সিরিয়া, ইউক্রেন, ক্রিমিয়াসহ অনেক জটিল বিষয়ে পরস্পর বিরোধী অবস্থানের জন্য তো বটেই, বিশ্ব রাজনীতিতে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবের কারণেও বৈঠকটির আকর্ষণ রয়েছে বিশ্বজুড়ে। দুই নেতার পারস্পারিক আলোচনার পরে দুই দেশের সম্পর্ক কোথায় পৌঁছাবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
বাংলা ইনসাইডার
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন