ভারতে হোয়াটসঅ্যাপ গুজবে দাঙ্গা ও মৃত্যু কমছেই না। একের পর এক ঘটনা ঘটে চলেছে এই গুজবের ফলে। আর এবার আবারও ছেলেধরা গুজব।
ভারতের কর্নাটকের বিদারে ১৪ জুলাই, শনিবার হোয়াটসঅ্যাপে ছেলেধরা গুজব ছড়ানোয় গণপিটুনির শিকার হয়ে মারা গেলেন গুগলের এক সফটওয়্যার প্রকৌশলী।
এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও চারজন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে।
বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে বেরিয়ে রাস্তার ধারে গাড়ি দাঁড় করিয়ে কয়েকজন শিশুকে চকোলেট বিলি করছিলেন এক বিদেশি। কাতারের নাগরিক মোহাম্মদ সালাম নামে ওই বিদেশি আরও চার বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে বেরিয়েছিলেন।
পুলিশ জানিয়েছে, একটি গাড়িতে কাতারের মহম্মদ সালাম, হায়দরাবাদের বাসিন্দা মোহাম্মদ আজমসহ পাঁচ বন্ধু লং ড্রাইভে গিয়েছিলেন। এদের মধ্যে মোহাম্মদ আজমই গণপিটুনির শিকার হওয়ার সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তিনি গুগলে কাজ করতেন। কর্নাটকের বিদারে পৌঁছানোর পর তারা রাস্তার পাশে গাড়িটা দাঁড় করান। তারপর ছোট ছেলেমেয়েদের চকলেট বিলি করতে শুরু করেন।
ওই এলাকায় আগে থেকেই ছেলেধরা গুজবের রোষানল চলছিল। তার ওপর বহিরাগতকে এভাবে চকলেট বিলি করতে দেখে অনেকেই ঘাবড়ে যান। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপেও অনেকেই এই বার্তা পৌঁছে দেন।
কিছুক্ষণের মধ্যেই আশপাশ থেকে প্রচুর লোক জড়ো হতে শুরু করেন সেখানে। সেই ভিড় থেকে তাদের হুমকি দিতে থাকে। প্রথমে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা করলেও পরে প্রাণভয়ে গাড়ি নিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন তারা। কিন্তু তাতেও রক্ষা পাননি।
পুলিশ জানিয়েছে, গ্রামবাসীরাও মোটরবাইকের পিছু ধাওয়া করেন। পরে গাড়িটি একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা মেরে পাশে পড়ে যায়। এরপর তাদের গাড়ি থেকে টেনে বের করে বেধড়ক মারধর করা হয়। পুলিশ পৌঁছানোর আগেই মারের চোটে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওই সফটওয়্যার প্রকৌশলীর। বাকিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় মোট ৩২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন নারীও রয়েছেন।
এর আগে ত্রিপুরায় হোয়াটসঅ্যাপে শিশু অপহরণের গুজব ছড়িয়ে পড়ায় সে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় উত্তেজনা ছড়ায়। বেশ কয়েকটি গণপিটুনির ঘটনা ঘটে। তারপর সেই গুজব দেশের অন্যান্য প্রান্তেও ছড়িয়ে পড়ে।
গণপিটুনির জেরে অন্তত তিনজনের মৃত্যু হয়। মহারাষ্ট্রের ধুলেতে ভিক্ষা করতে এসে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হন পাঁচজন। একটি ঘরে আটকে রেখে বেধড়ক মারধর করা হয় তাদের। পাঁচজনেরই মৃত্যু হয়।
এরপর ভারত সরকার ভুয়া খবর ছড়ানোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়। পাশাপাশি হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষও নানা পদক্ষেপ নেয়। এমনকি প্রতিষ্ঠানটি ভারতের মূলধারার সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেয় এই ভুয়া খবর ছড়ানো বন্ধ করতে। কিন্তু তা সত্ত্বেও অবস্থার যে খুব পরিবর্তন হয়নি, তা আবার প্রমাণ হলো।
সূত্র: এনডিটিভি
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন